ইভেন্ট

স্বাধীনতার জন্য বীর যোদ্ধাদের অবদান

Advertisement
Advertisement

স্বাধীনতার কথা
স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে চায় হে, কে বাঁচিতে চায় কপালে রক্ত তিলক এঁকে দিলেন মাস্টারমশাই। পোড় বাড়িতে রাতের অন্ধকারে হারিকেনের মৃদু আলোয় স্বদেশ মন্ত্রে দীক্ষিত হচ্ছিল কিছু আদর্শবান তরুণ-তরুণী। পেছনে ফেলে এসেছে ওদের মা বাবা কে। পরিত্যাগ করেছে আশ্রয়ের গৃহকোণ, আরামের শয্যা। মরণকে আলিঙ্গনের দুর্নিবার আগ্রহে ওরা নেমে এসেছে ঝড়ের রাতে পথে-প্রান্তরে। স্বয়নে স্বপনে ওদের বার বার দেখা গিয়েছে শৃঙ্খলা দুখিনী দেশমাতা। মাস্টারমশাই ওদের বললেন আজ হতে তুমি আর তোমার নয় দেশের জন্য তোমার মন ও প্রাণ সর্বোচ্চ আজ থেকে উৎসর্গিত। শপথ করো করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে মৃদু কণ্ঠে ধ্বনিত হল সেই মন্ত্র। সহিংস সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে কেউ রক্তাক্ত হলো, নির্বাসিত হল দ্বীপান্তরে কেউ বা ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়ে জীবনের জয়গান গেয়ে উঠল। অহিংস সংগ্রামেও এগিয়ে গেল কেউ কেউ। বর্বর রাজ শক্তি ওদের আঘাত হানলেও ওরা রইল অবিচলিত। বন্দেমাতারাম ধ্বনিতে দেশের আকাশ, মাটি মুখরিত করে গুলিবিদ্ধ হয়ে ওদের দেহ লুটিয়ে পড়লো ধুলায়। যুগ যুগান্তরে সংগ্রাম এমনি করেই আত্মহুতি হল। কবি গেয়ে ঊঠলেন
মুক্তিরও মন্দিরও সোপানও তলে কত প্রাণ হলো বলিদান লেখা আছে অশ্রু জলে

Advertisement
Advertisement

নেতাজি
এমন আদর্শে আদর্শিত হয়েছিলেন আমাদের দেশের অনেক মানুষ তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বোস। বাংলার বুকে অগ্নি অক্ষরে লেখা একটি নাম নেতাজি সুভাষ। উত্তপ্ত একটি আহবান দিল্লি চলো। আবেগকম্পিত কন্ঠে কালবৈশাখী ঝড়ের মত একটি প্রতিশ্রুতি give me blood I will give you freedom, রক্ত অনেক ঝরেছে। স্বাধীন ভারতের ঝান্ডা হয়েছে কিন্তু যে মহান স্বাধীনতার স্বপ্নে জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন তিনি যেন কোথায় কোন রহস্য লোকে হারিয়ে গেছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে মতান্তর হওয়াতে নেতাজি গঠন করলেন ফরওয়ার্ড ব্লক। তারপরে তাকে গ্রেপ্তার করা হয় তারপর তিনি নিজের ঘরে বন্দি করে ছিলেন। 17 জানুয়ারি 1941 এ গৃহ থেকে তিনি নিরুদ্দেশ হন।একদিন বার্লিন বেতার থেকে দেশবাসী সচকিত হয়ে শুনলো তাদের প্রিয় নেতার কণ্ঠস্বর ‘আমি সুভাষ বলছি’। যুদ্ধবন্দী ভারতীয় সৈনিকদের নিয়ে তখন নেতাজির নেতৃত্বে গড়ে উঠল আজাদ হিন্দ ফৌজ, তখন থেকেই তিনি নেতাজি। তিনি অমর, তিনি মৃত্যুঞ্জয়, ভারতীয় হৃদয়ে তিনি চিরকালের নেতাজি। ভারতের প্রতিটি শহরে বন্দরে নেতাজির নামে স্কুল, কলেজ, বিমান বন্দর, উদ্যান। ভারতের সর্বোচ্চ তিনি জাগ্রত চেতনার ভাস্বর।

Advertisement

ক্ষুদিরাম
“একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি
হাসি হাসি পড়বো ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী”

Advertisement
Advertisement


মোজাফফরপুরে শুরু হলো ক্ষুদিরামের বিচার। ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে নির্ভীক ক্ষুদিরাম স্বীকারোক্তি দিলেন তিনি কিংসফোর্ডকে হত্যার জন্য বোমা নিক্ষেপ করেছেন। তার দুর্ভাগ্য যে অত্যাচারী কিংসফোর্ডের মৃত্যুর বদলে নির্দোষ কেনেডি মৃত্যুর জন্য তিনি আন্তরিকভাবে দুঃখিত। রক্তপাতে তিনি কোন অপরাধ বলে মনে করেন না। যথারীতি বিচারে ক্ষুদিরামের মৃত্যুদণ্ড দণ্ডাদেশ হয়। আত্মীয়দের পীড়াপীড়িতে হাইকোর্টে আপিল করা হলো। মৃত্যুদণ্ড রহিত করার জন্য আবেদন গ্রাহ্য হল না। ফলে তৈরি হলো ফাঁসির মঞ্চ 1908 সালের 11 ই আগস্ট ক্ষুদিরামের ফাঁসি হয়ে গেল। ভারতের বিপ্লব ইতিহাসের প্রথম শহীদ ক্ষুদিরাম। 18 বছর আগে এক মঙ্গলবার সকাল ছয়টায় জন্মেছিলেন এই মৃত্যুঞ্জয় বীর।আঠারো বছর পরে আর এক মঙ্গলবার সকালে ক্ষুদিরাম হারিয়ে গেলেন। ফাঁসির দড়িতে টান দিলে জল্লাদ।ক্ষুদিরাম গড়িয়ে গেলেন মৃত্যুকূপে। কয়েকবার দড়িটা কেঁপে কেঁপে উঠল তারপর সব স্তব্ধ। কাতারে কাতারে নর-নারীর দাঁড়িয়েছিল পথের দু’ধারে শেষবারের মতো দেখার জন্য।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
“ও আমার দেশের মাটি তোমার পরে ঠেকাই মাথা”

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর দেশের জন্য লড়লেন। না অস্ত্র দিয়ে নয় কলম দিয়ে লড়লেন। দেশাত্মবোধক গান কবিতা উদ্বুদ্ধ করলেন যুবক শ্রেণীকে।
জালিয়ান ওয়ালা বাগ হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ইংরেজদের দেওয়া নাইট উপাধি ত্যাগ করলেন। যোগ্য জবাব ছুঁড়ে দিলেন ইংরেজদের দিকে। সবার হাতে রাখি পরিয়ে দিলেন হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে এবং ইংরেজদের বুঝিয়ে দিলেন আমরা ভাই ভাই। আমাদের মধ্যে কোন বিভেদ নেই।আমরা একত্রিত হলে ওরা নিঃশেষ হয়ে যাবে। তার কবিতায় উঠেছে দেশপ্রেম দেশ ভক্তির কথা “আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসসি”

তিনি সমাজের যুবকের উদ্দেশ্যে বলেন সংকোচেরও বিহ্বলতা নিজেরে অপমান।
তিনি বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন শুরু করেছিলেন 1905, 1911 তে বঙ্গভঙ্গ আইন রদ হয়েছিল।

মহাত্মা গান্ধী
নেতাজি যেমন সহিংসতায় যুদ্ধ করেছিলেন তার ঠিক বিপরীত ধর্মী ছিলেন মহাত্মা গান্ধী। তিনি চেয়েছিলেন অহিংস ধারায় যুদ্ধ করতে। তিনি অসহযোগ এবং আইন অমান্য আন্দোলনের মাধ্যমে ইংরেজদের বিরোধিতা করেছিলেন। বিদেশি দ্রব্য বর্জন এবং স্বদেশী দ্রব্য গ্রহনের অঙ্গীকার তিনি করেন। তখন যুবকরা তার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে গেয়ে উঠতেন

“মায়ের দেওয়া মোটা কাপড় মাথায় তুলে নেরে ভাই
দিন দুঃখিনী মা যে আমার এর বেশি আর সাধ্য নাই”

করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে ধ্বনিতে ধ্বনিত হয়ে তিনি এগিয়ে চলেছিলেন স্বাধীনতার পথে। সমুদ্র এর জল থেকে তৈরি করেছিলেন দেশি লবণ যাতে বিদেশ থেকে আমাদের লবণ কিনতে না হয়। কোনোভাবেই বিদেশিদের ভরসায় আমাদের না থাকতে হয়। চরকায় সুতো কেটে বস্ত্র তৈরি করে তিনি দেশীয় শিল্পকে বজায় রেখেছিলেন।

শেষ হাসি ভারতবাসী হেসেছিল, অবশেষে ইংরেজদের মেনে নিতে হয়েছিল পরাজয়। 1947 সালের 15 ই আগস্ট ভারতের মাটিতে স্বাধীনতার পতাকা ওড়ে। বন্দে মাতারাম ধ্বনিতে মুখরিত হয় আকাশ বাতাস। এবং শেষে বলতে ইচ্ছা করেভারত আমার ভারতবর্ষ, স্বদেশ আমার স্বপ্ন গো তোমাতে আমরা লহিয়া জনম ধন্য হয়েছি ধন্য গো ।

Written By – শ্রেয়া চ্যাটার্জি

Advertisement

Related Articles

Back to top button