অফবিট

এ যেন এক স্বপ্নের স্কুল, যেখানে মেয়েদের শিক্ষা দেওয়া হয় এক অভিনব পদ্ধতিতে

Advertisement
Advertisement

শ্রেয়া চ্যাটার্জি – বিদ্যালয়ে পড়াশোনার চাপে নতুন প্রজন্মের একেবারে দম আটকে আসার মতন অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে এমন একটি বিদ্যালয়ের কথা জানা গেছে, যেখানে পড়াশোনার কোনো চাপ নেই। আর সেখানে তথাকথিত কোন সিলেবাসে নেই। কিন্তু আপনার হয়তো মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে তাহলে এই বিদ্যালয় তে কি হয়? বিদ্যালয় আছে সেখানে ছাত্র-ছাত্রী ও আছে কিন্তু তারা সেখানে কি করেন? এমন একটি অদ্ভুত বিদ্যালয় তৈরি করেছিলেন ২০১৬ সালে আশিতা এবং আনিশ নাথ। লখনোউও তে বসবাসকারী ওনারা হলেন দম্পতি। উত্তর প্রদেশের উন্নাও জেলার পশ্চিমগাঁও গ্রামেতে তারা একটি বিদ্যালয় তৈরি করেন। যেটি প্রথম চাষাবাদের বিদ্যালয় এবং এখানে প্রত্যেকেই নারী।

Advertisement
Advertisement

Advertisement

তথাকথিত বিদ্যালয় এর মতন এখানে কোন রকম কংক্রিটের ঘরবাড়ি নেই। কোনো রকম ক্লাস রুম নেই। একেবারে হাতে-কলমে এখানে মেয়েরা এসে প্রায় ৫০ হাজার বর্গফুট এলাকাতে চাষ করা শেখে। এই বিদ্যালয়ের অন্তর্গত রয়েছে একটি নার্সারি এবং বীজ রাখার ব্যাংক ছাড়াও রয়েছে পশুচারণ এর জায়গা।

Advertisement
Advertisement

এ বিদ্যালয়টি তৈরি করার পশ্চাতে একটি ছোট গল্প রয়েছে। এই দম্পতির দুজনেই কর্মরত। তারা দিল্লিতে চাকরি করতেন এবং ৬-৭ বছর আগে অনিস তার চাকরিটি ছেড়ে দেন। এখানেও সেই একই ব্যাপার, চাকরিতে ঠিক মন টিকছিলো না। তিনি এমন একটি কোন কাজ করতে চেয়ে ছিলেন যেটি করে তিনি মানসিকভাবে অনেকটা আনন্দ পাবেন। ভাবা মাত্রই কাজ। ২০১৩ সালে তারা একটা জমি কিনে ফেলেন। তারা এই জায়গায় এসে খুব ভালো করে জায়গাটা বুঝতে পেরেছিলেন। এই অঞ্চলের উত্তর দিকে সাধারণত পরিবারের মানুষজন বাড়ির ছেলেটিকে পড়াশোনা করাতে চাইতো, কিন্তু মেয়েদেরকে শিক্ষিত করার তাদের কোন ইচ্ছা ছিল না।

কারণ তারা ভাবতেন যে মেয়েরা বড় হয়ে তাদের বাড়ির কাজে কিংবা চাষের কাজে সাহায্য করবে। তাদের তাই পড়াশোনা করিয়ে খুব একটা লাভ নেই। কিন্তু এইরকম একটি বিদ্যালয় তৈরি হওয়ার ফলে তারা চাষটাকে কিভাবে উন্নতি করবে এইটা জানার সাথে সাথে, ক্রমাগত শিক্ষিত হতে শুরু করছিল এবং পরিবেশ টা কেমন সেটাও তারা জানতে চেষ্টা করছিল। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাস থেকে এই বিদ্যালয়টি পুরোপুরি ভাবে শুরু হয়। যখন শুরু হয়েছিল বিদ্যালয়টি তখন ছাত্রী সংখ্যা ছিল মাত্র ১০ জন, আর শিক্ষিকা ছিলেন দুজন আনিস এবং আশিতা।

এই বিদ্যালয়ে তথাকথিত ভাবে কোনরকম ক্লাস নেওয়া হয় না। প্রত্যেকে একসঙ্গে বসে এবং তারা একই সাথে ইংরেজি, হিন্দি, অংক এমনকি চাষাবাদ সংক্রান্ত নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে। তবে এখন শিক্ষিকার সংখ্যাও বেড়েছে, হিন্দি, ইংরেজি, অংক করানোর জন্য নতুন শিক্ষক, শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়েছে। তবে এখান থেকে শিক্ষা নেওয়ার পরে এখানকার ছোট ছোট ছাত্রছাত্রীরা শুধুমাত্র যে নিত্যদিনের সবজি বানাচ্ছে তাই নয়, তারা নানান রকম ঋতুকালীন সবজি যেমন ব্রকলি, বেগুনি বাধাকপি ইত্যাদিও তারা তৈরি করছে। যা সত্যি বেশ আনন্দের বিষয়। আগের বছর এই বিদ্যালয় থেকে একদল মেয়েকে লখনৌ তে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল একটি মাশরুমের ওয়াকসপ এর জন্য।

সেখান থেকে তারা মাশরুম কি করে তৈরি করতে হয় সেটা জেনে কয়েক মাসের মধ্যেই বিদ্যালয়ের ভিতরে মাশরুম তৈরি করা শিখে যায়। এই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীদের পিতা-মাতারা জানেন তারা এই বিদ্যালয় কতটা সুরক্ষিত। এখানে আসার সাথে সাথে শুধুমাত্র চাষাবাদ না তার সাথে সাথে পড়াশোনা এবং সামাজিক কিছু কর্তব্য তাদের মধ্যে তৈরি হচ্ছে যেমন একসাথে থাকা এবং খাবার একে অন্যের মধ্যে শেয়ার করা। তাছাড়াও এই বিদ্যালয় এ যেহেতু সকলে মেয়ে তাই মেয়েদের একটি মূলত সমস্যা ঋতুস্রাব নিয়ে। সেটি নিয়েও এখানে যথেষ্ট পরিমাণে শিক্ষা দেওয়া হয় যাতে তাদের মধ্যে কোন ভুল ধারণা না জন্মায়।

সব মিলিয়ে অনবদ্য বিদ্যালয়। শুধুমাত্র পড়াশোনা নয় সব দিক থেকে বিদ্যালয়টির নারীদের উন্নতি করার জন্য একেবারে উপযুক্ত। এমন বিদ্যালয় প্রত্যেকটি জায়গায় তৈরি হওয়া উচিত। এর ফলে দুই কাজ একসঙ্গে হচ্ছে নারীরা শিক্ষিত হচ্ছে এবং চাষাবাদ সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল থাকছে। একটা সমাজের উন্নতির জন্য নারীর শিক্ষা বেশি প্রয়োজন। তাই এই দম্পতির এমন চেষ্টাকে এবং উদ্যোগকে কুর্নিশ জানাতে হয়।

Advertisement

Related Articles

Back to top button