ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক উত্তেজনা নতুন মাত্রা লাভ করেছে। দু’টি পারমাণবিক শক্তিধর দেশের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় গোটা বিশ্ব উদ্বিগ্ন। এমন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক অবস্থান এবং প্রতিক্রিয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। চলুন দেখে নেওয়া যাক, কে কোন পাশে দাঁড়িয়েছে এবং বর্তমান বৈশ্বিক অবস্থান কেমন।
ভারতের কূটনৈতিক পদক্ষেপ
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর ইতিমধ্যেই বিশ্বের ১০টি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ স্থাপন করেছেন। ভারত স্পষ্টভাবে জানিয়েছে যে পাকিস্তানের সীমান্ত পেরিয়ে পরিচালিত সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ নেওয়া তাদের অধিকার। আমেরিকা, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং ইতালির মতো দেশগুলোর সঙ্গে সক্রিয় আলোচনা চলছে। ভারত জানিয়ে দিয়েছে, পাকিস্তান যদি কোনো ধরনের উস্কানি দেয়, তাহলে তার উপযুক্ত জবাব দেওয়া হবে।
সব খবর মোবাইলে পেতে 👉🏻
Join Nowপাকিস্তানের আন্তর্জাতিক যোগাযোগ
পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সহায়তা চাইলেও ট্রাম্প প্রশাসন তা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। তবে, তুরস্ক ও আজারবাইজান পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে। তুরস্ক শুধু সমর্থনই নয়, সামরিক সহায়তাও দিচ্ছে, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।
আমেরিকার অবস্থান
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট জ্যান্ডি ভ্যান্স ভারত ও পাকিস্তানের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে পৃথকভাবে আলোচনা করেছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জানিয়ে দিয়েছে, তারা যুদ্ধের পক্ষে নয় এবং শান্তিপূর্ণ সংলাপের মাধ্যমে উত্তেজনা প্রশমনে সহায়তা করতে প্রস্তুত। তবে তারা সরাসরি কোনো পক্ষ নেয়নি এবং যুদ্ধ থামানোর বিষয়টি দুই দেশের উপরই ছেড়ে দিয়েছে।
ভারতের পাশে যে দেশগুলো
ইসরায়েল
ইসরায়েল ভারতকে সরাসরি সমর্থন করেছে। ইসরায়েলি রাষ্ট্রদূত রিউভেন আজার বলেন, “ভারতের আত্মরক্ষার অধিকারকে আমরা সমর্থন করি। যারা নিরীহ মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ করে, তারা পৃথিবীর কোথাও নিরাপদ থাকতে পারে না।”
নেপাল
নেপাল সরকারও ভারতের পাশে অবস্থান নিয়েছে। তারা স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, কোনো দেশের মাটিকে সন্ত্রাসবাদের জন্য ব্যবহার করতে দেওয়া উচিত নয়।
নরওয়ে
নরওয়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে ভারতের অবস্থানকে সমর্থন করেছেন। তিনি দুই দেশের মধ্যে সংযম ও কূটনৈতিক সমাধানের ওপর জোর দিয়েছেন।
ব্রাজিল
ব্রাজিলও সন্ত্রাসবাদের নিন্দা করেছে এবং পরোক্ষভাবে পাকিস্তানের সমালোচনা করে সংযম প্রদর্শনের আহ্বান জানিয়েছে।
তুরস্কের বিতর্কিত অবস্থান
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান পাকিস্তানকে ‘ভাই’ উল্লেখ করে যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। যদিও তিনি শান্তিপূর্ণ সমাধানের পক্ষে কথা বলেছেন, কিন্তু পাকিস্তানকে সামরিক সহায়তা দেওয়ার কারণে তুরস্কের অবস্থানকে “অকৃতজ্ঞ” বলেও অভিহিত করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক মহলে।
রাশিয়া ও চীন: নীরব কূটনীতি
বিশ্লেষকদের মতে, রাশিয়া ও চীনের ভূমিকা এই সংঘাতে নির্ণায়ক হতে পারে। তবে চীন এখনও পাকিস্তানকে সরাসরি সমর্থনের কোনো বিবৃতি দেয়নি, যা অনেকের কাছে বিস্ময়কর। অন্যদিকে, ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ব্যস্ত রাশিয়া এখনো ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখছে। সম্প্রতি মস্কোতে পুতিন ও শি জিনপিং-এর দ্বিপাক্ষিক বৈঠক এই প্রেক্ষাপটে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ।
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ পরিস্থিতি ক্রমেই জটিল হয়ে উঠছে। এই যুদ্ধ শুধুমাত্র দুটি দেশের মধ্যে নয়, বরং এর প্রভাব পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আন্তর্জাতিক সমর্থন, কূটনৈতিক চাপ ও শান্তি আলোচনাই এই উত্তেজনার অবসান ঘটাতে পারে। এখন দেখার বিষয়, এই সংঘাত শেষ পর্যন্ত কোন দিকে গড়ায়।