টলিউডবিনোদন

প্রবল লড়াই করছেন সৌমিত্র, সম্পন্ন হয়েছে প্রথম ডায়ালিসিস

Advertisement
Advertisement

বর্ষীয়ান অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থা এই মুহূর্তে যথেষ্ট সঙ্কটজনক। তাঁর প্রথম ডায়ালিসিস সম্পন্ন হলেও কিডনি সঠিক কাজ করছে না। একশো শতাংশ ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছে সৌমিত্রবাবুকে। তাঁর ব্লাড ট্রান্সফিউশন চলছে। নানাবিধ ওষুধ প্রয়োগ করা হলেও মস্তিষ্ক সাড়া দিচ্ছে না। তবে গ্লাসগো কোমা স্কেল অনুযায়ী সৌমিত্রবাবুর মস্তিষ্ক সূচক 9-10 -এর মধ্যেই রয়েছে। মস্তিষ্ক সূচক ঠিক থাকলেও তিনি এখনও অচেতন। অপরদিকে সৌমিত্রবাবুর অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও ঠিকঠাক কাজ করছে না। ফলে চিকিৎসকরা যথেষ্ট ঝুঁকি নিয়ে তাঁর শরীরে আবার স্টেরয়েড প্রয়োগ করা শুরু করেছেন।

Advertisement
Advertisement

সৌমিত্রবাবুর জন্য গঠিত মেডিক্যাল টিমের প্রধান ডঃ অরিন্দম কর জানিয়েছেন যে, সৌমিত্রবাবুর শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেলের তারতম্য ঘটছে। এছাড়া ইউরিয়া ও ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। সুতরাং তাঁর শরীরে আরো কয়েকটি ডায়ালিসিসের প্রয়োজন হতে পারে। এছাড়া সৌমিত্রবাবুর ইউরিন আউটপুট রেস্টোর করার জন্য রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি অনুযায়ী বিশেষ কিছু চিকিৎসার কথাও ভাবা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে নার্সিংহোমে চিকিৎসাধীন থাকার কারণে বর্ষীয়ান অভিনেতার শরীরে অন্যান্য কিছু সংক্রমণ দেখা দিয়েছে। তবে সৌমিত্রবাবুর স্নায়বিক সমস্যার জটিলতা চিকিৎসকদের মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। তাঁর স্নায়বিক সমস্যা সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক ও দেশ এবং রাজ্যের বিশিষ্ট স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সৌমিত্রবাবুর শরীরে প্লাজমাফেরেসিস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও তাঁর শারীরিক অবস্থার কারণে আপাতত তা স্থগিত রাখা হয়েছে। এই মুহূর্তে তাঁর শরীরে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেছে। চিকিৎসকরা সৌমিত্রবাবুর শরীরে সংক্রমণ ও ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে কোনো অভ্যন্তরীণ রক্তপাত হচ্ছে কিনা,সেই বিষয়টিও পরীক্ষা করছেন।

Advertisement

গত 6 ই অক্টোবর করোনা সংক্রমণ নিয়ে বেলভিউ নার্সিংহোমে ভর্তি হন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। 2006 সাল থেকে সিওপিডির সমস্যা ও করোনা সংক্রমণের কারণে তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। সিটি স্ক্যান করে তাঁর বুকে কিছু না পাওয়া গেলেও এমআরআই রিপোর্টে জানা যায় তাঁর মস্তিষ্ক ও ফুসফুসে পুরানো ক্যান্সারের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী সৌমিত্রবাবুর শরীরে দুই বার প্লাজমা থেরাপির প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু তাঁর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়নি। তাঁর শরীরে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম লেভেল ক্রমশ অস্বাভাবিক হতে শুরু করে। তাঁর শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমতে থাকে ও কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মাত্রা বাড়তে থাকে। তাঁর মূত্রথলিতে সংক্রমণ ধরা পড়ে। সৌমিত্রবাবুর করোনা এনসেফ্যালাইটিস দেখা দেয়। তাঁর মস্তিষ্ক সূচক 6-এ নেমে যায়। তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে যান। ফলে তাঁকে বাইপ‍্যাপ ভেন্টিলেশন সাপোর্ট দেওয়া হয়।

Advertisement
Advertisement

এদিকে তাঁর করোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। চিকিৎসকরা তাঁর শরীরে অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োগ শুরু করেন। সৌমিত্রবাবু অ্যান্টিবায়োটিকে ভালো সাড়া দিচ্ছিলেন। তাঁর আচ্ছন্নভাব অনেকটা কেটে গিয়েছিল। তিনি সবাইকে চিনতে পারছিলেন। কিন্তু তাঁর স্নায়বিক অস্থিরতা বজায় ছিল। বর্ষীয়ান অভিনেতা দুর্বল হয়ে পড়েছিলেন। তিনি বিছানায় উঠে বসতে পারছিলেন না। এমনকি সৌমিত্রবাবু কথা বলতে বা মুখ দিয়ে খেতে পারছিলেন না।  তাঁর ফিজিওথেরাপি ও স্পিচ থেরাপির চেষ্টা করা হলেও তেমন লাভ হয়নি।  তাঁকে রাইলস টিউবের মাধ্যমে খাওয়ানো হচ্ছিল। তাঁর বাইপ‍্যাপ সাপোর্ট সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। তবে তাঁর বয়সের পক্ষে স্টেরয়েড ক্ষতিকর হবার কারণে চিকিৎসকরা তাঁর শরীরে স্টেরয়েডের ডোজ কমিয়ে দেন।

কিন্তু স্টেরয়েডের ডোজ কমানোর ফলে সৌমিত্রবাবুর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। তাঁর স্নায়বিক অস্থিরতা প্রবল হয়ে ওঠে। সৌমিত্রবাবুর শরীরে অক্সিজেনের অভাব ঘটতে থাকে। তাঁর শরীরে সংক্রমণের হার বৃদ্ধি পায়। বর্ষীয়ান অভিনেতা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে যান। তাঁর দুটি কিডনি বিকল হয়ে যাওয়ার ফলে তাঁর রেনাল রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি শুরু হয়। অপরদিকে সৌমিত্রবাবুর পরিবারকেও কাউন্সেলিং করা হচ্ছে। এদিকে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় আইসিইউ-তে ভেন্টিলেশনে থাকাকালীন অনৈতিকভাবে তোলা কিছু ছবি সাইবার দুনিয়ায় ভাইরাল হয়। সৌমিত্রবাবুর পরিবার এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হন। তাঁর কন্যা পৌলমী সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে অভিনেতার ব্যক্তিগত পরিসর লঙ্ঘন ও মর্যাদাহানি না করার অনুরোধ করেন। অপরদিকে মুম্বই থেকে অভিনেতা অমিতাভ বচ্চন সৌমিত্রবাবুর দ্রুত আরোগ্য কামনা করে বার্তা দিয়েছেন।

Advertisement

Related Articles

Back to top button