সাক্ষাৎকার

রাজনৈতিক শেল্টারে মস্তানরা পুলিশের থেকে বেশি ক্ষমতাবান : রাহুল সিনহা

Advertisement
Advertisement

মঙ্গলবার রাত বারোটা নাগাদ টাংরার গোবিন্দ খটিক রোডে নিঝুম পুত্রবধুকে দুর্বৃত্তদের হাত থেকে বাঁচাতে গিয়ে মৃত্যু হল শ্বশুরমশাইয়ের। মঙ্গলবার রাতে বিয়েবাড়ি থেকে পরিবারের সঙ্গে বাড়ি ফিরছিলেন ওই গৃহবধূ। অভিযোগ দ্রুতগতিতে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্স ওই বধুকে জোর করে গাড়িতে ওঠানোর চেষ্টা করে। ঠিক ঐ সময় ঘটনাস্থলে শশুর ও এক আত্মীয় চলে আসে ওই মহিলাকে রক্ষা করতে। ঠিক তখনই ওই ঘাতক অ্যাম্বুলেন্সটি পালানোর চেষ্টা করে। সূত্রে খবর ঠিক তখনই অ্যাম্বুলেন্সটি মহিলার শ্বশুর মশাই কে সজোরে ধাক্কা মারে ও বেশ খানিকটা টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যায়। এরপরই আশঙ্কাজনক অবস্থায় ওই পৌঢ়কে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। স্বাভাবিকভাবেই, এই মর্মান্তিক ঘটনার ফলে এলাকায় শোকের ছায়ার পাশাপাশি চাপা উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ ওই ঘাতক অ্যাম্বুলেন্সটি কে আটক করেছে।

Advertisement
Advertisement

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মতামত নেওয়ার জন্য ভারত বার্তার প্রতিনিধি যোগাযোগ করেছিল রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি মাননীয় রাহুল সিনহার সঙ্গে। তিনি এই বিষয়ে তার প্রতিক্রিয়া আমাদের ভারত বার্তাকে জানান।

Advertisement

ট্যাংরায় রাত বারোটা নাগাদ বিয়ে বাড়ি থেকে বাড়ি ফেরার সময় এক বিবাহিত মহিলাকে অপহরণ করার চেষ্টা করা হয় জানা গেছে দ্রুত গতিতে আসা একটি অ্যাম্বুলেন্স আচমকা তার দরজা খুলে ওই গৃহবধূকে গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। ওই সময় পুত্রবধূকে শ্বশুরমশাই বাঁচাতে এলে গাড়িটি দ্রুতগতিতে পালানোর চেষ্টা করে গাড়ির ধাক্কায় মহিলার শ্বশুর তথা ওই পৌঢ় এর মৃত্যু হয়। আমার প্রশ্ন কলকাতা তথা পার্শ্ববর্তী অন্যান্য অঞ্চল কি রাতের বেলা নারীদের জন্য আতঙ্কনগরী হয়ে উঠছে ?

Advertisement
Advertisement

রাহুল সিনহা : কলকাতা সবসময়ই আতঙ্কনগরী। কলকাতার রাতদিন বলে কিছু নেই, যেখানে সর্বসমক্ষে বোম পরে, যেখানে দিনের বেলা গুলি করে দিয়ে পালিয়ে যায় আর আততায়ী ধরা পড়ে না। সেখানে তো বোঝাই যাচ্ছে শুধু রাত নয়, দিনের আলোতে কেউ সুরক্ষিত নয়। যেখানে দিনে সুরক্ষা নেই, সেখানে রাতে সুরক্ষার আশা করা একপ্রকার দুরাশা বলে মনে করি। আইনশৃঙ্খলা পুরোপুরি ভেঙ্গে পরেছে এর কারণ, মস্তানদের রাজনৈতিক আশ্রয় দেবার কাজটা সরকার করে দিয়েছে। যে কারণের জন্য পুলিশ হেল্পলেস, পুলিশের কিছু করণীয় নেই। কারণ রাজনৈতিক শেল্টারে মস্তানরা পুলিশের থেকে বেশি ক্ষমতাবান। সেই কারণের জন্য এই জিনিসটা হয়েছে। একসময় এই ধরনের ঘটনা বিহারের দিকে শোনা যেত, এখন সেটা ইতিহাস হয়ে গেছে। এখানে আমরা সেটা চাক্ষুষ দেখতে পাচ্ছি।


এই ধরনের অপসংস্কৃতির দিক থেকে কি পশ্চিমবঙ্গের পরিবর্তন এখনো আসেনি ?

রাহুল সিনহা : যদি সরকারের মানসিকতার পরিবর্তন না হয় তাহলে এটা হবে না। সরকার যদি মনে করে Anti-Social দের আমার দরকার ভোটের কাজে ও সংগঠন বিস্তারের কাজে লাগানোর জন্য। তাহলে স্বাভাবিকভাবেই এটা হবে। সেই জন্য Anti-Social দের উপর ভরসা করে যদি রাজনৈতিক বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা হয় তাহলে এর চেয়ে বাইরে কিছু হতে পারে না।

কিছুদিন আগের একটা ঘটনা সরস্বতী পূজার ঠাকুর দেখতে বেরিয়ে এক একাদশ শ্রেণির ছাত্রী স্কুলে যাবার পর থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। কিছুদিন পরে সেই ছাত্রীর মৃতদেহ রেল লাইনের ধারে পাওয়া যায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ মেয়েটির প্রেমিক ও তার বন্ধুরা প্রথমে ধর্ষণ ও তারপর খুন করে। বারবার এই ঘটনা ঘটার পর অনেকে প্রশাসনের দিকে স্বাভাবিকভাবেই আঙ্গুল ওঠাচ্ছে। কিন্তু কোথাও না কোথাও আমাদের সমাজের একটা বড় অংশ অপসংস্কৃতি ও অপচিন্তার সাগরে নিজে বিলীন হয়ে যাচ্ছে না তো ?

রাহুল সিনহা : এই মহিলার উপর আক্রমনের ব্যাপারটা বরাবরই ছিল সমাজে। সেটা আজকে নয় অনেক আগেও ছিল। কিন্তু ব্যাপারটা হচ্ছে সেটা কমার বদলে আরো ধীরে ধীরে বাড়ছে। এটা বাড়ার বড় কারণ যেখানে মুখ্যমন্ত্রী লাইসেন্স দিয়ে দিচ্ছে। প্রকাশ্যে মুখ্যমন্ত্রী বলেছে এই রেপের ঘটনায় – এটা তুচ্ছ ঘটনা। এটা একবার না উনি কয়েকবার এই কথা বলেছে। দ্বিতীয় কথা উনি বলেছেন, এটা দুষ্টু ছেলেদের দুষ্টুমি। তাহলে একজন মহিলা হয়ে একটা রেপের ঘটনা কে দুষ্টু ছেলের দুষ্টুমি বলে তাহলে কি জাতীয় মানসিক সাপোর্ট ধর্ষণকারীদের জোগায় এটা সহজেই বোঝা যায়। সরকার যদি কঠোর হবার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তাহলে আমি মনে করি 15 দিনের মধ্যে এই সমস্ত অপরাধ প্রায় পুরোপুরি নির্মূল হয়ে যেতে পারে। পুলিশ প্রশাসনের অযোগ্যতা বলবো না কারণ , মুখ্যমন্ত্রী যদি একটা রেপের ঘটনাকে দুষ্টু ছেলের দুষ্টুমি বলে তাহলে পুলিশ প্রশাসন কি করবে ? তারমানে মুখ্যমন্ত্রী বলে দিচ্ছে রেপটা দুষ্টু ছেলের দুষ্টুমির সমতুল্য অপরাধ। মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য কে ব্যবহার করছে রেপিস্টরা। এটাই সবচেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর এই কারনেই এতসব ঘটনা হচ্ছে। আবার এমনও বলছেন, আপনারা ঘাবড়াবেন না। আপনাদের 10000 টাকা ! 20000 টাকা ! ক্ষতিপূরণ দেবে সরকার রেপ হলে। তারমানে রেপ করবে একজন আর ক্ষতিপূরণ দেবে জনগণ। সরকারের পয়সা মানেই জনগণের পয়সা। তাহলে এমন সুন্দর নীতি আর কোথায় আছে ? যদি মুখ্যমন্ত্রী এমন বলতো , আর একটা রেপ এর ঘটনা ঘটলে এমন সাজার ব্যবস্থা করব যাতে ওই দেখে আর কেউ মহিলার দিকে হাত বাড়াতে সাহস না পায়। তাহলে আমার মনে হয় দশটা রেপ হলেও কমতো ! কিন্তু যেখানে মুখ্যমন্ত্রী বলছি আমি টাকা দেবো তার মানে কি দাঁড়ালো ? উল্টো মানেটা এটাই দাঁড়ালো যারা যেটা করছ করে যাও , ক্ষতিপূরণ তো আমি দেবো। তোমারতো কিছু লাগবে না দিতে ! তো এই ধরনের উদ্ভট মানসিকতা রাজ্যের প্রধান শাসিকার থাকে তাহলে সেই রাজ্যের মহিলাদের সম্মান বারবার ভূলুণ্ঠিত হবে এটা স্বাভাবিক।


তার মানে বারবার যে এই ধরনের ঘটনা ঘটছে তার জন্য সরকারের উদাসীনতা অন্যতম প্রধান কারণ ?

রাহুল সিনহা : সরকারের উদাসীনতা নয় সরকারের প্রশ্রয় ও প্ররোচনা। সরকারের এই কথাগুলো কোন উদাসীনতার কথা নয়। এই কথাগুলো হচ্ছে প্ররোচনামূলক কথা। সরকারি প্রশ্রয় ও প্ররোচনায় যারা করছে তারা জানে যে আমার রক্ষাকবচ সরকার আছে। সেই কারণে আমাকে পুলিশ প্রশাসন কিছু করতে পারবে না !

কিছুদিন আগে মাননীয় দিলীপ ঘোষ বলেছিলেন যে, অ্যাম্বুলেন্সে করে সোনা পাচার করার কথা। সেই কথা কে কেন্দ্র করে রাজ্য রাজনীতিতে অনেক তর্ক-বিতর্ক চলেছিল। মঙ্গলবার রাতে ট্যাংরার ঘটনার পর একপ্রকার বলা যেতে পারে, অন্য কোনভাবে দীলিপবাবুর কথাটাই বুমেরাং হয়ে বাস্তবায়িত হয় গেলো নাতো ?

রাহুল সিনহা : অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার নানান কুকীর্তির জন্য ব্যবহার এর আগে করেছে তৃণমূল। সারদা নারদা টাকাগুলো কিসে পাচার হত ? কেউ ধরা পড়েছে ? এ তো কোন গল্প কাহিনী নয়। সারদার টাকাগুলো পাচার হয়েছে অ্যাম্বুলেন্সে করে। তৃণমূল নানাভাবে অ্যাম্বুলেন্স এর অপব্যবহার করেছে। সেই অপব্যবহার সর্বত্র চলছে , এখনো চলছে। মঙ্গলবার রাতের ঘটনা আবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল রোগী পরিবহনের যান কেও অপরাধীরা ছাড়েনি। সেই যান কেও অপরাধের কাজে ব্যবহার করছে। আর এটা শিখিয়েছে কিন্তু তৃণমূল কংগ্রেস এর কারণ, বড় বড় নেতাদের সারদার টাকা পাচার করা ও পৌঁছে দেওয়া এই কাজ এম্বুলেন্সের দ্বারা করা হয়েছে। যদিও এটা তৃণমূল শিখেছে সিপিএম এর কাছ থেকে। তার আগে আমরা দেখেছি সিপিএম-এর লোকেরা নন্দীগ্রামে অস্ত্রশস্ত্র ও Anti-social তখন এসেছিলো এম্বুলেন্সে। শুধু একবার নয় , বহূবার এসেছিল কিন্তু দুটো এম্বুলেন্স ধরা পড়ে যায়। তারপর লোকের সামনে আসে তাহলে আম্বুলান্স কে কিভাবে তৎকালীন সিপিএম কাজে লাগিয়েছে খুন হিংসা চালাবার জন্য। অ্যাম্বুলেন্স এর ব্যবহার অপব্যবহার সিপিএম শুরু করেছিল ও তৃণমূল তার নগ্ন রূপ দেখাচ্ছে।


কোন মহিলার সাথে ধর্ষণ বা এই জাতীয় কোন কিছু হলে সেটি যখন আদালতের কাঠগড়ায় পৌঁছায় তখন অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে সেই মামলা দীর্ঘকালীন বা দীর্ঘ সময় ধরে তার প্রক্রিয়া চলে। আমার প্রশ্ন কোথাও কি এই Long-term প্রসেসকে Short-term এ আনা উচিত নয় কি ?

রাহুল সিনহা : একদম আমি মনে করি পুরো বিচারের সময়টাই সর্বক্ষেত্রে শর্ট টাইম কি করে করা যায় সেই নিয়ে ভাবনা চিন্তা করা তো অবশ্যই উচিত। আর যেখানে মহিলার মানসম্মানের ঘটনা সেখানে বিচার প্রক্রিয়া তাড়াতাড়ি হওয়া ও দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থাও দ্রুত হয় তাহলে কিছুটা ভীতিও তৈরি হবে। ইউটিউব বিলম্বিত বিচার ব্যবস্থা বা বিচার ব্যবস্থার অনেক ত্রুটির কারণে আসামি ছাড়া পেয়ে যায় সেটাও একটা আসামির এই জাতীয় কাজ করার প্রবণতা বাড়ার একটা বড় কারণ আছে এতে সন্দেহ নেই ! কিন্তু সবকিছু থাকলেও আমি বলছি আসামিও যে অনেক সময় বেঁচে যায় সেটা অনেক সময় রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে। একটা রেপ কেস এ লড়াইটা হয় আসামি ভার্সেস সরকার পক্ষের। যার উপর রেপ হয় তিনি কিন্তু লড়াই করেন না , তার হয়ে লড়াই করে সরকার। অতএব সেখানে পুলিশ প্রশাসনের রিপোর্ট হালকা করা, কায়দা করা অনেক ধরনের গরমিল ওখানে থাকে। মামলা চলার সময় অনেক কিছু এদিক ওদিক হয়। কারণ আসামির হয়ে লড়াই করে আসামি পক্ষের উকিল। সে পয়সা নিয়ে লড়ে। যিনি ক্ষতিগ্রস্ত বা ভিকটিম তার হয় কিন্তু লড়ে সরকারি উকিল। আর ন্যাচারালি সরকারি উকিল লড়লে সরকারের যা দৃষ্টিভঙ্গি তাওহীদের ক্ষেত্রেও কাজ করে, পুলিশের ক্ষেত্র তাই কাজ করে ! পুলিশ প্রশাসনের ক্ষেত্রে আদালতের বাইরে যদি কাজ করে তাহলে আদালতের ভেতরেও কাজ করে ! ফোনে স্বাভাবিক ভাবেই এসব ক্ষেত্রে অনেক সময় রিপোর্ট আসেনি, সিডি জমা পড়েনি , সঠিকভাবে ধারা দেওয়া হয়নি এই সমস্ত নানারকম ত্রুটি রাখা হয় ইচ্ছাকৃতভাবে। যাতে ওই ত্রুটি তার ফাঁক দিয়ে আসামি বেরিয়ে যেতে পারে। তো সেখানে পয়সারও খেলা হয়, রাজনৈতিক প্রভাব কাজ করে। তারমানে সরকার যদি কঠোর হয় তাহলে পুলিশ প্রশাসনের পক্ষে এই যে আদালতের কিছুর বিনিময় আসামিকে মুক্ত করার যে চেষ্টা থাকে সেটা কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে রোধ হয়ে যায়। সরকারের এই ব্যাপারে কোন ভাবনা নেই , কোন চিন্তাই নেই। পরিসংখ্যান বিচার করলে দেখা যাবে, পশ্চিমবঙ্গে যতগুলো রেপ হয়েছে তার 5 বছরের পরিসংখ্যান যদি আপনি নেন তাহলে দেখবেন 94 থেকে 95 শতাংশ রেপিস্ট তৃণমূলের ছত্রছায়ায় আছে। হয় তৃণমূল পরিবারের লোক নতুবা সরাসরি তৃণমূল করছে নয়তো তৃণমূলের মধ্যে এদের সংযোগ রয়েছে। এই কারণের জন্য এই রাজনৈতিক শেল্টার টাই মহিলার উপর আক্রমনের সব চেয়ে বড় কারন। রাজনৈতিক সেটা যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে বিচার পেতে অসুবিধা হবে, দোষীর সাজাও তাড়াতাড়ি হবে আর এর সাথে এই জাতীয় ঘটনার যে প্রবণতা সেটাও কমে আসবে।

[ সাক্ষাৎকার গ্রহণ : প্রীতম দাস ]

Advertisement

Related Articles

Back to top button