দেশনিউজ

ভুল চিকিৎসায় হারিয়েছেন দৃষ্টি, এবার প্রতিবন্ধকতাকে হারিয়ে পাশ করলেন UPSC

Advertisement
Advertisement

শ্রেয়া চ্যাটার্জি – উত্তরপ্রদেশের আমরোহা জেলার ২৭ বছরের সত্যেন্দর সিং ভারতের সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা ইউনিয়ন পাবলিক সার্ভিস কমিশন পাস করেছেন। পুরো ভারতবর্ষ মিলিয়ে তার র‍্যাংক ৭১৪। তবে অনেকেই কঠিন পরিশ্রম করে পড়াশোনা করে এই ধরনের পরীক্ষায় পাশ করেন, একথা ঠিক, কিন্তু এখানে সত্যেন্দর ছোটবেলা থেকেই দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছিলেন। তিনি জানান, “আমার যখন দেড় বছর বয়স তখন আমি নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হই। আমার মা-বাবা গ্রামের হাসপাতালে নিয়ে গেলে, সেখানে দুর্ভাগ্যবশত আমাকে ভুল ইনজেকশন দেওয়ায় আমার চোখের রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।”এক অদ্ভুত শৈশবকালের মধ্য দিয়ে তিনি অতিবাহিত হন। তার মা-বাবা চাষী ছিলেন। মা-বাবা বুঝতেই পারছিলেন না কিভাবে তার ছেলেকে প্রতিবন্ধকতা কাটিয়ে বেঁচে থাকার জন্য শক্তি প্রদান করা যায়।

Advertisement
Advertisement

তিনি সারাদিনই বন্ধুদের সঙ্গে বসে অংক, ইংরেজি নিয়ে আলোচনা করতেন এবং বিদ্যালয় কি কি পড়াশোনা হচ্ছে সেই বিষয়ে তিনি ওয়াকিবহাল থাকতেন। মনে মনে সংকল্প করে নিয়েছিলেন, – “তিনি তার এলাকার অনেক বাচ্চাদের থেকেই ভালো পড়াশোনায় হবেন।” তার এক কাকা জনম সিং, তাকে পড়াশোনায় অনেক সাহায্য করেছিলেন। তিনি সে সময় দিল্লিতে চাকরি করতেন এবং অন্ধদের শিক্ষাদান করা হয় এমন বিদ্যালয় একটি খুঁজে পেয়েছিলেন। প্রথম দিন বিদ্যালয়ে গিয়ে তিনি তার অতীতের অংক গুলিকে একটু ঝালিয়ে নিয়েছিলেন। তবে প্রথমবার ব্রেইল ভাষায় পড়ার অভিজ্ঞতা ও তার হয়েছিল। তবে এত কিছু জিনিস পত্রের সঙ্গে পড়াশোনা করতে করতে তিনি বাড়িতে ফিরে আসেন।

Advertisement

তবে ১০ বছরের মধ্যে তিনি ২০০৯ শেষে অবশেষে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন। দিল্লির একটি কলেজ থেকে তিনি ভালো নম্বর পেয়ে B.A পাশ করেন। কলেজের গ্রাজুয়েশন শেষ হওয়ার পরে তিনি তার মাস্টার ডিগ্রী দিকে এগিয়ে যান। তার বিষয় ছিলো আন্তর্জাতিক সম্পর্ক। এই বিষয়ের জন্য তিনি ভর্তি হয়েছিলেন দিল্লির জহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হয়ে তিনি তাঁর অসাধারণ অভিজ্ঞতার কথা জানালেন। তিনি বললেন, “রিক্সাওয়ালার ছেলে থেকে শুরু করে অভিজাত ছেলেরা সবাই একসঙ্গে বসে ভারতের আদর্শ, ভারতের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা করছে। সামাজিক বৈষম্য থাকা সত্বেও আমরা প্রত্যেকে প্রত্যেকের সঙ্গে জুড়ে থাকতাম। জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে শিখিয়েছিল সহ্য ক্ষমতার মূল্য, এবং অন্যের মতামতকে সম্মান করতে।”

Advertisement
Advertisement

দশম শ্রেণী পর্যন্ত তিনি ব্রেইলের উপরে নির্ভরশীল ছিলেন। তারপরে তার স্থানীয় অভিভাবক হরিশ কুমার গুলাচি, তাকে একটি কম্পিউটার কিনতে সাহায্য করেন এবং ই-বুক এর সাহায্যে পড়াশোনা করা এবং রেকর্ডিং ইত্যাদি তা কি শিখিয়ে দেন। কানের সাহায্যে শুনে কিভাবে পড়াশোনা করতে হয়, এমনটা তিনি শিখে গিয়েছিলেন।পরবর্তীকালে M.Phil করতে করতে তিনি দিল্লির অরবিন্দ কলেজে শিক্ষকতার দায়িত্ব নেন। তিনি জানান যে, সময় তার চরম অসুবিধা চলছিল সেই সময় তাঁর এক বন্ধু শচীন চান্দেল বলেছিল, “উঠে দাঁড়াও, একদিন এমন সময় আসবে যেদিন তোমার গল্প তুমি অন্য কাউকে বলবে”। তার পরেই তিনি এই UPSC পরীক্ষায় পাশ করেন। সেই সময় মধ্যেই তিনি তার এতো কষ্টকর জীবন নিয়ে লজ্জা অনুভব করেননি। বরঞ্চ তিনি M.Phil পাশ করার পরে PhD করেন জহরলাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। মন থেকে ইচ্ছা থাকলে যেকোনো বাধায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না জীবনে তার উদাহরণ এই ছেলেটি। নিজের মনের ইচ্ছাকে পূরণ করবে বলে জীবনে ঘটে যাওয়া সমস্ত বাধা বিঘ্ন কে কাটিয়েছেন একটা একটা করে। সময় কখনো সাথ দেবে, কখনো দেবে না, কিন্তু পরিশ্রমের ফল একদিন ঠিক পাওয়া যায়।

Advertisement

Related Articles

Back to top button