ম্যাগাজিন

কল্লোলিনী তিলোত্তমা কলকাতা

Advertisement
Advertisement

কলকাতা কলকাতাতেই আমার শহর
ঠিক তাই কলকাতা আমাদের সকলের শহর। পায়ে পায়ে জব চার্নকের বানানো কলকাতা, আজ ৩২৯ বছরে পড়ল। কলকাতা আদি নাম কলিকাতা। পুরনো ইংরেজি নাম ক্যালকাটা। এটি হল ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী ও বৃহত্তম শহর ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী। কলকাতা শহরটি হুগলি নদীর পূর্ব পাড়ে অবস্থিত, এই শহর পূর্ব ভারতের শিক্ষা অর্থনীতি ও সংস্কৃতির প্রধান কেন্দ্র। কলকাতা বন্দর ভারতের প্রাচীনতম বন্দর, তথা দেশের প্রধান নদী বন্দর।

Advertisement
Advertisement

জলবায়ু
কলকাতা শহর ভারতীয় প্রজাতন্ত্রের পূর্ব দিকে 22 ডিগ্রী 33” উত্তর অক্ষাংশ ও 88 ডিগ্রী ২০” পূর্ব দ্রাঘিমাংশে গাঙ্গেয় বদ্বীপ অঞ্চলে অবস্থিত। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে শহরের গড় উচ্চতা 1.5 মিটার থেকে  9মিটারের মধ্যে.।উত্তর-দক্ষিণে শহরের বিস্তার হুগলি নদীর পাড় বরাবর শহরের বেশিরভাগ এলাকা। বেশিরভাগ এলাকাই আদতে জলাজমি। শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এসব জলা জমি ভরাট করে বসত যোগ্য করে তোলা হয়।

Advertisement

ভৌগোলিক অবস্থান
উত্তর কলকাতা
উত্তর কলকাতা হল কলকাতার প্রাচীনতম 1926 স্থাপত্যশৈলী জীর্ণ প্রাসাদোপম বাড়ি কক্সবাজার অজস্র গলিপথ এই অংশে বৈশিষ্ট্য শ্যামবাজার, হাতি বাগান, মানিকতলা, কাঁকুড়গাছি, রাজাবাজার , শোভাবাজার, শ্যামপুকুর, কুমারটুলি,  জোঁড়াসাঁকো, চিৎপুর, বেলগাছিয়া, কাশিপুর,উত্তর কলকাতার অন্তর্গত। এছাড়া বরানগর, নোয়াপাড়া, ডানলপ, দক্ষিণেশ্বর, নাগেরবাজার, বেলঘড়িয়া, আগরপাড়া, সোদপুর, মধ্যমগ্রাম, বারাসাত, বিরাটি, খড়গপুর পর্যন্ত এলাকায় উত্তর শহরতলীর অংশ।

Advertisement
Advertisement

মধ্য কলকাতা
মধু কলকাতা হল শহরের প্রধান বাণিজ্যকেন্দ্র বিবাদীবাগ, পূর্বতন  ডালহৌসি স্কয়ার, এস্প্লানেট, চৌরঙ্গী, বড়বাজার, কলেজস্ট্রিট, শিয়ালদাহ, তালতলা জানবাজার, বউবাজারের, চাঁদনী চক, বউবাজার এসবই মধ্য কলকাতার অন্তর্ভুক্ত। মধ্য কলকাতার ঠিক মধ্যিখানে রয়েছে ময়দান একটি বিশাল মাঠ। কলকাতার ফুসফুস এটি। এখানে বিভিন্ন ক্রীড়ানুষ্ঠান জনসভা হয়। ময়দানে দক্ষিণপ্রান্তে ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল। হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত মিলেনিয়াম পার্ক একটি বিখ্যাত উদ্যান।  ময়দানের পশ্চিমে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদর দপ্তর।

দক্ষিণ কলকাতা
1947 সালের ভারত স্বাধীন হওয়ার পরে দক্ষিণ কলকাতা বৃহত্তর অংশ বিস্তার ঘটে, বালিগঞ্জ, আলিপুর নিউ আলিপুর, ভবানীপুর, কালীঘাট, ঢাকুরিয়া, গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ, যোধপুর পার্ক, যাদবপুর,  গড়িয়া আর অন্যদিকে মেটিয়াবুরুজ, তারাতলা, বেহালা, খিদিরপুর,মাজেরহাট, বজ বজ, সরশুনা , পর্ণশ্রী। সবই মধ্য কলকাতার অন্তর্ভুক্ত।

পূর্ব কলকাতা
বিধান নগর রাজারহাট তোপশিয়া, কসবা, আনন্দপুর, মুকুন্দপুর, পিকনিক গার্ডেন, বেলেঘাটা, উল্টোডাঙ্গা, ফুলবাগান, কৈখালী, লেকটাউন, পূর্ব কলকাতার অন্তর্ভুক্ত।

বিভিন্ন ভাষাভাষী সংমিশ্রণ
বাঙালিরা কলকাতার সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী।  মাড়োয়ারি সম্প্রদায় শহরের উল্লেখযোগ্য জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। কলকাতা প্রবাসী চিনা, তেলেগু, অসমীয়া, গুজরাটি, পাঞ্জাবি।জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রধান ভাষা হল বাংলা। এ ছাড়াও ইংরেজি হিন্দি উর্দু উড়িয়া ভোজপুরি ভাষা  প্রচলন আছে।

ইতিহাস :
চলুন জেনে নিই কলকাতার ইতিহাস কি ?
কলকাতা, গোবিন্দপুর, সুতানুটি  নামে এই তিনটি গ্রাম নিয়ে কলকাতা শহর গঠিত। শতাব্দীর শেষভাগে এই গ্রামগুলোর শাসনকর্তা ছিলেন মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনস্থ বাংলা নবাবেরা। 1690 সালে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নবাব এর কাছ থেকে বাংলায় বাণিজ্য সনদ লাভ করেন, এরপর কম্পানি কলকাতা একটি দুর্গ বাণিজ্যকুঠি 1756 সালে নবাব সিরাজদৌলা কলকাতা জয় করেন। কিন্তু পরের বছরই কোম্পানি আবার শহরটি দখল করে নেয়, এর কয়েক দশকের মধ্যে কোম্পানি বাংলায় যথেষ্ট প্রতিপত্তি অর্জন করে এবং 1793 সালে স্থানীয় শাসনের অঞ্চলের পুর্ন সার্ব ভৌমত্ব কায়েম করেন।1911 সালে ভারতের মতো একটি বৃহৎ রাষ্ট্র শাসনের ভৌগোলিক অসুবিধার কথা চিন্তা করে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সিতে ক্রমবর্ধমান জাতীয়তাবাদী কার্যকলাপের পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের রাজধানী স্থানান্তরিত হয় নতুন দিল্লিতে। স্বাধীনতার পরে কলকাতা পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র হয়ে দাঁড়ায় ব্রিটিশ আমলে কলকাতা ছিল আধুনিক ভারতীয় শিক্ষা ব্যবস্থা বিজ্ঞান চর্চা এবং সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রধান কেন্দ্র।

বাংলার নবজাগরণের প্রাণকেন্দ্র কলকাতা
কলকাতায় অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব সাহিত্য সঙ্গীত নাটক-চলচ্চিত্র শিল্পকলা বিজ্ঞান অন্যান্য ক্ষেত্রে বিশেষ কৃতিত্বের অধিকারী হয়েছেন। এদের মধ্যে কয়েকজন নোবেল পুরস্কার ও আন্তর্জাতিক পুরস্কারে সম্মানিত হন। পশ্চিমবঙ্গের বাংলা চলচ্চিত্র শিল্পের প্রাণকেন্দ্র কলকাতা শহর। এখানে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি খ্যাতনামা সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে অ্যাকাডেমি অফ ফাইন আর্টস, ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়াল, এশিয়াটিক সোসাইটি, ভারতীয় সংগ্রহালয়, জাতীয় গ্রন্থাগার বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। এগ্রি হটিকালচার, সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া, জিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া, ভারতীয় উদ্ভিদ সর্বেক্ষণ, ক্যালকাটা ম্যাথমেটিক্যাল সোসাইটি, ভারতীয় বিজ্ঞান কংগ্রেস সংস্থা, জিওলজিক্যাল  সার্ভে অফ ইন্ডিয়া অফ ইন্ডিয়া প্রভৃতি।

নামকরণ কোথা থেকে হল ?
কলিকাতা নামটি নিয়ে যথেষ্ট মতান্তর আছে।

  • একটি মতে কালী ক্ষেত্র বা হিন্দু দেবী কালীর জায়গা অনুসারে জায়গাটির নাম হচ্ছে কলিকাতা
  • মতান্তরে বাংলা কিল কিলা অর্থাৎ চ্যাপ্টা এলাকা এই কথাটি থেকে কলকাতা নামকরণ হয়
  • অন্যমতে বাংলা খাল ও কাটা শব্দটির বিকৃত ফলে কলকাতা নামটি হয়
  • অপর মতি অঞ্চলটি কলিচুন ও কাটা উৎপাদনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত ছিল সেই থেকে কলিকাতা নামটি হয়।

ক্রমবিকাশ
দেখতে দেখতে জাকিয়ে উঠলো কলকাতা। সেকাল হারিয়ে একাল এল।  গঙ্গা পারাপারে সেতু তৈরি হল। লালদীঘিতে তৈরি হল সুদীর্ঘ অট্টালিকার নাম রাইটার্স বিল্ডিং।  রাস্তায় রাস্তায় জ্বলে উঠলো বাতি। বড় বড় বাজার ভরে উঠলো। রাজনীতি প্রশাসন শিক্ষা-সংস্কৃতি ব্যবসা বাণিজ্য কেন্দ্র হয়ে উঠলো কলকাতা। নানা ভাষা নানা মানুষের ভিড় করতে লাগলো কলকাতায়। তবু সেদিনের কলকাতা ছিল বাঙালির নিজস্ব শহর। বাঙালি  প্রাধান্য ছিল বেশি।

কিছু সময় থেমে থাকল না, ইতিহাসের রথের চাকা তার নিজস্ব গতিতে কলকাতার উপর দিয়ে গড়িয়ে চলল। দেশভাগ হল অধিকাংশ উদ্বাস্তুরা স্থান হল কলকাতা। একলাফে জনসংখ্যা বেড়ে গেল কয়েকগুণ। ফাঁকা জায়গাগুলি বাড়িতে, ঝুপড়িতে বস্তিতে ভরে যেতে লাগলো। যানবাহনের পরিমাণ বেড়ে চলল হুহু করে দুর্ঘটনাও ভালো পশুর মতো বাসে ট্রামে গাদাগাদি করে যেতে লাগলো যাত্রীদল, পথচারীদেরও দুর্দশার অন্ত নেই। ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে। রাস্তা সংস্কার পাতালরেল নির্মাণ ইত্যাদি নামে এখানে সেখানে খানাখন্দ কলকাতা সেতো প্রাচ্যের ভেনিস। বিত্তবানেরা নিজও নিজও বিলাসবহুল কক্ষে,  পথবাসী ফুটপাতে চাপিয়েছে রান্না।ব্ল্যাকার রা তর্জন গর্জন করছে। মধ্যবিত্তরা বাজারের থলি হাতে বাজারে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ মিছিলে বলছেন চলবে না চলবে না।

কবি বলেছেন
কলকাতার সৌন্দর্য বলতে আরকি অবশিষ্ট রইল
সেটা ভাবতে বসলেই খুব হতাশ হতে হয়

স্তুতিবাক্য শোনা যায় কলকাতা নাকি কল্লোলিনী তিলোত্তমা হবে। কিন্তু সে কেমন করে? পাতাল যৌবন এখানে-সেখানে দু-একটা আকাশচুম্বী অট্টালিকা কলকাতার গৌরবকে তুলে ধরতে  পারবে। কলকাতা চেহারা নিয়ে আমাদের আর কিছুই করার নেই। যা কিছু ছিল তা হলো প্রাণের সম্পদ আত্মার আলো। বঙ্গ সংস্কৃতির আলোকশিখা ছিল কলকাতার অহংকার।

শেষ কথা
কলকাতার যানজট কলকাতার হৈ-হুল্লোড় কলকাতার খারাপ অবস্থা সহ্য করেও আমাদের কাছে সবচেয়ে প্রিয় শহর কলকাতা। এখানকার বইপাড়া এখানকার কফি হাউসে এখানকার কলেজস্ট্রিট এখানকার ভিক্টোরিয়া এখানকার হাওড়া ব্রিজ এখানকার নন্দন এখানকার প্রেম, সবই আমাদের একান্ত আমাদের প্রাণের কাছে। কোথাও গুরুদুয়ার কোথাও মসজিদ কোথাও মন্দির কোথাও আবার চার্চ। কখনো রবীন্দ্রনাথ কখনো নজরুল কখনো বিবেকানন্দ কখনো রামকৃষ্ণ কখন আবার মাদার তেরেসা সব মিলিয়ে বৈচিত্রের মধ্যে এক অপুর্ব অভিজ্ঞতা আমাদের কলকাতায়। কত প্রেমের সাক্ষী। শুধু প্রেমে নয় শুধু জায়গায় নয় বৈচিত্র রয়েছে খাবার-দাবারে। কোথাও চাইনিজ তো কোথাও মোগলাই খানা কোথাও আবার মাছ ভাতের বাঙালিয়ানা। সবমিলিয়ে জমজমাট কল্লোলিনি কলকাতা। আপনার মন গেয়ে উঠবে ‘আমি কলকাতার রসগোল্লা’

Written By – শ্রেয়া চ্যাটার্জি

Advertisement

Related Articles

Back to top button