টলিউডবিনোদন

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা রীতিমত সঙ্কটজনক, দেওয়া হবে ভেন্টিলেশন সাপোর্ট

Advertisement
Advertisement

কুড়ি দিন ধরে বেলভিউ নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন রয়েছেন প্রবাদপ্রতিম অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। রবিবার রাতে বেলভিউ নার্সিংহোম সূত্রে দেওয়া মেডিক্যাল বুলেটিন অনুযায়ী, অভিনেতার শারীরিক অবস্থার যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। বর্ষীয়ান অভিনেতার মস্তিষ্ক চিকিৎসায় সাড়া দিচ্ছে না। এই মুহূর্তে মেডিক্যাল বোর্ড তাঁকে ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে দেওয়ার কথা ভাবছেন। তবে এই বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে স্নায়ু বিশেষজ্ঞ ও কিডনি বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হবে। সৌমিত্রবাবুর শরীরে পুরানো ক্যান্সার ফিরে আসার কারণে তাঁর মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে সংক্রমণ শুরু হয়েছিল। সংক্রমণ কমানোর জন্য দেওয়া অ্যান্টিবায়োটিকে ভালো সাড়া দিচ্ছিলেন সৌমিত্রবাবু। তাঁর আচ্ছন্নভাব অনেকটা কেটে গেছিল। তিনি সবাইকে চিনতে পারছিলেন। কিন্তু তাঁর বয়স 85 বছর। অত্যধিক মাত্রায় অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড তাঁর শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর হতে পারে। ফলে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী স্টেরয়েডের ডোজ কমানো হয়। স্টেরয়েডের ডোজ কমানোর সঙ্গে সঙ্গেই সৌমিত্রবাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। তাঁর আচ্ছন্নভাব ও স্নায়বিক অস্থিরতা ফিরে আসে।

Advertisement
Advertisement

গত 48 ঘন্টায় সৌমিত্রবাবুর স্নায়বিক জটিলতার কারণে তাঁর মস্তিষ্কের অবস্থার যথেষ্ট অবনতি হয়েছে। করোনা সংক্রান্ত এনসেফ্যালাইটিস তাঁর স্নায়বিক সমস্যার ক্ষেত্রে একটি বড় কারণ তৈরী করেছে। সৌমিত্রবাবুর শরীরে ইউরিয়ার পরিমাণ বেড়ে গিয়েছে। এছাড়া তাঁর শরীরের সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেলের মাত্রার অস্বাভাবিক তারতম্য ঘটছে। সৌমিত্রবাবুর সিওপিডির সমস্যা ও স্নায়বিক সমস্যার কারণে তাঁর শ্বাসকষ্ট বেড়েছে। তাঁর দেহের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাজ করলেও সব মিলিয়ে পরিস্থিতি ক্রমশ জটিল আকার ধারণ করছে। আন্তর্জাতিক ও দেশ এবং রাজ্যের বিশিষ্ট স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। তবে বেলভিউ নার্সিংহোম সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী, পরিস্থিতি ক্রমশ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। সৌমিত্রবাবুর শরীরে প্লেটলেট কমেছে। এই পরিস্থিতিতে প্লাজমাফেরেসিস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্লাজমাফেরেসিসের মাধ্যমে শরীরের প্লাজমা পরিবর্তন করে নতুন প্লাজমা দেওয়া হবে। তবে বর্ষীয়ান অভিনেতার শরীর এই চিকিৎসা কতটা নিতে পারবে, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

Advertisement

গত 6 ই অক্টোবর করোনা সংক্রমণ নিয়ে বেলভিউ নার্সিংহোমে ভর্তি হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। তাঁর জন্য 16 জন চিকিৎসকদের বিশেষ একটি টিম গঠন করা হয়। 2006 থেকে সিওপিডির পেশেন্ট তিনি। তার উপর করোনা সংক্রমণের ফলে তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাঁর শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেলের তারতম্য ঘটে। সিটি স্ক্যান করে তাঁর বুকে কিছু না পাওয়া গেলেও এমআরআই রিপোর্টে জানা যায় তাঁর মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে পুরানো ক্যান্সারের সংক্রমণ শুরু হয়ে গেছে। সৌমিত্রবাবুর মূত্রথলিতেও সংক্রমণ ধরা পড়ে। বিশেষজ্ঞচিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সৌমিত্রবাবুর শরীরে দুই বার প্লাজমা থেরাপির প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু তাঁর স্নায়বিক অস্থিরতা দেখা দেয়। তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে যান সৌমিত্রবাবু। তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়তে থাকে। সৌমিত্রবাবুকে বাইপ‍্যাপ ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হয়। কিন্তু তাতে অবস্থার বিশেষ উন্নতি না হওয়ায় তাঁকে ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনের দেওয়ার কথা ভাবা হয়। তবে তাঁর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসার পর তাঁর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা হলে তাঁর শারীরিক অবস্থার কিছুটা উন্নতি হয়। ফলে তাঁকে ইনভেসিভ ভেন্টিলেশনে দেওয়া হয়নি। তবে তিনি কথা বলতে বা মুখ দিয়ে খেতে পারছিলেন না। তাঁর শরীরও যথেষ্ট দুর্বল ছিল। ফলে তাঁর ফিজিওথেরাপি ও স্পিচ থেরাপির চেষ্টা করা হলেও তেমন লাভ হয়নি। কিন্তু তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা স্বাভাবিক ছিল এবং সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেল ক্রমশ স্বাভাবিক হয়ে এসেছিল। সৌমিত্রবাবুর অসংলগ্নতা ও অস্থিরতা কাটাতে মিউজিক থেরাপির সাহায্য নেওয়া হয়েছিল। তাঁর পছন্দের রবীন্দ্রসঙ্গীত ও তাঁর অভিনীত ফিল্মের গানও চালানো হচ্ছিল। কিন্তু স্টেরয়েডের ডোজ কমানোর ফলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। সৌমিত্রবাবুর জন্য গঠিত মেডিক্যাল টিমে নতুন করে পাঁচ জন স্নায়ু বিশেষজ্ঞ যুক্ত হয়েছেন। সৌমিত্রবাবুর এমআরআই ও সিএসএফ রিপোর্ট বিশ্লেষণ করছেন চিকিৎসকরা। অপরদিকে সৌমিত্রবাবুর পরিবারকেও কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। এদিন সৌমিত্রবাবু ভেন্টিলেশনে থাকাকালীন তাঁর কিছু ফটো সাইবার দুনিয়ায় ভাইরাল হলে তাঁর কন্যা পৌলমী সোশ্যাল পোস্ট করে অভিনেতার ব্যক্তিগত পরিসর লঙ্ঘন ও মর্যাদাহানি না করার অনুরোধ জানিয়েছেন। অপরদিকে মুম্বই থেকে অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন সৌমিত্রবাবুর শারীরিক অবস্থার খোঁজ নিয়েছেন। ‘বিগ বি’ সৌমিত্রবাবুর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বার্তা দিয়েছেন। প্রসঙ্গত, অমিতাভ নিজেও কিছুদিন আগে করোনা আক্রান্ত হয়ে মুম্বইয়ের নানাবতী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।

Advertisement
Advertisement

 

Advertisement

Related Articles

Back to top button