ম্যাগাজিন

বাঙালির ভুরিভোজ!

Advertisement
Advertisement

“বাঙলা আমার সরষে ইলিশ, চিংড়ি কচি লাউ”

Advertisement
Advertisement

ই বিখ্যাত গানটা শুনলেই বোঝা যায় বাঙালী কতটা খাদ্যরসিক। পঞ্চব্যঞ্জনে ভুরিভোজে বাঙালী সর্বদা এগিয়ে। পান্তা ভাত থেকে শুরু করে ইলিশ, চিংড়ি, এর পর যদি পাতে থেকে কচি পাঠার মাংস তবে তো আর কথাই নেই। খাদ্য রসিক বাঙালির ভুরিভোজের জন্য কোনো পার্বনের প্রয়োজন নেই। খাবার ব্যাপারে বাঙালীর কোনো না নেই। আমিষ-নিরামিষ, মাছ, মাংস, টক,ঝাল, মিষ্টি যে কোনো কিছু দিয়েই তারা সারতে পারে ভুরিভোজ। বাঙালি মাত্রেই খাদ্য প্রেমিক আর সেই জন্যই কোথায় কোন সেরা খাবার পাওয়া যায় তা তাদের নখদর্পনে।

Advertisement

এর পর যদি কোনো উৎসব থাকে তবে আর দেখে কে, নববর্ষ বা দুর্গাপূজা, জামাইষষ্ঠী বা বিশ্বকর্মা পূজা, উৎসবের মরসুমে মনের সুখে রসে-বসে চলে বাঙালির ভুরিভোজ। কব্জি ডুবিয়ে ভুরিভোজে বাঙালির বিশেষ নৈপুণ্য আছে, পোলাও থেকে শুরু করে ভাত,মাছ,মাংস, ভর্তা বা চচ্চড়ি, আর শেষ পাতে যদি পাওয়া যায় একটু মিষ্টি তবে ভুরিভোজে বাঙালী পায় সেরা তৃপ্তি। এককথায় খাবারের প্রতি বাঙালির একটা জন্মগত দুর্বলতা আছে আর ভুরিভোজ কথাটা আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে বাঙালির জীবনে। রকমারি মশলাদার খাবার বাঙালির খুব প্রিয়। অতীতে স্বচ্ছল বাঙালির রান্নাঘর ছিলো উৎসব মঞ্চ। বৃষ্টি হলে খিঁচুড়ি, শীতে নানা রকম সব্জি, পিঠে, পায়েস, বাঙালির ভুরিভোজের সঙ্গী।

Advertisement
Advertisement

আড্ডাবাজ বাঙালি আড্ডার মধ্যেও তাদের ভুরিভোজের কথা মাথায় রাখতেন। আড্ডার মধ্যে বাঙালির ভুরিভোজ দেখলে বোঝা যায় বাঙালী কতটা খাদ্যরসিক। চা থেকে চানাচুর, গরম সিঙ্গারা অথবা ঝালমুড়ি বা চিঁড়েভাজা সঙ্গী থাকে বাঙালির আড্ডার মজলিসে। এই ভোজনরসিক বাঙালির উদরপূর্তির জন্যই এই ভাজাপোড়া খাবার গুলোর এতো রমরম করে চলে।

সামাজিক আচার অনুষ্ঠান মানেই বাঙালির হেঁসেলে চলে নিত্য নতুন পদের আনাগোনা। ভুরিভোজে পটু বাঙালির পূজোর দিন গূলোতে চলে খিঁচুড়ি,লাবরা, পায়েস, চাটনি তেমন বিজয়াতে মাছের কালিয়া,মুরগী কষা মাংস , বিরিয়ানি,নতুন জামাকাপড়, ঠাকুর দেখার সঙ্গে পাল্লা দিলে দেখা যায় বাঙালীর ভুরিভোজের ভূমিকাই মুখ্য।

আবার নববর্ষের দিন বাঙালির পাতে থাকে ইলিশ পাতুরি, ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে পুঁইশাক চচ্চড়ি সহযোগে ভুরিভোজ। বাঙালির ভুরিভোজের কথা বলতে গেলে জামাইষষ্ঠী কে বাদ দিলে চলবে না। সন্তানদের মঙ্গল কামনায় মায়েরা মা ষষ্ঠীর ব্রত করেন আর এই মা ষষ্ঠীর কৃপায় সেদিন মেয়ে জামাই চলে পঞ্চব্যঞ্জনে ভুরিভোজ সাথে পরম স্নেহে মায়ের হাতের তালপাতার বাতাস।

ভোজনরসিক বাঙালির ভোজন নিয়ে যে দুর্বলতা আছে তা নিয়ে অনেক গল্প আছে। শোনা স্বয়ং ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর মহাশয় খুব ভোজন রসিক ছিলেন। তিনি খেতে ও খাওয়াতে দুই ই ভালোবাসতেন। তিনি নিকট আআত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধবের বাড়ির রান্না ঘর পর্যন্ত পৌঁছে যেতেন এবং পাতপুরে ভুরিভোজ করে আসতেন।

বাঙালি খাবার ব্যাপারে কোনো কম্প্রোমাইজ করতে জানে না, সুস্থ সবলভাবে জীবন ধারণের জন্য স্বল্প ও পরিমিত আহারের কথা চিকিৎসা বিজ্ঞানে যতই বলা হোক না কেনো, ভুরিভোজের ব্যাপারে বাঙালী কোনো কিছুই মানে না। চিকিৎসা বিজ্ঞানের চিকিৎসকদের মতে হৃদযন্ত্রের কঠিন অসুখের কারণ অতিরিক্ত খাদ্যাভাস
কিন্তু ভুরিভোজের সময় পেটুক বাঙালির সেদিকের কথা মাথায় রাখে না, খাবার ব্যাপারে বাঙালী মানে না কোনো আইন, কোনো নিয়ম।

বাঙালি মানেই পেটুক, সে ফুটপাতেই হোক, হোক হাইওয়ের ধারে কোনো ঝাঁ চকচকে রেঁস্তোরায়, বা রান্নাঘরের হেঁসেল, ভুরিভোজে বাঙালির জুড়ি মেলা ভার।।

Writen By – ঝুমা দাস

Advertisement

Related Articles

Back to top button