BB Specialবিনোদনম্যাগাজিন

সঙ্গীত সম্রাজ্ঞী আশা ভোঁসলের, এক সাধারণ পরিবারের থেকে অসাধারণ হয়ে ওঠার গল্পটা ঠিক কেমন ছিল?

Advertisement
Advertisement

পিয়া তু আপতো আজা এই গানের সঙ্গে হেলেনের লাস্যময়ী নাচ, অথবা কখনো গ্রাম্য পরিবেশে ‘আমায় ভালোবেসে ডেকে দেখো না’ গানেতে প্রেমা নারায়নের অনবদ্য নাচ, অথবা বাংলার বিখ্যাত নায়িকা সুচিত্রা সেনের গলায় ‘আমি আপন করিয়া চাহিনি তবু তুমি তো আপন হয়েছে’ অথবা উৎসব সিনেমায় লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে গাওয়া ‘মান কিউ বেহেকা রে বেহকা আধি রাত কো ‘ সঙ্গীত এর দুনিয়ায় নানান ধাঁচের নানান রকম সঙ্গীতে বিচরণ করেছেন এক নক্ষত্র। তিনি হলেন আশা ভোঁসলে।

Advertisement
Advertisement

1933 সালে 8 সেপ্টেম্বর সঙ্গিল বোম্বাইতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলায় একটা সঙ্গীতের পরিবেশে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা দিনানাথ মঙ্গেশকর ছিলেন মারাঠি ভাষা সমাজের সদস্য এবং একজন অভিনেতা ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতশিল্পী। যখন আশা ভোঁসলের নয় বছর তখন তার পিতা মৃত্যুবরণ করেন। তার পরিবার পুনে থেকে কোলাপুর এবং পরে মুম্বাইতে চলে আসেন। তিনি ও তার বড় বোন লতামঙ্গেশকার তাদের পরিবারের ভরণপোষণের জন্য চলচ্চিত্রে গান গাওয়া ও অভিনয় শুরু করেন। তার গাওয়া প্রথম মারাঠি ভাষায় গান ‘মাঝা বল’ চলচ্চিত্রে ‘চল চল নববল’।

Advertisement

তার হিন্দি চলচ্চিত্রের গানে অভিষেক হয় হংসরাজ বেহলের চুনারিয়ায় ‘সাবান আয়া’গানে কন্ঠ প্রদানের মাধ্যমে। তার প্রথম একক হিন্দি চলচ্চিত্রের গান ছিল ‘রাত কি রানী’ (1949) চলচ্চিত্রের জন্য। আশার ভাই-বোন প্রত্যেকে এই গানের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। তার দিদি লতা মঙ্গেশকর 1929 সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতা ছিলেন সেবন্তী। লতা দিদির পরে 1931 সালে জন্ম নেন মিনা দিদি। তারপরে জন্ম নেন 1933 সালে আশা ভোঁসলে। তারপরে দু’বছর পরে জন্ম নেন বোন উষা এবং তার দুবছর পরে জন্ম নেন ভাই হৃদয়নাথ।

Advertisement
Advertisement

বাড়ির অমতে বিয়ে করার জন্য আশা দিদির বিরাগভাজন হয়েছিলেন সত্যি, তবে সেটা খুব একটা দোষের কিছু ছিলনা। পাত্র গণপত রাও ভোঁসলে সামাজিক তাদের প্রতিষ্ঠা পরিবারের থেকে অনেক উপরে ছিল। তিনি শিক্ষিত মানুষ সরকারি চাকরি করতেন, ইন্সপেক্টর পদে। অনেকটাই বড় তবে এমন অনেক হয় দিলিপ কুমার সায়রা বানুর পার্থক্য যেমন। তাদের সঙ্গে পরিচিত হন তারা বোম্বাই এ আসার ঠিক পরে। ব্যবসায়ী কাজকর্ম দেখাশোনা করতেন তবে গানের সুযোগ খুঁজে দেওয়া পেমেন্ট নিয়ে আসা তাদের পরিবারে। আশা ভোঁসলে দেখে তিনি প্রেমে পড়লেন। তবে তিনি কোন যেমন তেমন লোককে বিয়ে করেছেন না এটা তিনি বুঝতেন। আর তার শ্বশুরবাড়িতে খাওয়া-পরার অভাব নেই, তারা ছিল রাজবংশের মানুষ।

গণপতি হাউসে বাড়িতে থাকতেন সেটির আয়তন প্রায় 10 হাজার বর্গফুট। এর বর্তমান মূল্য প্রায় 50 কোটি টাকা দোতলা বাড়িটি একসময় চিত্রতারকা সাধনাকে ভাড়া দিয়েছিলেন। সংগীতা নামের বাড়িটি এখন তাদের পরিবারের হাতে নেই। দ্বিতীয় পক্ষের আশা বাইএর মালিক হয়েছিলেন। পরে এটি একটি অংশ হাতে পান। তিনি পরে এটি বিক্রি করে দিয়েছেন বছর দশেক আগে। যাইহোক বাপের বাড়িতে তার বিয়ের স্বীকার না করলেও আশা শ্বশুরবাড়িতে মহাসমাদরে গৃহীত হয়েছিলেন।

বিয়ের 6-7 বছরের মধ্যেই 3 সন্তানের মা হওয়ার কারণে আসার ক্যারিয়ার 1950 সালে থমকে দাঁড়িয়ে যায়। বড় ছেলের জন্ম হয় 1950 সালে নাম রাখলেন হেমন্ত। হেমন্ত মুখোপাধ্যায় নামে। দু’বছর পরে জন্ম নেয় বর্ষা। তার দুবছর পরে জন্ম নেয় ছোট ছেলে আনন্দ।

1955 সালের পর থেকে আসা গড়গড় করে এগিয়ে চলেছেন বিয়ের পর প্রথম পাঁচ বছরের দু-তিনশ সিনেমার গান রেকর্ড করেছেন আশা কম সাফল্য নয়, তাকে প্রথম সূযোগ করে দিলেন বিখ্যাত সুরকার ওঙ্কার নায়ার। আশা সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করলন। তিনি এরপর থেকে কার্যত নায়ারের এক্সক্লিউসিভ গায়িকা হয়ে গেলেন। আশার গান হিট করলো। এরপর থেকে 1972 সালে ও পির সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়া পর্যন্ত প্রায় পঞ্চাশটি ছবি দিয়ে গান গাইয়েছিলেন।

এর মধ্যেই 1958 সাল থেকে রবি শংকর শর্মা ‘রবি’ নামে এক সংগীত পরিচালকের সঙ্গে তিনি কাজ করতে শুরু করেন। তার কর্মজীবনে তিনি সব গানই আশাকে দিয়ে গাইয়ে ছিলেন। এই সময় তার অপর একজন সঙ্গীত পরিচালকের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়। তিনি হলেন মোহাম্মদ জহুর খৈয়াম। আশা খৈয়ামের সংগীত পরিচালনায় বেশ কিছু কাজ করেন। এই যুগল উমরাহ উজান ছবির গানের জন্য সবচেয়ে বেশি স্মরণীয়।

1957 থেকে 1962 সালের মধ্যে বলিউডের অন্যতম প্রখ্যাত সুরকার শচীন দেব বর্মন। এবং তার প্রিয় সঙ্গীত শিল্পী লতা মঙ্গেশকর সম্পর্ক তিক্ততার জন্য তার গানের প্রধান নারীকন্ঠের জন্য আশাকে ব্যবহার করেন। তিনি একাধিক চলচ্চিত্র এ হিট গান উপহার দেন। এরপর আশা ও রাহুল দেব বর্মনের প্রথম সাক্ষাৎ হয় যখন আসা দুই সন্তানের জননী এবং সংগীত নিয়ে কর্মজীবন শুরু লক্ষ্যে স্কুল থেকে ছিটকে পড়েন। তাদের প্রথম কাজ ছিল তিসরি মঞ্জিল। এই যুগল পরবর্তীকালে বিভিন্ন ধারা রক, ডিস্কো, গজল শাস্ত্রীয় গান রেকর্ড করেন।

পরবর্তীকালে তিনি খ্যাতিমান গায়ক ও সুরকার শচীন দেববর্মনের পুত্র ও বিখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক এবং সুরকার রাহুল দেব বর্মন কে বিবাহ করেন । তাদের সংসারে তিন সন্তান তার মধ্যে দ্বিতীয় সন্তান বর্ষা ৮ ই অক্টোবর 2012 সালে আত্মহত্যা করেন। 1977 সাল পর্যন্ত আশা ভোঁসলে সাতবার ফিল্মফেয়ার সেরা নেপথ্য গায়িকার পুরস্কার পান। 1977 সালের পর তিনি জানান যে তার নাম যেন আর ফিল্মফেয়ার পুরস্কারের জন্য গণ্য করা না হয়। 2001 সালে তিনি ফিল্মফেয়ার আজীবন সম্মান পুরস্কার পান।

Written by – শ্রেয়া চ্যাটার্জী

Advertisement

Related Articles

Back to top button