অরূপ মাহাত: শ্রাবন মাসের পূর্ণিমা তিথিতে সমগ্র ভারতবর্ষ জুড়ে পালিত হয় রাখী বন্ধন। বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের হাত ধরে এই উৎসবের সূচনা হয়েছিল। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ভাই বোনের পবিত্র সম্পর্কের বন্ধনকে আরও দৃঢ় বিশ্বাসের বাঁধনে বেঁধে রাখতেই প্রতিবছর রাখী বন্ধন উৎসব পালিত হয়ে আসছে। তবে আজ আমরা রাখী বন্ধনের একটা অজানা দিকের বিষয়ে জানার চেষ্টা করবো।
রাখি বন্ধনের নেপথ্যের ইতিহাস: সুভদ্রা কৃষ্ণের ছোট বোন, কৃষ্ণ সুভদ্রাকে অত্যন্ত ভালবাসতেন। এদিকে আপন বোন না হয়েও দ্রৌপদী ছিলেন কৃষ্ণের অতীব স্নেহভাজন। একদিন সুভদ্রা কিছুটা অভিমানের সাথে কৃষ্ণকে প্রশ্ন করলে উত্তরে কৃষ্ণ বললেন যথা সময়ে এর কারন তুমি বুঝতে পারবে।
এর কিছুদিন পর শ্রীকৃষ্ণের হাত কেটে রক্ত পড়ছে দেখে সুভদ্রা রক্ত বন্ধের জন্য কাপড় খুঁজছিলেন। কিন্তু মনের মত পাতলা কাপড় পাচ্ছিলেন না, এর মাঝে দ্রৌপদী সেখানে এসে পৌঁছন এবং বিন্দুমাত্র দেরি না করে সাথে সাথে নিজের মুল্যবান রেশম শাড়ি ছিঁড়ে কৃষ্ণের হাতে বেঁধে দিলে রক্তপাত বন্ধ হয়। তখন শ্রীকৃষ্ণ বোন সুভদ্রাকে ডেকে বলেন- এখন বুঝতে পেরেছ কেন আমি দ্রৌপদীকে এত স্নেহ করি? সুভদ্রা বুঝতে পারল ভক্তি ও পবিত্র ভালবাসা, শ্রদ্ধা কী জিনিস! দাদা কৃষ্ণের চেয়ে মুল্যবান বস্ত্র নিজের কাছে বেশি প্রিয় এটা ভেবে সুভদ্রা দারুন লজ্জিত হলেন।
কোন বোন তার ভাইয়ের কোনোরূপ কষ্ট, অমঙ্গল সহ্য করতে পারে না। ভাইয়ের কষ্ট দূরের জন্য সে সর্বোত্তম চেষ্টা করে। অন্যদিকে ভাই ও তার বোন কে পৃথিবীতে সর্বাধিক স্নেহ করে, সারাজীবন তাকে রক্ষা করে থাকে, যেরকম শ্রীকৃষ্ণ দ্রৌপদীকে রাজসভায় চরম কলঙ্ক থেকে রক্ষা করেছিলেন। সকল ভাইবোনের উচিত এই পবিত্র দিনে মনে এরকম ভক্তিভাব ও ভালবাসা বজায় রাখা। কৃত্রিমতা, যান্ত্রিকতার এই বর্তমান যুগে ভাই বোনের মাঝে ভালবাসা ও শ্রদ্ধার বড় অভাব।