খেলানিউজফুটবল

ফুটবলের রাজপুত্রের কি যাওয়ার একটু বেশি তাড়া ছিল?

Advertisement
Advertisement

সবে তো মাত্র তিন কুড়ি, রাজপুত্র, একটু কি বেশিই তাড়া ছিল যাওয়ার? বিশ্বের অগণিত তোমার ভক্তগণেরা যে আজ সম্বলহীন হয়ে পড়লেন। একবারও কি ফিরে তাকাবেন না তাদের দিকে? মাঠ ছাড়লেও, ফুটবলের সম্রাট তোমাকে চোখের জলে বিদায় দিতে যে মন চায় না। কোভিড মহামারিতে সকলেই জীবন যুদ্ধের এক একজন সৈনিক। যিনি বিশ্বকাপে একা মাঠে থেকে আর্জেন্টিনাকে জিতিয়ে দিয়ে ছিল শুধু ড্রিবলিং-এর জাদুতে। মাঠের সেই ড্রিবলিং জাদু এত তাড়াতাড়ি জীবন যুদ্ধে শেষ হয়ে গেল কেন দিয়েগো?

Advertisement
Advertisement

ফুটবল সাম্রাজ্য থেকে তো আগেই বিদায় নিয়ে ছিলেন পিকে, চুনী গোস্বামী, এবার সেই নামের পাশে যোগ হল ফুটবলের সম্রাট দিয়েগো মারাদোনার। মাঠে ও মাঠের বাইরে এক বর্ণময় চরিত্র। অসংযত জীবন ও অত্যাধিক মদ্যপান শরীরের ক্ষতি করছে, সেটা চিকিৎসকেরা বার বার জানালেও, সে কথা কানে তোলেননি রাজপুত্র। কখনো ড্রাগের নেশায় নাম জড়িয়েছে তাঁর। তবু তিনি অবিচল, নিয়মের বেড়াজালের বাইরে উন্মুক্ত।

Advertisement

১৯৮৬ সালে মেক্সিকোর বিশ্বকাপ দেখেছিল মারাদোনাকে। বাঁ–পায়ের শিল্পে আলোড়িত হয়েছিল বিশ্ব। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে আটজন ফুটবলারকে কাটিয়ে গোল করে ছিলেন। সেই ম্যাচই বিখ্যাত হয়ে আছে ‘‌হ্যান্ড অফ গড’‌ এর জন্য। যখন কলকাতায় এসে ছিলেন, আপন করে নিয়েছিলেন এই শহরের প্রতিটা মানুষকে। ২০০৮ সালে মহেশতলায় এক অনুষ্ঠানে গিয়ে বলেছিলেন, ‘‌এখান থেকে আমার বাড়ি অনেক অনেক দূরে। কিন্তু এই শহরেও আমার প্রতি এত ভালবাসা দেখে আমি মুগ্ধ, বিস্মিত।

Advertisement
Advertisement

কথা দিচ্ছি ফের আসব এই কলকাতায়।’‌ ব্ল্যাক ২০২০। তোমাকে ধিক্কার। যদিও তারপর ২০১৭ সালে একবার এসে ছিলেন কলকাতায়। এখনও ‘ছিলেন’ শব্দটা লিখতে গিয়ে থেমে যাচ্ছে পেন, কিন্তু সত্যকে মানতেই হচ্ছে বুকে পাথর চেপে। ১৯৬০ সালের ৩০শে অক্টোবর তাঁর জন্ম হয় বুয়েনস আয়ার্সে। মৃত্যুও সেখানেই। দেশের হয়ে ৯১টি ম্যাচে করেছেন ৩৪টি গোল। ১৯৮৬’র বিশ্বকাপে সেরা ফুটবলারের সম্মান পেয়ে ছিলেন তিনি। তুমি নিরবে চলে গিয়েও যে চির অমর অগণিত ভক্তদের মন মন্দিরে।

১৯৯০ সালের বিশ্বকাপে ফাইনালে নিয়ে গিয়ে ছিলেন আর্জেন্টিনাকে। কিন্তু ফাইনালে পশ্চিম জার্মানির কাছে হারের পর কাঁদতে কাঁদতে মাঠ ছেড়ে ছিলেন। দিয়েগো মারাদোনার প্রয়াণের খবর পেয়ে পেলে বললেন, ‘বন্ধুর এভাবে চলে যাওয়া মেনে নেওয়া বড় কষ্টকর।‌ আমি নিশ্চিত, একদিন আকাশের মাঠে দু’‌জনে একসঙ্গে বলে লাথি মারব।’ টুইটারে ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো বললেন, ‘‌আজ আমি আমার বন্ধুকে বিদায় জানাচ্ছি আর গোটা বিশ্ব বিদায় জানাচ্ছে একজন কিংবদন্তিকে।

শেষ বিদায় একজন ম্যাজিশিয়ানকে। শ্রেষ্ঠদের মধ্যে একজন। তবে খুব তাড়াতাড়ি চলে গেলেন উনি। এই শূন্যতা আর কোনওদিন পূরণ হবে না। শান্তিতে থাকুন। সব সময়ে মনে থেকে যাবেন আপনি।’ টুইটে মারাদোনাকে শেষ শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সৌরভ গাঙ্গুলি, রাহুল গান্ধী প্রমুখ। কিংবদন্তির প্রয়াণে শোকাহত সবাই। সৌরভ গাঙ্গুলি টুইটারে লেখেন, ‘‌আমার হিরো আর নেই। আমার পাগল জিনিয়াস, প্রতিভাধর তুমি শান্তিতে থাকো। তোমার জন্যই ফুটবল দেখতাম আমি।’‌ তিনি যে ফুটবলের ঈশ্বর।

পায়ের জাদুতে মুগ্ধ করেছেন গোটা বিশ্বকে। শুধু তো ফুটবলার হিসেবে নয়, কোচ হিসেবেও তিনি উজাড় করে দিয়েছিলেন নিজেকে। কিন্তু প্রত্যাশিত সাফল্য পাননি। মহামারী, জীবন সংগ্রাম, অর্থাভাব, অনাহারে মাঝে ঝরে পড়তে থাকা এক একটা নক্ষত্ররা। জীবনের ছন্দ পতন হয়ত এইভাবেই হয়। কিন্তু এভাবে চলে যাওয়ার তো কথা ছিল না রাজপুত্রের। ভারতে অগণিত তোমার ভক্তরা আজ হয়ত অনিদ্রায় রাত কাটাবে বা নীরবে বালিশ ভিজিয়ে ঘুম দেশে ঢুলে পড়বে। তবে প্রত্যেকের প্রার্থনা থাকবে একটাই, যেখানেই থেকো, ভালো থেকো এবং শান্তিতে থেকো রাজপুত্র।

Advertisement

Related Articles

Back to top button