Trending

Video

Shorts

whatsapp [#128] Created with Sketch.

Join

Follow

করোনা লকডাউনের দিনগুলোতে অভিনব “বাঙালির গৌরব সপ্তাহ” পালন করল ‘ঐক্য বাংলা’

নিজস্ব সংবাদদাতা , কলকাতা: করোনা এখন মহামারীর আকার ধারণ করেছে। সকলে আতঙ্কিত। লকডাউনে দেশবাসীর দিন কাটছে। আত্মীয় - পরিজন - বন্ধু - বান্ধব - দৈনন্দিন কাজ-কর্ম থেকে দূরে থেকে মানুষ…

Avatar

নিজস্ব সংবাদদাতা , কলকাতা: করোনা এখন মহামারীর আকার ধারণ করেছে। সকলে আতঙ্কিত। লকডাউনে দেশবাসীর দিন কাটছে। আত্মীয় – পরিজন – বন্ধু – বান্ধব – দৈনন্দিন কাজ-কর্ম থেকে দূরে থেকে মানুষ বিমর্ষ, আতঙ্কিত। কিন্তু বাংলার প্রথম মুক্ত পন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন ঐক্য বাংলা মনে করে গৃহবন্দি থাকা এই দিনগুলোকে গঠনমূলকভাবে ব্যবহার করা যায়। আর এই উদ্দেশ্য নিয়েই ২২শে মার্চ থেকে ২৯শে মার্চ, বাংলায় লকডাউন এর প্রথম সপ্তাহে বাঙালির গৌরবের ইতিহাস মানুষের কাছে তুলে ধরতে ‘গৌরবসপ্তাহ’ কর্মসূচি পালন করল ‘ঐক্য বাংলা’।

#গৌরবসপ্তাহ কি ? ঐক্য বাংলা সংগঠনের প্রধান মুখ তথা সাধারণ সম্পাদিকা শ্রীমতি সুলগ্না দাশগুপ্ত জানান , ” বাঙালি তথা ভারতীয়দের মধ্যে একটা ধারণা আছে যে বাঙালির কৃতিত্ব মূলত শিল্প – সাহিত্য – সংস্কৃতি জগতে সীমাবদ্ধ। কিন্তু ক্রীড়া, বিজ্ঞান, চিকিৎসা জগৎ, এমনকি ব্যবসার জগত – জীবনের সমস্ত ক্ষেত্রে বাঙালির গৌরবময় ইতিহাস রয়েছে, যা নিয়ে অধিকাংশ বাঙালিই সচেতন নয়। অন্যদিকে কোন কোন ক্ষেত্রে অবাঙালি ব্যক্তিদের তুলনামূলক ভাবে অনেক কম মাপের কৃতিত্ব থাকলেও হিন্দি সাম্রাজ্যবাদী মিডিয়া র প্রচারের ফলে সেই কীর্তিকাহিনী গুলি আপামর ভারতবাসীর কাছে সুপরিচিত। অনেক সময় বলিউড ও এই প্রচারে গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়েছে। আমাদের উদ্দেশ্য ছিল যে বাণিজ্য থেকে ক্রীড়া, বিজ্ঞান থেকে চিকিৎসা – নানা ক্ষেত্রে বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কথা স্মৃতিচারণা করে বাঙালিকে এই বিষয়ে আরো সচেতন করা। একদিকে মহামারীর আতঙ্ক অপরদিকে গৃহবন্দি থাকা – সব মিলিয়ে নিরাশাময় এই দিনগুলোতে আমাদের জাতির মহাপুরুষদের সীমাহীন আত্মত্যাগ, তুলনাহীন বীর্য এবং জাতির ঐতিহ্যে অতুল অবদানের কথা মনে রেখেই আমাদের আশায় বুক বাঁধতে হবে।”

সব খবর মোবাইলে পেতে 👉🏻

Join Now

কিভাবে পালন করা হলো এই অভিনব কর্মসূচি, লকডাউন অবস্থাতে? ঐক্য যোদ্ধা দেবায়ন সিংহ জানান, “আমরা সরকারি নির্দেশনা কে সম্মান করি, সেজন্য টাকা তোলা, ত্রাণ বিতরণ ইত্যাদি কোনো অজুহাতে জমায়েত করার পক্ষপাতি নই। সেহেতু স্বাভাবিকভাবেই কর্মসূচিটি ছিল সম্পূর্ণ অনলাইন। এই এক সপ্তাহের প্রতিটি দিনের জন্য ছিল একটি আলাদা বিষয়। সেই বিষয়ের ওপর সারা দিন লেখা , ভিডিও, এবং ঐক্য যোদ্ধাদের করা লাইভের মাধ্যমে আমরা বিষয়টি বাঙ্গালী জনতার কাছে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি ।”

ঐক্যযোদ্ধা অভিজ্ঞান সাহা বললেন , “যে সব ক্ষেত্রে বাঙালির গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে কিন্তু আপামর বাঙালি সমাজ ততটা পরিমাণে ওয়াকিবহাল নয় , আমরা বেছে বেছে ঠিক সেই দিকগুলো তুলে ধরব বলে সিদ্ধান্ত নিই । সেই কারণেই – বিজ্ঞান , বাণিজ্য , চিকিৎসা , ক্রীড়া , মানভূম ভাষা আন্দোলন ও বঙ্গভঙ্গ বিষয় হিসেবে নির্ধারিত করা হয়েছে ।”

ঐক্য বাংলা তার এই গৌরবসপ্তাহ কর্মসূচির শুভ সূচনা করে “বিজ্ঞান জগতে বাঙালি” এই বিষয়ের ওপর। বাঙালি জাতির বিজ্ঞানজগতের নক্ষত্র রা – যেমন সত্যেন্দ্রনাথ বসু , মেঘনাদ সাহা, বা সাম্প্রতিক তর অমলকুমার রায়চৌধুরী ইত্যাদি বাঙালি বৈজ্ঞানিকদের ওপর আলোকপাত করেন ঐক্য যোদ্ধারা। এই প্রসঙ্গে ঐক্যযোদ্ধা রঞ্জন বলেন , ” হার্ড সায়েন্স যেরকম পদার্থবিজ্ঞানে বাঙালি জাতির যে এই গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস রয়েছে তা কতজন বাঙালি জানে ? সত্যেন্দ্রনাথ বসু , মেঘনাদ সাহা এদের কৃতিত্ব হার্ড সায়েন্স এ যুক্ত বাঙালি যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করতে সাহায্য করবে বলেই আমাদের ধারণা। “

অন্যতম বিষয় মানভূম ভাষা আন্দোলনের উপর বলতে গিয়ে ঐক‌্যযোদ্ধা রাজিত বাগ বলেন , “মানভূম ভাষা আন্দোলন হিন্দি আগ্রাসন ও বিহার রাজ্য সরকারের হিন্দি চাপিয়ে দেওয়ার যে ঘৃণ্য চক্রান্ত হয়েছিল তার বিরুদ্ধে যেভাবে আমাদের পূর্বপুরুষরা রুখে দাঁড়িয়ে অহিংসার মাধ্যমে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে তাদের দাবি দাওয়া আদায় করেছিলেন তা সত্যিই অনুপ্রেরণা দেয়।” চিকিৎসাবিজ্ঞানের তুলে ধরতে গিয়ে ঐক্য যোদ্ধা তানিয়ার সেনগুপ্ত বলেন, “কাদম্বিনী গাঙ্গুলী সেযুগে সমস্ত সামাজিক সমালোচনাকে তুচ্ছ করে একজন চিকিৎসক হিসেবে নিজের কাজে ব্রতী হতে পেরেছিলেন – সেটা বাঙালি ছাড়া অন্য কোন জাতিতে সম্ভব ছিল না। আজকের দিনে ও নারী স্বাধীনতা এবং নারীর অধিকারের দিক দিয়ে বাঙালি জাতি ভারতের অন্য সমস্ত জাতির থেকে অনেক বেশি এগিয়ে। পণপ্রথা, বধূহত্যা, বাল্যবিবাহ, কন্যা ভ্রুণ হত্যা ইত্যাদি সম্পর্কিত পরিসংখ্যান দেখলেই এটা স্পষ্ট বোঝা যায়।”

গৌরব সপ্তাহের আরেকটি বিষয় ছিল বঙ্গভঙ্গ। এই প্রসঙ্গে ঐক্যযোদ্ধা সৈকত পোদ্দারের গলায় ফুটে ওঠে ক্ষোভের আগুন , “যেভাবে বাংলাকে ভাগ করে বঞ্চিত করা হয়েছিল সেটা আমরা ভুলে গিয়েছি ‌‌‌। তৎকালীন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ক্লেমেন্ট এটলিও মনে করেছিলেন যে বাংলা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হবে , সেখানে সর্দার বল্লভভাই পাটেল সহ তৎকালীন কংগ্ৰেস হাই কম্যান্ড শরৎচন্দ্র বসুকে অপমান করে বাংলা ভাগের যে ঘৃণ্য চক্রান্ত করেছিল সেটা বাঙালির জানা কর্তব্য।”

কিন্তু বঙ্গভঙ্গ তো যন্ত্রণার কথা মনে করায়, তাহলে গৌরব সপ্তাহে এই বিষয়ে কেন? এই প্রসঙ্গে ঐক্যযোদ্ধা দেবায়ন সিংহ বলেন , ” বঙ্গভঙ্গ দুঃখের বিষয় হলেও যেভাবে তৎকালীন বাঙালি সমাজ এর প্রতিবাদে গর্জে উঠেছিল তা এক নজিরবিহীন গৌরবের ইতিহাস। বাঙালি মনীষীরা একজোট হয়ে ১৯০৫ এর বঙ্গভঙ্গের প্রথম প্রস্তাবের প্রতিবাদ করেছিলেন। পরবর্তীতে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন যেভাবে সমগ্ৰ ভারতবর্ষে ছড়িয়ে পড়েছিল তা কিন্তু এই বঙ্গভঙ্গ রোধের আন্দোলনের ফলেই।”

এছাড়াও ক্রীড়াজগতে বাঙালি, বাণিজ্য জগতে বাঙালি ইত্যাদি নানা বিষয় ছুঁয়ে যায় ঐক্য বাংলার এই সচেতনতা মূলক অভিনব কর্মসূচি টি।

সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া কেমন ছিল ? সুলগ্না দেবী জানান , “সমর্থকদের প্রতিক্রিয়া ছিল চোখে পড়ার মতো। প্রচুর বাঙালি আমাদের এই কর্মসূচিকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। মানুষ গৃহবন্দি এবং অবসাদগ্রস্ত থাকা অবস্থাতে এই অভিনব কর্মসূচি নেবার জন্য আমাদের ধন্যবাদ দিয়েছেন, এবং আগামী দিনেও এই ধরণের কর্মসূচি করার অনুরোধ জানিয়েছেন। “

এক্রোপোলিস মলে সৌম্যদীপ শিকদারের হেনস্থার প্রতিবাদ থেকে কেরলে বাঙালি শ্রমিককে নিগ্ৰহের প্রতিবাদ এর পাশাপাশি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সপ্তাহ ইত্যাদি বিভিন্ন স্বাদের কর্মসূচি করে বাঙালি সমাজের মধ্যে সাড়া ফেলতে শুরু করে দিয়ে দিয়েছে বাংলার সর্বপ্রথম মুক্তপন্থী বাঙালি জাতীয়তাবাদী সংগঠন ঐক্য বাংলা। আশা করা যায় আগামী দিনেও তারা বাঙালির হৃদয় এ আত্মগৌরব জাগরিত করতে পারবে, এবং আমাদের জাতিকে আমাদের অধিকার অর্জনের লড়াইতে এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

About Author