অফবিট

আপনি কি প্রকৃতি প্রেমিক? তাহলে ১-২ দিনের ছুটি নিয়ে ঘুরে আসুন হুগলির কয়েকটি স্থানে

Advertisement
Advertisement

আপনার কি বাড়িতে থাকতে একদম  ইচ্ছা করছেনা। আর বাইরে বেশ জাকিয়ে ঠান্ডাও পড়েছে, সামনে বড় দিন কয়েকটা দিন ছুটি।  কেন এত ভাবছেন? একদিনের জন্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন। আমাদের আজ গন্তব্যস্থল  হুগলী জেলার কয়েকটি জায়গায়। ষোড়শ শতাব্দী থেকেই এখানে কুঠি গড়ে তুলেছিল ইউরোপীয় ৮ টি দেশ। বাঙালির প্রিয় ছানার মিষ্টি নিয়ে এসেছিলো পর্তুগীজ রা। মুদ্রণ শিল্প ও তাদেরই অবদান। থিয়েটার দিয়েছে ফরাসিরা  চটকল দিয়েছে ইংরেজরা।

Advertisement
Advertisement

ওলন্দাজদের অবদান গৃহ সংলগ্ন ছোট বাগান শিল্প। এই সব কিছুর সাথে হুগলী জেলার নাম ওতপ্রোত ভাবে জড়িত। এর উত্তরে বাঁকুড়া, বর্ধমান, পূর্বে নদীয়া, উত্তর ২৪ পরগনা, দক্ষিণে হাওড়া পশ্চিমে মেদিনীপুর।  হুগলি জেলা র কয়েকটি বেড়াতে যাওয়ার জায়গা, আপনার মন ভালো করার জন্য প্রস্তুত। এখানে পৌছনো যায় খুব সহজে। জি টি রোড ছাড়াও, দিল্লি রোড, ও নবনির্মিত দুর্গাপুর এক্সপ্রেস ওয়ে ধরে এখানে আসা যায়।

Advertisement

গড় মন্দারন

Advertisement
Advertisement

বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়  এঁর দুর্গেশনন্দিনী উপন্যাসে যে মান্দারন কথাটি আমরা পাই, সেটাই হুগলী র গড় মন্দারন। কামারপুকুর থেকে ৩ কিমি দূরে এটি দক্ষিন পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত।এখানে পরিকল্পিত বন সৃজন তৈরি করা হয়েছে। অতীতে সাত টি দুর্গ ছিল। এখন একটির ধ্বংসাবশেস চোখে পড়ে। তাছাড়া আছে গাজি পীর সাহেবের দরগা। পথেই পড়বে পিকক কর্নার,ডিয়ার পার্ক, লেকে বোটিং এঁর ব্যাবস্থাও আছে। পাখি প্রেমিক দের ও এখানে এলে ভালো লাগতে পারে কারন এখানকার জলাশয়ে পরিযায়ী পাখিদের মেলা বসে।

চাঁদুর শালবন 

আপনিকি খুব রোম্যান্টিক ? মাঝে মাঝে ই আপনার ওনাকে নিয়ে লং ড্রাইভ এ বেরতে ইচ্ছা করে? বিশেষ করে বর্ষা কালে? তবে আপনি যেতে ই পারেন শাল সেগুনের ছায়াএ ভরা চাঁদুর শাল বনে। তবে শীতকালে যেতেও আপনার মন্দ লাগবে না। দ্বারকেশ্বর নদীর তীরে এঁর পরিবেশ অনবদ্য। এটি আরামবাগ মহকুমার অন্তর্গত। এখানে পরিবেশের সংগে একাত্ম হওয়ার সুযোগ পাবেন।

বালি দেওয়ান গঞ্জ 

বর্তমানে ভ্রমনের জনপ্রিয়তার সাথে সাথে ভ্রমনের ধারনাও পাল্টাছছে। এখন পর্যটক দের মধ্যে অতীতের সমৃদ্ধসালী গ্রাম দেখার প্রবনতা বৃদ্ধি  পাচ্ছে। এরকম ই একটি হারিয়ে যাওয়া গ্রাম হল গোঘাট থানার অন্তর্গত রেশম শিল্পে বিখ্যাত বালি দেওয়ান গঞ্জ। পিতলের গ্লাস,ঘড়া, কলসি তৈরি র কৌশল ও এখানে এলে দেখতে পাবেন। শান্ত,নির্জন গ্রামীন পরিবেশে ঘুরে বেড়াতে খুব একাটা মন্দ লাগবেনা। তারকেশ্বর থেকে এখানে যাওয়া যায় বাসে করে।

মালিয়া

শেওড়াফুলি থেকে তারকেশ্বর লোকালে কিছুটা যাওয়া র পর চোখ এ পড়বে মালিয়া। মালিয়া হল্ট এ নেমে মেঠো পথ ধরে হেঁটে বা রিকশায় যাওয়া যায় কাশী বিশ্বনাথ সেবা সমিতির পরিচালিত উদ্যানে।এখানে আছে ফুলের বাগান, গাছের সারি, বাচ্চা দের খেলা ধুলোর উপকরণ,বিশাল এক হনুমানজির মূর্তি যাকে ট্রেন থেকে যেতে যেতে দেখা জায়।রাতে থাকার ও সুবন্দোবস্ত আছে।প্রবেশ মুল্য ফ্রি। অতএব বেশি দেরি না করে চটপট চলে যাওয়াই বাঞ্ছনীয়।

দ্য ওয়ান্ডার ল্যান্ড 

 অফিস কলিগ, পরিবারের সদস্য,সবাইকে নিয়ে শীতকালীন চড়ুইভাতির জন্য আদর্শ জায়গা দিয়াড়া ওয়ান্ডার ল্যান্ড। হাওড়া তারকেশ্বর রেলপথে দিয়াড়া স্টেশনে নেমে অথবা দিল্লী রোড ধরে গাড়ি করে এসে বৈদ্যবাটি। ১৮ বিঘা জমির উপর গড়ে উঠেছে এই পার্ক।এই পার্কে মেতে উঠতে পারেন অ্যানিম্যাল ওয়ার্ল্ড এঁর খেলাএ। এখানে বনভোজনের সুব্যাবস্থা আছে।২৫ জনের ৯০ টি দল এখানে পিকনিক করতে পারে। প্রবেশ মুল্য ১৫ টাকা।

সবুজ দ্বীপ

গঙ্গার উপর গজিয়ে ওঠা চর হল সবুজ দ্বীপ।এটি অনেক টা বিস্তৃত। দীর্ঘ দিন পড়ে থাকার পরে গাছ লাগানো উদ্যোগ নেওয়া হয়। ন্যাড়া চড় এ গাছ গাছালি গজিয়ে হয়েছে সবুজ দ্বীপ।খবর ছড়িয়ে পড়ায় শীতে আসতে লাগল বনভোজনের দল। এখানে র শেড, শৌচালয়,পানীয় জল সরবরাহ করার ব্যবস্থা,যাতায়াতে নৌকা র ব্যবস্থা করা, রাতে থাকার ব্যবস্থা সব ই চুঁচুড়া র মৎস্য দপ্তর এর তদারকি তে হয়েছে। আপনি যদি পাখি প্রেমিক হন তবে এখানে পরিযায়ী পাখি দের সাথে কিছু সময় কাটাতেই পারেন। হাওড়া থেকে কাটোয়া গামী ট্রেনে উঠে সোমড়াবাজার সেটশনে নেমে  যে কোনো যানে চেপে গঙ্গার ধারে সেখান থেকে নৌকা য় সবুজ দ্বীপ।

ময়ুরমহল 

সেই কবে আলিপুর চিড়িয়াখানায় গিয়ে ময়ুর দেখেছেন? তাও পচিঁশে ডিসেম্বর এর ছুটি তে গাদাগাদি করে?তবে যাওয়া ই যেতে পারে পোলবা ব্লকের রাজহাট গ্রামের থেকে দুই কিলোমিটার দুরে এই ময়ুরমহল। শুধু ময়ুর দেখাই নয় অফিসের বন্ধু দের সাথে,পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে  শীতকালীন পিকনিক স্পট হিসেবে বাছতে ই পারেন এই ময়ুরমহল কে। চোখের সামনে খুব কাছের থেকে জাতীয় পাখির রাজকীয় বিচরণ আপনাকে অনাবিল আনন্দ দিতে পারে।

দেবানন্দপুর 

আপনি কি বই প্রেমিক?এখনও কি কাজের ফাঁকে, রান্না র মাঝে পড়তে ইচ্ছা করে শরৎ রচনাবলী? শরৎ রচনা আপনার একমাত্র কাজের ইন্সপিরেশন? তবে চলুন তাঁর জন্ম ভিটে দেবানন্দপুর।এখানে একটি গ্রন্থাগার ও মিউজিয়ম আছে। হাওড়া ব্যান্ডেল রেলপথে ব্যান্ডেল এ নেমে রিকশা য় বা টোটো এ দেবানন্দপুর।

অ্যাকোয়া মেরিনা 

আপনার স্বপ্নকে কি দীঘা,পুরীর উত্তাল সমুদ্র এর জলে র ঝাপটা আপনাকে ভিজিয়ে দেয়? আপনার স্বপ্ন এর কিছু টা পূর্ণ হতে পারে হুগলি র অ্যাকোয়ামেরিনা  এ। গ্রীষ্মকালে তাপদগ্ধ অবস্থা থেকে বাঁচতে নকল সমুদ্রের স্বাদ পেতে আসতে ই পারেন এখানে। হোটেল ও রাত্রি যাপন এর সুবিধা পাওয়া যেতে পারেন।

বনবীথি

কংক্রিটের ইট, কাঠ, এঁর জঙ্গল আপনাকে কি দমবদ্ধ করে দিচ্ছে? চোখের শান্তি খুঁজছেন? একটা জায়গায় আপনি পেলেও পেতে পারেন সেটি হল হাওড়া ব্যান্ডেল রেলপথে বৈদ্যবাটি স্টেশনে নেমে শান্ত স্নিগ্ধ পরিবেশে তৈরি বনবীথি।

বাচ্ছাদের খেলার সমস্ত উপকরণ দোলনা ,স্লিপ, ঢেঁকি এখানে রয়েছে। আপনার বাড়ির ছোট সদস্য টি এখানে গিয়ে বেশ আনন্দ পেতে পারে।শীতকালে এখানে বনভোজনের আসর বসে। সংলগ্ন জলাশয়ে বোটিঙে র ব্যবস্থা আছে। নানা গাছে এ ঘেরা এই পার্ক টি বেশ মনোরম।

শেষ কথা 

কি এখনও শনিবার রাতে প্ল্যান করছেন কি কাল কোথায়ে বেরবেন?সব ভাবনাচিন্তা ত্যাগ করে বেরিয়ে পড়ুন  বেড়ানোর আনন্দে। আপনার মনের মানুষ টির হাতে হাত ধরে। অজানার সীমারেখা কে লঙ্ঘন করতেই আপনার বেরিয়ে পড়া। হুগলীর পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে অমুল্য রতন। আপনার ইচ্ছা হলে এঁর আনাচে কানাচে ঢুঁ মেরে তুলে আনতেই পারেন অনাবিল আনন্দের রত্ন ভাণ্ডার।

Advertisement

Related Articles

Back to top button