অফবিট

সামনে বড়দিন, আর সাথে রইল কলকাতার স্ট্রিট ফুড

Advertisement
Advertisement

শ্রেয়া চ্যাটার্জী : মাসের শেষ অথচ কলকাতায় আপনাকে অফিসে যেতে হচ্ছে বাড়িতে রান্না করার কেউ নেই একা ব্যাচেলর মানুষ অথচ পকেট গড়ের মাঠ ভাবছেন সারাদিনটা কি খেয়ে কাটাবেন? কোন চিন্তা নেই এর জন্য কলকাতায় সাজানো আছে রাস্তার মোড়ে মোড়ে স্ট্রিট ফুড। পনেরো থেকে কুড়ি টাকার মধ্যে সেরে নিতে পারেন আপনি আপনার ব্রেকফাস্ট। তবে লাঞ্চের জন্য একটু বেশি টাকা দিতে হবে ধরে নিন ৪০ টাকা। আর বিকেল বেলা টিফিন এর জন্য ১০-১৫ টাকা এনাফ।

Advertisement
Advertisement

তাই বলি সব সময় হোটেল রেস্টুরেন্টে বসে আরামে না খেয়ে মাঝেমধ্যে কলকাতার স্ট্রিট ফুড একবার চেখে দেখতে পারেন মন্দ লাগবে না। স্ট্রীট ফুড এর তালিকা রইল ফুচকা, সিঙ্গারা ঘুগনি পাউরুটি,  মোগলাই চাউমিন, এগ রোল এছাড়া সর্বশেষ এ তাছাড়া আমরা ভাবতেই পারি না সেটা হল চা। চলুন দেখে নিই আজকে কলকাতার বিখ্যাত বিখ্যাত স্ট্রিট ফুড।

Advertisement

ফুচকা 

Advertisement
Advertisement

ফুচকা নামটা শুনলেই আমাদের সকলের মুখে জল চলে আসে। কত রকমের ফুচকা হয় দই ফুচকা, আইসক্রিম ফুচকা,টক ঝাল  ফুচকা, চকলেট ফুচকা,ম্যাংগো ফুচকা আরো কত কি?

কয়েকশো বছর আগে মগধে শোনা যায় এই খাবারটির উৎপত্তি। তবে মহাভারতের শোনা যায় দ্রৌপদীকে নাকি একবার কিছু অল্প ময়দা এবং বাসি সবজি দিয়ে খাবার বানাতে বলা হয়েছিল, তারও বেশি বুদ্ধি ধরে, তিনিও তখন ছোট ছোট ময়দার লেচি কেটে এবং লুচির আকারে গড়ে সেটাকে ফাটিয়ে ভিতর দিয়ে দিয়েছিলেন ওই সবজিগুলো। আর বানিয়ে ফেলেছিলেন ফুচকা।

এবার চলুন দেখে নিয়ে কলকাতার কোথায় কোথায় বেশ ভালো  ফুচকা পাওয়া যায়

  • কলকাতার বিবেকানন্দ পার্কে জিতেন্দ্র পন্ডিতের ফুচকার দোকান বেশ বিখ্যাত।
  • দক্ষিণ কলকাতার দক্ষিণাপন রাজেন্দ্র ফুচকা  ও বেশ বিখ্যাত। এখানে রাজেন্দ্র 40 বছর ধরে ফুচকা বিক্রি করছেন। এবং তার ফুচকা তে অনেক রকম ভ্যারাইটি পাওয়া যায়। অর্থাৎ দই ফুচকা, টক ফুচকা,মিষ্টি  ফুচকা, টক মিষ্টি ফুচকা,আলু ফুচকা, দই আলু ফুচকা প্রভৃতি।
  • উডল্যান্ড হসপিটাল এর কাছাকাছি আপনি গেলে পেয়ে যাবেন প্রবেশের ফুচকার দোকান যেখানে 17 রকমের ফুচকা পাওয়া যায়।
  • তাছাড়া বরদান মার্কেট এর সামনে আপনি এমনি  তেঁতুল জল দেওয়া আলুর পুর দেওয়া ফুচকা পেয়ে যাবেন।

এছাড়াও আপনি কলকাতার আনাচে-কানাচে ফুচকা পেয়ে যাবেন, ফুচকা হল এমন একটা খাবার যে খাবারটা খাওয়ার কোন সময় থাকে না। মানে  সকালেও আপনার ইচ্ছা করতে পারে, দুপুরেও ইচ্ছা করতে পারে, সন্ধ্যেবেলা তো করবেই ইচ্ছা।

চা 

এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই। অফিসের টেনশন, কাজ এ একঘেয়েমিতা, কিংবা জ্বর জ্বর ভাব কিংবা প্রচন্ড আনন্দের মুহূর্ত, সকালে ব্রেকফাস্ট এর পরে কিংবা আলসে দুপুর অথবা সন্ধ্যায়, আমাদের সব সময় সঙ্গী চা। কেউ খায় লিকার চা, কেউ খায় দুধ দিয়ে, কেউ চিনি দিয়ে কেউ আবার না দিয়ে, সুস্থ থাকতে কেউ আবার পান করেন গ্রিন টি। চলুন আজকে আমরা কি ‘চা এ পে চরচা করি’।

  • দত্তপুকুর এর চা -এখানে গেলে আপনি পেয়ে যাবেন লালটু দার হাতে বানানো স্পেশাল চা। কুড়ি বছর বয়সী এই দোকানে  প্রতিদিন প্রায় হাজার জন শুধু চা খেতে আসেন। সকাল ছয়টা থেকে রাত দশ টা পর্যন্ত এখানে আপনি চা পেতে পারেন এখানকার স্পেশালিটি হলো মালাই চা।
  • এবার চলুন যাওয়া যাক শেক্সপিয়ার সরণি এর অরুণ টি স্টলে। এখানে প্রতিদিন প্রায় দুশো  থেকে আড়াইশো লিটার দুধের চা তৈরি হয় 
  • এবারে চলুন যাওয়া যাক এলগিন রোড হরিশ মুখার্জি রোডে ঠিক মাঝখানে একটি গুরুদুয়ার এর পাশের লাগোয়া বালওয়ান্ট সিংহ ইটিং হাউস  এ,এটি ভবানীপুরে অবস্থিত 1926 সাল থেকে শুরু এই দোকান।এই দোকানে স্পেশালিটি হলো এখানে আপনি কোন ফ্লেভার চা পাবেন না অর্থাৎ আদা এলাচ দিয়ে চা এখানে নেই এখানে সাধারণ চাই বিক্রি হয় 
  • এবার চলুন যাই রবীন্দ্র সরোবর লেক এ সেখানে আপনি দেখতে পাবেন কাউ বয় পরিতোষ কে। তিনি ৭০ বছরের একজন বৃদ্ধ মানুষ যার চুল এবং দাড়ি লাল রং করা। তিনি প্রায় ৪৫ বছর ধরেই চা বিক্রি করছেন দুপুর দুটো থেকে পৌনে নটা পর্যন্ত তিনি চা বিক্রি করেন।লক্ষ্মী পূজ আর দোল শুধু দুটো দিন বাদ দিয়ে তাকে আপনি পাবেন না। তিনি যখন প্রথম চা বিক্রি করতে এসেছিলেন তখন তার এক ভাঁড়  চায়ের দাম ছিল ১০ পয়সা এখন যেটা গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১০ টাকায়।
  • আমাদের পরবর্তী গন্তব্য স্থল লেক মার্কেট এর জনক রোডে ঢুকে রাধুবাবুর চায়ের দোকান। সকাল ছয়টা থেকে দশটা পর্যন্ত আবার বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে সাড়ে আটটা পর্যন্ত তার দোকান খোলা থাকে।
  • যদি দোকানের মতন করে একটু চা খেতে খেতে গল্প করতে চান তাহলে আপনি যেতে পারেন ইকো পার্কে। ইকো পার্কে ইউল টি লাউঞ্জে। খুব সুন্দর মনোরম পরিবেশে তৈরি এখানে গেলে আপনার বাড়তি পাওনা হবে এর সামনে আপনি পেয়ে যাবেন একটা ছোট্ট টি গার্ডেন। হ্যাঁ শুনে অবাক হচ্ছেন তো! এখানে দার্জিলিং ডুয়ার্স থেকে মাটি এনে চা গাছ রোপন করে সেখানে চা বানানো হচ্ছে। এখানে গেলে আপনি আসাম চা, দার্জিলিং চা এবং ওইখানে তৈরি হওয়া চা গাছের চাও আপনি খেতে পারেন।এছাড়াও পাওয়া যায় নানান রকম ফ্লেভার চা অর্থাৎ চিলি টি,রোজ টি, জেসমিন টি ইত্যাদি।
  • কলকাতার চা যেখান ছাড়া চলতেই পারে না সেটা হল কফি হাউজের চা। কলেজ স্ট্রিট কফি হাউজের আপনি গেলে পেয়ে যাবেন চা এবং চায়ের সাথে আপনি সাইড ডিশ হিসেবে  নিতে পারেন যথা স্যান্ডউইচ পকোড়া।

রোল 

রোল হলো একটি অন্যতম এবং বেশ পুরনো স্ট্রীট ফুড। চলুন দেখি নি কলকাতা কোথায় কোথায় ভাল রোল পাওয়া যায়।

  • কাঠি রোল, যেটা আপনি পেয়ে যাবেন নিজাম এ। নিজাম এমনিতে বিখ্যাত বিরিয়ানির জন্য তবে আপনি এখানে গিয়ে খেতেই পারেন  কাঠি রোল।
  • কাবাব রোল  – এটি আপনি পাবেন নিউ মার্কেট,বাদশার রেস্টুরেন্টে। এখানে কাবাব তৈরি করে রোলের মধ্যে ঢুকিয়ে আপনাকে পরিবেশন করা হয়।
  • কুসুম রোল’স এই দোকানটিতে আপনি নানান রকমের রোল পাবেন। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল লিভার  রোল প্রন রোল প্রভৃতি।
  • ফিশ টিকিয়া রোল – এটি আপনি পেয়ে যাবেন গোলপার্কের বেদুইন রেস্টুরেন্টে।
  • জব্বর আফগানি রোল এটি আপনি পেয়ে যাবেন সেক্টর ফাইভে এবং সল্ট লেক সিটি সেন্টারে।

কচুরী শিঙাড়া এবং জিলিপি 

কচুড়ি শিঙাড়া  জিলিপি হল বাঙ্গালীদের ট্রাডিশনাল জলখাবার। এবার চলুন দেখেনি কলকাতার কোথায় কোথায় আপনি জলখাবার পেতে পারেন। 

  • কচুরি তরকারি আপনি পেতে পারেন ক্যামাক স্ট্রিটে 
  • ভবানীপুরের শর্মা টি হাউসে আপনি পেয়ে যেতে পারেন কচুরি আলুর দম অমৃতি এবং সাথে চা 
  • উত্তর  কলকাতা ১৫০ বছরের পুরনো হরিদাস মোদক শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে এখানে গেলে আপনি পেয়ে যাবেন রাধাবল্লভী সিঙ্গারা এবং জিলিপি 
  •  গুপ্তা ব্রাদার্সের জিলিপি কচুরি রাধাবল্লভী আপনি খেতে পারেন জিলিপি দাম ১২ টাকা এবং অমৃতির দাম ১৬ টাকা। 
  • কালীঘাটের ৭০বছরের পুরনো দোকান পশুপতি এখানে গেলে আপনি পেয়ে যাবেন হিং এর কচুরি তাছাড়াও পাবেন সিংগারা খাস্তা কচুরি, ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল এখানে কিন্তু এখনো শালপাতায় খাবার পরিবেশন করা হয়।
  • কলেজ স্ট্রিটের পুঁটিরাম এ গেলে আপনি পেয়ে যাবেন রাধাবল্লভী ছোলার ডাল,সিঙ্গারা।

চাউমিন

চাউমিন একটি অতিপরিচিত স্ট্রিট ফুড। কলকাতার আনাচে-কানাচে আপনি চাউমিন পাবেন। তাও কয়েকটি বিশেষ জায়গার নাম এখানে উল্লেখ করলাম।

  • চাওমিন আপনি পেয়ে যেতে পারেন এক্সাইড মোড়ে। এখানে চাওমিন ছাড়াও আপনি পেতে পারেন পাস্তা এর স্পেশালিটি হল এর উপরে আপনাকে দিয়ে দেবে গ্রেভি।
  • 12 সি আর এভিনিউ, চাঁদনী চক বউবাজার এখানে গেলে আপনি খুব সুস্বাদু চাউমিন খেতে পারেন ।
  • টি বোর্ড এর পাশের রাস্তায় আপনি পেয়ে যেতে পারেন সুস্বাদু চাওমিন।
  • মহাত্মা গান্ধী রোডে আপনি পেয়ে যাবেন পরপর চাউএর দোকান 
  • বিবিডি বাগ লালদিঘির কাছে আপনি পেয়ে যেতে পারেন চাউএর দোকান 
  • ফালতু ফাস্ট ফুড সেন্টার ৪০ নিউ সান সরনী সি আই টি রোডে অবস্থিত এখানে গেলে সুস্বাদু পাবেন 
  • হাই কোর্ট এর কাছে গেলে আপনি পেয়ে যাবেন পরপর চাউএর দোকান 

শেষ কথা 

কি জিভে জল আসছে? খেয়ে আসুন একদিন সব কটা। কলকাতায় বেড়াতে যাবেন তার সাথে সাথে খাবেন। দেখবেন কেমন মজা হয়।

Advertisement

Related Articles

Back to top button