শ্রেয়া চ্যাটার্জি – ‘তারা’ হিন্দু মতে, কালীর একটি বিশেষ রূপ। ইনি দশমহাবিদ্যার দ্বিতীয় মহাবিদ্যা। কালীর মতোই তারা ভীষণা দেবী। নানা রূপে আমরা তারাকে পাই। উগ্রতারা, নীল সরস্বতী অথবা একজটা তারা, কুরুকুল্লা তারা, মহাশ্রী তারা, বশ্যতারা, বিজয়বাহিনী তারা ইত্যাদি। ‘তারা’ মায়ের পূজার প্রচলন অনেক প্রাচীনতর। কেউ কেউ মনে করেন, মা ‘তারা’ হলেন ‘দুর্গা’ বা ‘মা চন্ডী’র রূপান্তর। পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার তারাপীঠ এ এই দেবীর বিখ্যাত মন্দির তৈরি হয়েছে। তারাপীঠের ব্রহ্মশিলায় তারা মূর্তিটি দুই হাত বিশিষ্ট, বাম কোলে পুত্ররূপে শিব শায়িত।
তারা মায়ের ভক্ত এক হিন্দু তান্ত্রিক ছিলেন বামাক্ষ্যাপা। তিনি তারাপীঠে বাস করতেন। তারা মায়ের ভক্ত এই পুরুষটি মন্দিরের কাছে শ্মশানঘাটে সাধনা করতেন। শ্রীরামকৃষ্ণের সমসাময়িক এই পুরুষের জন্ম হয় ১২৪৪ বঙ্গাব্দ ১২ই ফাল্গুন বীরভূমে। তার আসল নাম বামচরণ চট্টোপাধ্যায়। পিতা ছিলেন সর্বানন্দ চট্টোপাধ্যায়। শৈশব থেকেই বামাক্ষ্যাপার দেব ভক্তি প্রবল ছিল। তিনি ছোটবেলাতেই গৃহত্যাগ করেন এবং কৈলাসপতি বাবা নামে এক সন্ন্যাসীর তো গ্রহণ করেছিলেন।
এই কৈলাস পতি বাবা থাকতেন তারাপীঠে। তাই দ্বারকা নদীর তীরে এই তারাপীঠে বামাক্ষ্যাপার যোগ ও তন্ত্র সাধনা শুরু হয়। পরে তিনি ঝাড়খন্ড রাজ্যের মালুটি গ্রামেতে যোগসাধনার জন্য গিয়েছিলেন। সেইখানেও দ্বারকার তীরে মৌলাক্ষী দেবীর মন্দিরে প্রায় ১৮ মাস তিনি কাটান। তারাপীঠে আস্তে আস্তে প্রধান পুরুষে পরিনত হন বামাক্ষ্যাপা।
তবে, মন্দিরের কোন নিয়মকানুনে তিনি মানতেন না। এমনকি নৈবেদ্য থালা থেকে তুলে খেয়েও নিতেন। কথিত আছে, নাটোরের মহারানীকে স্বপ্নে দেবী তারা বলেন, বামাক্ষ্যাপা কে যেন আগে খাওয়ানো হয়। এরপর থেকেই মন্দিরে পুজোর আগেই বামাক্ষ্যাপা কে নৈবেদ্য প্রদান করার নিয়ম চলে আসছে। স্বামী বিবেকানন্দ বামাক্ষ্যাপা কে দর্শন করতে এসেছিলেন।