কলকাতানিউজরাজ্য

ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদের পিছনে রয়েছে আরও ২-৩টি বড় ঘূর্ণিঝড়, দুর্যোগ-শঙ্কা বাংলায়

Advertisement
Advertisement

২০২০ সালের আমফান ঝড়ের ধ্বংসলীলা এখনো বাংলার মানুষ ভোলনি। সেই দুধর্ষ ঝড়ের প্রভাব মিটতে না মিটতে এবছর ফের ইয়াস ঝড়ের প্রভাবও কম পড়েনি। এবার শীতের মরশুমে ফের আরো এক ঘূর্ণিঝড় জাওয়াদ রাজ্যে এসে হাজির। তবে এই শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় রূপে জাওয়াদ আছড়ে না পড়লেও এর পিছনে যে লাইন দিয়ে রয়ছে আরও দু-তিনটি ঘূর্ণিঝড়, সেই আভাস দিয়ে রাখলেন আলিপুর আবহবিদরা। এইবারে রাজ্যে শীতের মরশুম বিদায় নিলে আরও দু-তিনটি ঝড় হানা দেওয়ার সম্ভাবনা আছে বাংলা অভিমুখে।

Advertisement
Advertisement

এই প্রসঙ্গে ভূতত্ত্ববিদ সুজীব কর জাওয়াদের চরিত্র ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, শীতকালে সাধারণত শান্ত জলবায়ু বিরাজ করে বঙ্গোপসাগরে। এই কারণে শীতের মরশুমে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয় না এই সময়। শীতকাল কেটে গ্রীষ্মকাল আসার মূহূর্ত থেকে ঘূর্ণিঝড় তৈরির অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়ে যায় সমুদ্রের মধ্যে। সেইসময়ই পর পর সাইক্লোন আসে এই রাজ্য। আবহবিদ আরো বলেন, পরের বছর মার্চ থকে মে মাসের মধ্যে দুই থেকে তিনটি সাইক্লোন তৈরি হতে পারে বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী অঞ্চলে। জুন পর্যন্ত যে সাইক্লোন তৈরি হয়, সেগুলি সাধারণ পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা বা বাংলাদেশের দিকেই আছড়ে পড়ে। ফলে বাংলার বুকে সাইক্লোনের প্রভাব পড়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে গ্রাষ্মকালের ওই সময়ে।

Advertisement

এখন প্রশ্ন হল এই বঙ্গোপসাগরে এত ঘনঘন সাইক্লোন তৈরি হচ্ছে কেন, কেনই বা তা বাংলার দিকে এগিয়ে আসছে। জলবায়ু বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এবছর শীতকাল হবে দীর্ঘ। কিন্তু শীতেও মাঝেমধ্যে বৃষ্টিপাত হয় রাজ্যে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই ধরনের বদল ঘটছে বারবার আবহাওয়ায়। জলচক্র সক্রিয় হয়ে যাওয়ায় তাই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ উত্তরোত্তর বাড়িয়ে দিচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা আরো বলছেন, এই জলবায়ুর প্রভাবে শুধু বৃষ্টিপাতের পরিমাণই বাড়বে না বারংবার জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে সাইক্লোনের সংখ্যাও ক্রমশ বাড়বে। সম্প্রতি জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে অদূর ভবিষ্যতে কলকাতা-সহ ১২টি শহর এই জলের তলায় তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করেছেন বিশেষজ্ঞরা। আর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বারংবার দুর্যোগের সম্ভাবনা বাড়ছে। তাই বাড়ছে সাইক্লোনের সংখ্যা। দুটি সাইক্লোনের মধ্যে ব্যবধানও কমছে।

Advertisement
Advertisement

সেই প্রশ্নের উত্তরে আবহবিদরা বলেন, বঙ্গোপসাগরে তাপমাত্রা এই মুহূর্তে তুলনামূলকভাবে বেশি। সাধারণত এই শীতকালীন পরিস্থিতিতে বঙ্গোপসাগরের তাপমাত্রা অপেক্ষাকৃত শীতল থাকে। ফলে এই সময় কোনও সাইক্লোন তৈরি হয় না। যে পরিমাণ তাপমাত্রা নামার কথা বঙ্গোপসাগরের, সেই পরিমাণ তাপমাত্রা এখনো নামেনি। ফলে এখানে ক্রমশ সাইক্লোন তৈরি হয়েছে। এই তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে সাইক্লোনের সম্মুখীন হচ্ছে বাংলা।

প্রথমত এই জাওয়াদ প্রশান্ত মহাসাগর থেকে থাইল্যান্ডের উপর দিয়ে আন্দামান সাগর ও বঙ্গোপসাগরে নেমে এসেছে। তাই এই দীর্ঘপথ অতিক্রম করায় তা শক্তিসঞ্চয়ও করেছে। আবার এই বঙ্গোপসাগরে এসে এক অনুকূল পরিবেশ পেয়েছে। তাই গভীর নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনে রূপান্তরিত হয়েছে। তবে উপকূলবর্তী রাজ্যে আসতেই তাপমাত্রার তারতম্যের জেরে শক্তি হারিয়ে গভীর নিম্নচাপ থেকে সুস্পষ্ট নিম্নচাপে রূপান্তরিত হতে চলেছে।

এই সাইক্লোনটি প্রথমে অন্ধ্রপ্রদেশ ল্যান্ডফল করার কথা ছিল। কিন্তু সেখানকার ভূমিভাগ ও জলভাগের তাপমাত্রার মধ্যে সমতা তৈরি হয়ে যাওয়ায় ঘূর্ণিঝড়ের অভিমুখ বদল করে উত্তর-পশ্চিমে গতিপথ পরিবর্তন করে নিয়েছিল। একই কারণে ওড়িশীর পুরীতেও ল্যান্ডফল হয়নি । তাই জাওয়াদ নিজের শক্তি হারিয়ে নিম্নচাপে পরিণত হয়ে উত্তর-পূর্ব দিকে ঘুরে যাবে। বাংলার উপকূলে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে বাংলাদেশের দিকে চলে গিয়েছে। তবে এই যাত্রাপতে জাওয়াদের পূর্ণশক্তি শেষ হয়ে যায়।

Advertisement

Related Articles

Back to top button