এবছরের লকডাউনে অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। আবার অনেকেই চাইছে না পুরনো কাজে ফিরে না গিয়ে নতুন করে নিজের ব্যবসা শুরু করতে। কিন্তু ব্যবসা করতে এসে মূলধন লাগে সেটা নিয়ে অনেকের ক্ষেত্রে অনেক সমস্যা তৈরি হয়। কিন্তু তার মধ্যেই মাশরুম হল এমন একটি জিনিস, যার ব্যবসা আপনি খুব কম খরচের মধ্যেই শুরু করতে পারবেন এবং নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে বেশ সস্তায় লাভের মুখ দেখতে পারবেন আপনি। বাড়ীর পুরনো হাঁড়িতেই মাশরুমের ব্যবসা শুরু করা যাবে এবং আপনি মোটামুটি ২৫ শতাংশ পর্যন্ত খরচ কমাতে পারবেন এই ব্যবসার মাধ্যমে। স্বল্প খরচে অধিক লাভ থাকার কারণে অনেকেই মাশরুম চাষের প্রতি আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছেন।
কৃষকরা এই চাষ করে লাভবান হচ্ছেন, এবং কৃষি বিজ্ঞানীরা নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবন করেছেন এই মাশরুম চাষের। সম্প্রতি একটি নতুন কৌশল আবিষ্কৃত হয়েছে যেখানে বাড়ীর পুরনো কলসিতে ঝিনুক মাশরুম চাষ করে আপনারা বেশ ভালো মত আয় করতে পারবেন। রাজস্থানের কৃষি গবেষণা কেন্দ্র এবং শ্রী গঙ্গানগর এর বিজ্ঞানীরা একসাথে এই প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন। ঝিনুক মাশরুম চাষের জন্য আপনারা ব্যবহার করতে পারেন একটি কলসি। কৃষি গবেষণা কেন্দ্রের কৃষি বিজ্ঞানী ডঃ এস কে বৈরওয়া জানাচ্ছেন, “মাশরুম উৎপাদনের ক্ষেত্রে এই নতুন প্রযুক্তিতে খুব একটা পার্থক্য নেই। যারা ঝিনুক মাশরুম চাষ করেন তাদের জন্য আমরা পলিথিনে স্প্যান এবং কম্পোস্ট প্যাক ব্যবহার করি। যাতে করে সেই ব্যাগের স্প্যান ভালো ভাবে প্রস্তুত করা সম্ভব হয়।”
সামান্য পরিবর্তন করে আমরা ড্রিল এর সাহায্যে একটি পুরনো পাত্রে বেশ অনেকগুলো ছিদ্র তৈরি করেছি এবং সেখানেই ওয়েস্টার মাশরুম উৎপাদন করা শুরু করছি। এই ধরনের মাশরুম অন্যান্য মাশরুমের তুলনায় সহজে উৎপাদন করা যায় এবং এর চাহিদা অনেক বেশি থাকে। মাত্র আড়াই থেকে তিন মাসের মধ্যে এই মাশরুম তৈরি হয়ে যায় এবং এই মাশরুমের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো এটি শুকানোর পর ব্যবহার করা যেতে পারে। বাজারে এই মাশরুমের বেশ ভালো দাম রয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন তাপমাত্রার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে তাই সারা বছর এই ধরনের মাশরুম তৈরি করা সম্ভব হয়।
মাশরুম চাষ সম্পর্কে ডাক্তার এসকে বইরওয়া বললেন, “বীজ থেকে ওয়েস্টার মাশরুম তৈরি হয়। এর চাষের জন্য খড়, পাত্র এবং ছত্রাকনাশক দরকার। প্রথমে ছত্রাকনাশক জলে মিশিয়ে খড় বেশ ভালোভাবে শোধন করে নেওয়া হয়। তারপরে খড় ১২ ঘন্টা জলে ভিজিয়ে রাখার পর জল থেকে তুলে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই মাসুমের ফুল ফোটার সময় বেশ কিছু বিষয়ের উপর যত্ন নেওয়া প্রয়োজন। খড় ভরাট করার পরে হাড়িতে যে গর্তগুলো করা হয়েছে তা তুলো বা টেপ দিয়ে দশ পনেরো দিন বন্ধ করে রাখতে হবে যাতে ভিতরে আদ্রতা থাকে। ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে যখন স্প্যান বেশ ভালো ভাবে ছড়িয়ে পড়বে, তখন সেগুলিকে খুলতে হবে এবং মাশরুম বের করতে হবে।” শ্রী গঙ্গানগর এর জনগণকে এই মাসুম চাষ নিয়ে প্রশিক্ষণ দিতে শুরু করা হয়েছে। অনেকে এই পদ্ধতিতে ইতিমধ্যেই চাষাবাদ শুরু করেছেন। আগে মাশরুম তৈরি করার জন্য পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার করা হতো যা নিক্ষেপনের পরে পরিবেশ দূষণ করতো। কিন্তু নতুন এই পদ্ধতিতে মাশরুম চাষ করলে ঘরে পড়ে থাকা পুরনো হাড়ি কাজেও লেগে যাবে এবং দূষণের ঝুঁকি অনেকটাই কমেও যাবে।