ভূমিকা
এক কাপ চায়ে আমি তোমাকে চাই! সত্যি,সকালে ঘুম থেকে উঠে ঘুমের আলস্য ভাঙতে, অফিসের কাজের মাঝে স্ট্রেস কমাতে, অথবা গলায় ব্যথা সারাতে গরম চা, ব্রেকফাস্ট খাওয়ার পরে চা, লাঞ্চের আগে চা,সন্ধ্যেবেলার টিফিন এর সাথে চা, কারণে চা, অকারণে চা।বিছানায় বসে বেড টি কিংবা ডাইনিং টেবিলের সবার সঙ্গে বসে চা। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডায় সবার সঙ্গে আনন্দে চা, মন খারাপের একাকীত্বে বাইরে বৃষ্টি বাদলের দিনে চা।সব সময় চা।
রাস্তার ধারে ভাঁড়ে চা, কিংবা কোন এসি করা কফি ক্যাফে তে বড় কাপে চা, সব সময় আমাদের প্রিয় চা। এত তো চা নিয়ে চর্চা করেন? কখনো জেনে দেখেছেন চায়ের ইতিহাস কি? আমাদের পৃথিবীতে ঠিক কত রকমের চা পাওয়া যায়? আর কোথাকার চা বেশি বিখ্যাত? চলুন জেনে নি আজকে আমাদের বিষয় চা।
চায়ের ইতিহাস
ইংরেজিতে চা এর প্রতিশব্দ হলো টি। গ্রীক দেবী থিয়ার নামানুসারে এরূপ নামকরণ করা হয়েছিল। চিনে এর উচ্চারণ ছিল চি, পরে হয়ে যায় চা।
1650 খ্রিস্টাব্দে চিনে বাণিজ্যিকভাবে চায়ের উৎপাদন শুরু হয়। আর ভারতবর্ষে এর চাষ শুরু হয় 1817 খ্রিস্টাব্দে। 1657 খ্রিস্টাব্দে ইংল্যান্ডের প্রথম চায়ের দোকান খোলা হয়। তার বেশ কিছু বছর পরে 1823 খ্রিস্টাব্দে মেজর চার্লস রবার্ট চা গাছ পাওয়া যায় এইটা আবিষ্কার করেন। চা এখানে হতো না ইংরেজরা চীন থেকে এটি আমদানি করত। কিন্তু যখন আফিম যুদ্ধ শুরু হয়।তখন চা চীন থেকে আমদানি করা খুব সমস্যা হয়ে পড়ে। তখন ব্রিটিশরা চিন্তা করেন যে চায় এখানে কিভাবে বানানো যায়। তার চার বছর পরে প্রথম অর্গানাইজড চা বানানো শুরু হয় ভারতবর্ষে। এক গবেষণায় দেখা গেছে 2008 খ্রিস্টাব্দে সমগ্র বিশ্বে 3800000 টন চা পাতা উৎপাদিত হয়েছে।
শোনা যায় চিনেই এর আদি বাসভূমি। এক বৃদ্ধ মানুষ একদিন এক বাগানে বসে গরম জল ফোটাচ্ছিলেন।সেই সময় হঠাৎ ঝড় উঠলো। তিনি বাগান থেকে ঘরের ভেতর চলে গেলেন। এসে দেখলেন সেই ফুটন্ত বাটির মধ্যে দুই তিনটি পাতা পড়ে এবং জলের সাথে পাতাটি ফুটে জলের রং ও পরিবর্তন হয়ে গেছে এবং খেতেও অন্যরকম লাগছে। চা গাছের বিজ্ঞানসম্মত নাম ক্যামেলিয়া সিনেন্সিস। কিছু কিছু চায় ক্যামেলিয়া সিনেন্সিস থাকে না। ভেষজ চা হলো এক ধরনের নিষিক্ত পাতা ফুল লতা উদ্ভিদের অন্যান্য অংশ যাতে কোনো ক্যামেলিয়া সিনেন্সিস নেই। সাধারণত কালো চা কোরিয়া চীন ও জাপানে ব্যবহৃত হয় অথবা দক্ষিণ আফ্রিকার গাছ থেকে তৈরি এটি কোন ক্যামেলিয়া সিনেন্সিস নেই। দক্ষিণ আফ্রিকায় রুইবস গাছ থেকে চা তৈরি হয় এতে কোনো ক্যামেলিয়া সিনেন্সিস নেই।
রং অনুসারে চাই শ্রেণীবিভাগ
গ্রিন টি চা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। চলুন জেনে নিই গ্রিন টি প্রকারভেদ
এই চায়ের উপকারিতা
সাদা চা
প্রথম যখন সাদা চা উৎপাদন করা হচ্ছিল তখন চা বিক্রেতার অসম্মতি জানিয়েছিল। আমরা যা বর্তমানে সাদা চা হিসেবে জানি তা খুব সম্ভবত গত দুই শতকের মধ্যে সৃষ্টি হয়েছে 1876 সালে ইংরেজি কোন এক সম্পাদনায় প্রথম উঠে এসেছিল এটির নাম। কালো চা কেননা প্রথমত এটি সবুজ চার মতন অভ্যন্তরীণ উৎসেচক এবং বহিরাগত জীবাণু নিষ্ক্রিয় করতে তৈরি হতো না। এইটাকে বর্তমানে চায়না হোয়াইট বা ফুজিয়ান হোয়াইট বলা হয়।
কাল চা
কাল ছাপা ব্ল্যাক টি রং চা নামে পরিচিত। এটা উলঙ সবুজ বা সাদা চার তুলনায় অধিক জারিত করা হয় বা বেশি মাত্রায় ফোটানো হয়। একটি স্বল্প জারিত চা এর তুলনায় অধিক গন্ধ যুক্ত হয়ে থাকে। ক্যামেলিয়া সিনেন্সিস পাতা থেকে এর চারটি ধরন তৈরি করা হয়। এ ক্ষেত্রে ব্যবহৃত দুটি প্রজাতি হলো ছোট পত্রিকা যুক্ত চিনা উদ্ভিদ উ যা অধিকাংশ প্রকারের চা এর জন্য ব্যবহৃত হয় এবং বড় অসমীয়া উদ্ভিদ যা চিরাচরিত চায়ের জন্য ব্যবহৃত হয়।
জায়গা অনুযায়ী চায়ের প্রকারভেদ
পৃথিবীতে আসাম এবং চীন জাতীয় দুই ধরনের চা গাছ দেখতে পাওয়া যায়। তার মধ্যে আসাম জাতীয় চা ভারত ও শ্রীলংকার অধিক পাওয়া যায় এই ধরনের গাছ বেশ বড় বহু পাতাযুক্ত।
অন্যদিকে চীন জাতীয় গাছ আকারে বেশ ছোট হয়। এতে পাতার সংখ্যা অনেক কম থাকে। এ গাছ না ছাঁটলেও পাতা তোলার মতো উচ্চতা সম্পন্ন হয়ে থাকে।
চা গাছের ব্যবস্থাপনা
চা গাছ রোপন, আগাছা পরিষ্কার, সার প্রয়োগ, গাছ কচি পাতা তোলা,চা পাতা শুকানো, চা প্যাকিং বহু ধরনের কর্মকাণ্ডে দক্ষ অদক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। পাতা চয়নের কাজে দক্ষ মহিলা শ্রমিক নিয়োজিত থাকে। বিষয়টি বেশ ধৈর্যের তাই বাগান কর্তৃপক্ষ সাধারণত নারী শ্রমিকদের জন্য নিয়োগ করেন।
জৈব জ্বালানির কাজে চায়ের পাতা ব্যবহার
2010 সালে পাকিস্তানের কায়েদ-এ-আজম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা ব্যবহৃত চা পাতা থেকে জৈব জ্বালানি তৈরি একটি উপায় বের করেছেন। তারা এ থেকে বিকল্প পদ্ধতিতে ব্যবহৃত ফেলে দেওয়া চা পাতা থেকে গ্যাসিফিকেশন পদ্ধতিতে ২৪ পার্সেন্ট হাইড্রোকার্বন গ্যাস উৎপাদন করেন। এই গ্যাস কয়লার মতোই সরাসরি জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
চায়ের উপকারিতা
শেষ হল চা নিয়ে কথা। আর কথা না বাড়িয়ে এক কাপ চা নিয়ে বারান্দায় বসে পড়ুন ধোঁয়া ওঠা চা কাঠের হেলানো চেয়ার আর বাইরে টিপটিপ বৃষ্টি মন্দ লাগবে না। একা থাকলে হাতে নিতে পারেন রবীন্দ্রনাথ কিংবা শরৎ রচনাবলী। আর সঙ্গী থাকলে তো কথাই নেই তার সঙ্গে গল্প করতে করতে চায়ের স্বাদ উপভোগ করুন।
শ্রেয়া চ্যাটার্জি