ম্যাগাজিন

ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়

Advertisement
Advertisement

ক্ষুধার জ্বালায় অনাহারী হয়ে ঘুরে বেড়াই দ্বারে দ্বারে আর রাস্তার মোড়ে ডাস্টবিনে যদি একটু খাবার জোটে এই প্রত্যাশা হৃদয়ের গহীনে

Advertisement
Advertisement

সন্তান একটি খুব আদরের জিনিস। বিবাহের পর যখন দুজনের মধ্যে একজন বা দুজন আসে, তখন মনে হয় জীবনটা সার্থক। কোলে পিঠে করে যত্ন করে বড় করে তোলা। তার খিলখিল হাসিতে আনন্দে বুক ভরে ওঠে, অঝোরে কান্নায় বুকের ভেতর মোচড় দেয়। কখনো সারারাত জেগে ঘুম পাড়ানো, কখনো আবার হাতটা ধরে প্রথম অ আ ক খ শেখানো।

Advertisement

কিন্তু এইসবর চিত্র টাই মধ্যবিত্ত পরিবার, ও উচ্চবিত্ত পরিবারের। কিন্তু রাস্তাঘাটে যে শিশুরা জন্মায়, তাদের জীবনটা কি এইভাবে শুরু হয়? না বোধহয়। কি করে এরকম ভাবে শুরু হবে তার যে বাবার ই কোন ঠিক থাকে না। রাত্রে অন্ধকারে তার মা হয়তো কোনদিন কোন এক রাতে লালসার শিকার হয়েছিল। তার ফলস্বরূপ এই শিশুটি জন্মালো। সে কি কখনো সমাজের চোখে ভালোবাসা পেতে পারে? অজানা পিতা তাকে জন্ম দিতে পারে। কিন্তু সমাজের কাছে পরিচয় দিতে পারেনা। শিশুটি হয়ে পড়ে অনাথ। ভিক্ষের দান পেয়ে সে একটু একটু করে বড় হয়। প্রথম জীবনের সে হয়তো পায় মাতৃদুগ্ধ। শীর্ণকায় মাতৃস্তন থেকে দুধ পড়ে না। তবু বাচ্চাটি টেনে টেনে ওটি পান করার চেষ্টা করে। ডাস্টবিন জঞ্জাল খাবার থেকে খুঁটে খায়। রাস্তা দিয়ে হেটে যাওয়া বুট পড়া সাহেব ও মেম সাহেবদের বুটের লাথি ও খায়। তবু তারা বড় হয়, তারা মরে না। জীবন যুদ্ধে তারা একটা একটা করে দিন অতিবাহিত করে।

Advertisement
Advertisement

ট্রাফিকে থামানো গাড়ির সামনে এসে বলে ‘বাবু টাকা দিবি? ফুল নিবি?’বাবু কিন্তু ফুল নেয়না, কাঁচ টাও নামায় না। কিংবা সেই কাঁচের ভেতর থেকে এই করুণ মুখ গুলোর দিকে তাকিয়েও দেখে না। বাবু ফুল কেনে ফুলের মার্কেট থেকে। গাড়ি চলে যায় কিন্তু এই শিশুগুলি পড়ে থাকে। শৈশবের বেড়াজাল থেকে বেরিয়ে এরা পৌঁছে যায় বয়সন্ধির মুহূর্তে । পরিবর্তন হয় শরীর। পরিপূর্ণ হয় স্তন, নিতম্ব। যত বড় হয় ততই তাদের ঘিরে ফেলে ভয়। তাদের মায়েদের মতো তারা ভাবে তারাও লালসার শিকার হবে কোনদিন। কেউবা পেটের দায়ে স্বেচ্ছায় যৌন লালসার শিকার হতে চায়। আর কচি কচি ছেলেগুলো যখন বড় হয় টাকার দায় পেটের দায় তারা শুরু করে নানান রকম বেআইনি ব্যবসা, চুরি করা।

আমরা নিশ্চয়ই এদের দেখে দূরে চলে যাই, এদের ময়লা জামা কাপড় নোংরা মাথার চুল দেখে ঘেন্না পাই। কিন্তু বিশ্বাস করুন এদেরকে দেখে ঘেন্না করবেন না। কারণ এদের যে এই অবস্থা সেটার জন্য কিন্তু এরা নিজেরা দায়ী নয়। পেটের দায়ে এরা কাজ করতে থাকে ইটভাটায়, চায়ের দোকানে। মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত বাড়ির ছেলে মেয়েরা যখন পেন পেন্সিল নিয়ে লিখতে থাকে। তখন এদের এই কোমল হাত কর্কশ হয়ে যায় ইটের খোঁচায়।

এখন অনেক এনজিও, স্বেচ্ছাসেবক সংস্থা এবং সরকার থেকেও এই পথ শিশুদের স্বাভাবিক জীবন দানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কখনো কখনো তাদেরকে বই-খাতা-কলম ব্যাগ ইত্যাদি ফ্রীতে দেওয়া হয় এবং ফ্রিতে পড়াশোনার ব্যবস্থা করা হয়। সরকারি স্কুলগুলোতে এখন লেখাপড়া এবং মিড ডে মিলের সুবাদে তারা ভরপেট দুবেলা খেতে পায় । কিন্তু মূল জায়গায় অসুবিধা হলো এরা পড়াশোনা করতে চায় না কারণ ছোটবেলা থেকেই এরা যে পরিবেশে বড় হয় এদের মধ্যে শিক্ষা গ্রহণ করার ইচ্ছা তাই আস্তে আস্তে নষ্ট হয়ে যায়। তাই এখন অনেক কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে যাতে পথশিশুরাও পড়াশোনা করে এবং তাদের মা-বাবাদের ও বোঝানো হচ্ছে তারা যেন তাদের সন্তানকে স্কুলে পাঠায়, তারা পড়াশোনা করলে তাদের এই দৈনদশা ঘুচবে। সমাজের মধ্যবিত্ত উচ্চবিত্ত শ্রেণীর সন্তানদের সঙ্গে যদি একটি পথশিশু শিক্ষা পায় তাহলে সমাজের উন্নতি হবে, তাদের খিলখিল হাসির শব্দ ভেসে উঠবে সমাজের আকাশ বাতাস পরিবেশ এ।

“চাঁদের হাসির বাঁধ ভেঙেছে
উছলে পড়ে আলো”

Written by – শ্রেয়া চ্যাটার্জি

Advertisement

Related Articles

Back to top button