সাক্ষাৎকার

বিজেপি দল সভ্যতার কলঙ্ক : শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্য

Advertisement
Advertisement

দিল্লিতে সংঘর্ষের জেরে মৃতের সংখ্যা দিনে দিনে যেমন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ঠিক তেমনি করে রাজনৈতিক উত্তেজনার পারদ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। দিল্লির এই ভয়াবহ সংঘর্ষে এখন অব্দি চল্লিশ জন মারা গেছেন , তিনশো জন আহত হয়েছেন বলে সূত্রে খবর। দিল্লির এই হিংসাকে কেন্দ্র করে মূলত সারাদেশে এখন শোরগোল পড়ে গেছে।

Advertisement
Advertisement

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ভারতবার্তার প্রতিনিধি প্রীতম দাস যোগাযোগ করেছিল শিলিগুড়ির মেয়র মাননীয় অশোক ভট্টাচার্য সঙ্গে। তিনি তার ব্যক্তিগত মতামত আমাদের ভারতবার্তার প্রতিনিধিকে জানান।

Advertisement

দিল্লিতে যে উত্তপ্ত হিংসাত্মক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে সেটিকে নিয়ে আপনি কি বলতে চাইবেন ?

Advertisement
Advertisement

অশোক ভট্টাচার্য : দিল্লিতে কোন সংঘর্ষ নয় , দিল্লিতে একটা গণহত্যা চলছে একতরফাভাবে। গণহত্যা চলছে বিজেপি প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে। ওখানে মুসলিম নিধন চলছে হিন্দুত্বের নাম করে। আরএসএস ও বিজেপি এটা করছে। এদের পিছনে মদত রয়েছে প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর। এটা একটা হিংসাশ্রয়ী ঘটনা ‘ ‘গুজরাট মডেল ‘ যাকে বলা হয় , এখন দিল্লিতে এডপ্ট করা হচ্ছে। এটাকে সভ্যতার কলঙ্ক বলা যায়। বিজেপি দল সভ্যতার কলঙ্ক। এর বিরুদ্ধে দেশের সমস্ত মানুষের প্রতিবাদ করতে হবে। অবিলম্বে প্রধানমন্ত্রীকে দায়িত্ব নিতে হবে দিল্লিতে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য। মমতা ব্যানার্জি নিচে অনেক বড় বড় কথা বলেন আর এদিকে উড়িষ্যায় গিয়ে অমিত শাহের সঙ্গে বৈঠক করছেন। বসে আছেন অমিত শাহের সঙ্গে একান্ত আলোচনা চলছে। কেন তিনি এখন দিল্লির ঘটনার প্রতিবাদ করছেন না ?


তার মানে কি আপনি বলতে চাইছেন যে তৃণমূল কংগ্রেসের সাথে বিজেপির কোন একটা গোপন আঁতাত রয়েছে ?

অশোক ভট্টাচার্য : অবশ্যই। বারবার করে বলছি তৃণমূল কংগ্রেস মুখে যত কথা বলুক না কেন বিজেপির এই যে সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী মিটিং এবং এই যে অন্য ধরনের মানুষকে হত্যা করো , খতম কর , অন্য কোনো মতামত থাকবে না , অন্য কোন রং থাকবে না , অন্য কোন জাতি থাকবে না , অন্য কোন ভাষা থাকবে না। একটাই থাকবে , এটা তো হতে পারে না ! এই নীতির বিরুদ্ধে তৃণমূল কখনোই লড়াই করতে পারে না। তৃণমূল হচ্ছে সুবিধাবাদী পার্টি , গাছেরও খাব তলারও কুড়াব। এটা তো চলে না। তৃণমূল তাই বিজেপির এই সমস্ত নীতির বিরুদ্ধে কখনো লড়াই করতে পারবে না। লড়াই করতে পারে একমাত্র বামপন্থীরা , সারা ভারতবর্ষে এখন যা চলছে ও এর বিরুদ্ধে একমাত্র বামপন্থী শক্তি লড়ছে।

শাহীনবাগ বলুন বা দিল্লিতে সি এ এ বিরোধী এই যে অবস্থান তার পরিপ্রেক্ষিতেই কি এই গন্ডগোল সৃষ্টি হচ্ছে ? আপনি বললেন এটা একতরফাভাবে গণহত্যা ..

অশোক ভট্টাচার্য : একতরফা ব্যাপারটা এজন্যই এরা সি এ এ করেছে মানে এনআরসি করতে চাইছে। ভারতীয় নাগরিকদের নাগরিকত্ব অর্জন করার জন্য জন্য আবেদন করতে হবে। এই আবেদন করার সময় তাদের বলতে হবে হ্যাঁ আমি ভারতীয় না আমাকে ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়া হোক। তাহলে আমাকে বলতে হবে আমি ভারতীয় না ! এই সিদ্ধান্তটাই দেশের অনেক মানুষই মেনে নিতে পারছে না। শুধু মুসলমানরা না , যাদের মধ্যে নূন্যতম চেতনাবোধ রয়েছে তারা প্রত্যেকে কিন্তু এই ব্যাপারটিকে মেনে নিতে পারবে না। আজকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র হোক , গবেষক হোক , ইতিহাসবিদ হোক , হিন্দু হোক , মুসলমান হোক , বাঙালি হোক , বিহারী হোক প্রত্যেকে এর প্রতিবাদ করছে , এই নীতির পরিবর্তনের কথা বলছে। এইযে সংঘর্ষ টা হচ্ছে এখন , একদল হচ্ছে এন আর সির বিরুদ্ধে আরেক দল হচ্ছে শাসক দল যারা এই এনআরসির পক্ষে। এই দুটোর মধ্যে বিরোধটাকেই বিরোধী একটা সাম্প্রদায়িক চেহারা দেবার চেষ্টা করছে এবং এই সাম্প্রদায়িক চেহারা দিচ্ছে কিছু রাজনৈতিক ফায়দা তোলার জন্য।

দিল্লি পুলিসের ভূমিকা নিয়ে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল ( পুরোপুরি শেষ না হতেই )

অশোক ভট্টাচার্য : মুখ্যমন্ত্রীর কিছু করার নেই কারণ দিল্লির পুলিশ মুখ্যমন্ত্রীর অধীনে নয়। দিল্লি রাজ্য হতে পারে কিন্তু সেখানে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীনে পুলিশ। দিল্লির পুলিশদের অমিত শাহ নির্দেশ দিয়েছে দিল্লিতে দাঙ্গা হচ্ছে তোমরা এদের পাশে থাকো।

দিল্লিতে সংঘর্ষে এতজন মামুন মানুষ আহত হলেন নিহত হলেন ঘর পুড়লো , বাড়ি পুড়লো , দোকান পাট পুড়ে ছারখার হয়ে গেল , সরকারি-বেসরকারি সম্পত্তি নষ্ট হলো। এভাবে কি কোন কিছুর প্রতিকার আদৌ সম্ভব ?

অশোক ভট্টাচার্য : প্রতিবাদ করতেই হবে। এই প্রতিবাদ সাহস নিয়ে করতে হবে। প্রতিবাদের মধ্য দিয়ে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে। দেশজুড়ে প্রতিবাদ করতে হবে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে। এই প্রতিবাদ না করার মানে হচ্ছে সে মানুষ না , একটা অমানুষ হবে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর সমসাময়িক হিটলার বাহিনী যখন একের পর এক দেশ দখল করেছিল তখন তার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছিলেন। তাই প্রত্যেকটি এটা করতে হবে। প্রতিবাদ ছাড়া কোনো পথ নেই।

দিল্লিতে যেতে শান্তি পেলে তার জন্য আপনি কি বলতে চাইবেন ?

অশোক ভট্টাচার্য : প্রত্যেকটা মানুষেরই দায়িত্ব নিয়ে এগিয়ে আসা উচিত। শাসক দল , বিরোধীদল , হিন্দু , মুসলিম , শিখ , খ্রিস্টান প্রত্যেককে সাহস নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। বন্ধ হোক এই হত্যা , বন্ধ কর এই হিংসা। এই হিংসার মধ্য দিয়ে দিল্লির অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের ভীষণ ক্ষতি হবে , পরিবেশের ক্ষতি হবে। চোখে দেখা যায় না , খবরের কাগজ পড়া যায় না , চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে যায় যেভাবে যা এটা হচ্ছে। এটা কি হিটলারি রাজত্ব চলছে নাকি দেশে ?

[ সাক্ষাৎকার গ্রহণ : প্রীতম দাস ]

Advertisement

Related Articles

Back to top button