অরূপ মাহাত: দেশ স্বাধীন হয়েছে ৭২ বছর আগে। তৈরী হয়েছে দেশের সংবিধান। যা পৃথিবীর বৃহত্তম লিখিত সংবিধান হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু সেই সংবিধানে দেওয়া অধিকারের কতটুকু ভাগ পায় সাধারণ মানুষ। নিজেদের অধিকার নিয়ে কতটুকুই বা সচেতন তাঁরা। আসুন একবার দেখি নিই কেমন আছে আমার দেশ? কেমন আছেন দেশের মানুষ?
বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা দিবস পালন কতটুকু উপভোগ করেন সাধারণ পেশার মানুষ? সেই উত্তর খুঁজতে চেষ্টা করবো এই কয়েকদিনে। আজ তৃতীয় পর্বে আমরা খোঁজ নিয়ে দেখবো আমাদের দেশের অর্থনৈতিক মেরুদন্ডকে সোজা করে রেখেছে যারা, সেই কৃষক শ্রেণীর মানুষেরা স্বাধীন ভারতে কেমন রয়েছে? স্বাধীনতা দিবসে অনুভূতি, অভিব্যক্তি কিভাবে প্রকাশ করছে তারা? ফসলের দাম না পেয়ে দেশ জুড়ে কৃষকের আত্মহত্যার পরিমাণ ক্রমাগত বাড়ছে, ঋণ ছাড়ের ব্যাপারে কৃষকদের প্রতি অবহেলা সবচেয়ে বেশি। তারপরও আমরা খোঁজ নিতে গিয়েছিলাম স্বাধীনতা দিবস কেমন কাটাবে দেশের কৃষকেরা? কিভাবে স্মরণ করবে আমাদের দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের? এর উত্তর পেতে জঙ্গলমহলের এক কৃষি প্রধান গ্রামে গিয়ে পৌছেছিলাম। উত্তর তো পেলামই না, উল্টে কয়েক জোড়া জিজ্ঞাসু চোখ এমন ভাবে তাকিয়ে রইলো আমাদের দিকে যেন প্রশ্ন করে খুব বড় অন্যায় করে ফেলেছি। ১৫ আগস্ট পালিত হয় স্বাধীনতা দিবস, এই সময় মৌসুমী বৃষ্টির উপর নির্ভরশীল কৃষি প্রধান ভারতবর্ষে ধান চাষের সবচেয়ে উপযুক্ত সময়।
চাষের এই ভরা মরশুমে কোনদিকে নজর দেওয়ার মতো সময় নেই কৃষিজীবী মানুষগুলোর। সারা দিন হাড় ভাঙা খাটুনির পর রাতটুকু বিশ্রাম নিয়েই পরদিন সকালেই আবার তাদের ছুটে যেতে হয় খোলা আকাশের নিচে, ছুটে যেতে হয় কাঁধে লাঙল নিয়ে। তাই ১৫ আগস্ট তাদের কাছে তেমন তাৎপর্য বয়ে আনে না। স্কুল পড়ুয়া ছেলেটা সকাল সকাল দুটো বাড়তি বিস্কুট নিয়ে বাড়ি ফিরে হাত লাগায় বাবা মার সাথে। ১৫ আগস্টে একটি কৃষিজীবী পরিবারের প্রাপ্তি বলতে এটুকুই। এরা জানে বছর ঘুরতে না ঘুরতেই আবার দাম কমে যাবে ফসলের, কৃষিঋণ শোধ দিতে না পেরে গলায় দড়ি নেবে অনেকে, কেউ বা রাস্তায় ফসল ঢেলে দিয়ে প্রতিবাদে এগিয়ে আসবে। কিন্তু এতে কারো কিছুই যায় আসবে না। উত্তাল হবে না দেশীয় রাজনীতি, মশলার অভাবে দায়সারা খবর পরিবেশন করে কর্তব্য এড়াবে গণতন্ত্রের চতুর্থ স্তম্ভ ভারতীয় মিডিয়া। প্রতিটি কৃষকই জানে স্বার্থের এই দুনিয়ায় তাদের পাশে দাঁড়ানোর মতো কেউ নেই এই স্বাধীন ভারতে, স্বাধীনতা আসলে শৌখিন ভারতের। তাই তো দেশের স্বাধীনতা দিবসেও এতটা নিরুত্তাপ থেকে যেতে পারে তারা।