হাসপাতালের বিছানায় ‘চুপকে চুপকে’ দেখে ধর্মেন্দ্রর প্রেমে পড়লেন শর্মিলা

Advertisement

Advertisement

অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুর ( sharmila tagore) রাজকীয় আভিজাত‍্য ও শক্তিশালী অভিনয়ের সংমিশ্রণ। সেই কবে পাথুরিয়াঘাটা ঠাকুরবাড়ীর শ‍্যামলা মেয়েটিকে পরিচালক সত্যজিৎ রায় আবিষ্কার করেছিলেন ‘অপর্ণা’ রূপে। বহু টানাপোড়েনের পর ঠাকুরবাড়ীর মেয়ে অভিনয়ের অনুমতি পেয়েছিলেন। ‘অপুর সংসার’-এর আটপৌরে অপর্ণা তৈরী করেছিল ইতিহাস। পরবর্তীকালে মুম্বই চলে যান শর্মিলা। বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে একের পর এক হিট দিতে দিতে সফলতম অভিনেত্রী শর্মিলা প্রেমে পড়ে যান ভারতীয় ক্রিকেটার মনসুর আলি খান পতৌদি (Mansoor ali kha pataudi)-এর। সেই সময় ক্রিকেট মাঠ কাঁপাচ্ছেন গোয়ালিয়রের পতৌদি পরিবারের এই রাজপুত্র। ক্রিকেটমহল তাঁর নতুন নাম দিয়েছে ‘টাইগার'(Tiger)।

Advertisement

শর্মিলা ও টাইগারের প্রেম ছিল বহুলচর্চিত। সফল ফিল্ম অভিনেত্রী ও সফল ক্রিকেটারের প্রেম সেই প্রথম দেখেছিল ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ও ভারতীয় ক্রিকেট মহল। কিন্তু বাধা এসেছিল ঠাকুরবাড়ী থেকে। এমনকি গোয়ালিয়র পতৌদি পরিবারেও মুসলমান মেয়ের বৌ হয়ে আসাই ছিল রীতি। কিন্তু শর্মিলা অনায়াসেই এই কাঁটাতার পেরিয়ে গিয়েছিলেন। দুই পরিবারকেই শর্মিলা জানিয়ে দিয়েছিলেন, মুসলমান ধর্ম গ্রহণ করে বিয়ে করবেন তিনি। কিন্তু এর মধ্যেই বলিউড ও শর্মিলার অনুরাগীদের মধ্যে ঝড় ওঠে। বিয়ের কিছুদিন আগে বিখ্যাত একটি ফিল্ম ম্যাগাজিনের জন্য সুইমিং কস্টিউম পরে শুট করেছিলেন শর্মিলা। শর্মিলার সেই ছবি প্রকাশ্যে আসতেই সমালোচনা শুরু হয়। বলিউডের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা এবং শর্মিলার অনুরাগীরা আশঙ্কা করেছিলেন, শর্মিলার সঙ্গে টাইগারের বিয়ে মনে হয় আর হলো না। এমনকি এই শুটটি করার সময় ফটোগ্রাফারও ভেবে দেখতে বলেছিলেন শর্মিলাকে। কিন্তু শর্মিলা পেশাদারিত্বের সঙ্গে শুট করেছিলেন।

Advertisement

কিন্তু আধুনিক মনোভাব সম্পন্ন টাইগার বুঝেছিলেন শর্মিলার পেশাদারিত্বকে। প্রকৃতপক্ষে তিনিও ছিলেন শর্মিলার ফ্যান। টাইগারের মা বেগম সাজিদা সুলতান (sajida sultan)ও ছিলেন যথেষ্ট আধুনিক। একসময় স্বামীর অবর্তমানে তিনিই চালনা করেছিলেন পতৌদি রাজবংশের যাবতীয় কার্যকলাপ। তিনি সমর্থন করেছিলেন শর্মিলাকে। এই ঘটনার কিছুদিন পরেই ঠাকুরবাড়ীর মেয়ে শর্মিলা নিজের ধর্ম পরিবর্তন করে ‘আয়েশা বেগম’(Ayesha Begum) নাম নিয়ে শাশুড়ি সাজিদা বেগমের ঐতিহ্যশালী বিয়ের পোশাক পরে ‘নিকাহ’ করেছিলেন টাইগারকে। পতৌদি প‍্যালেসে শুরু হয়েছিল এক নতুন অধ্যায়। পরবর্তীকালে করিনা কপূর খান (kareena Kapoor khan) তাঁর শাশুড়ি শর্মিলার সন্মন্ধে একটি সাক্ষাৎকারে বলেন, তিনিও ছুটি কাটাতে গিয়ে শর্মিলার সামনে বিকিনি পরেছেন। শর্মিলা কোনোদিন করিনার কোনো স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করেননি। করিনাও তাঁর বিয়ের দিন সাজিদা বেগমের বিয়ের পোশাকটি পরেছিলেন।

Advertisement

সম্প্রতি ‘লেডিজ স্টাডি গ্রুপ’-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে শর্মিলা বলেছেন, কিছুদিন আগে তাঁর অস্ত্রোপচার হয়েছিল। ফলে হাসপাতালে বেশ কিছুদিন থাকতে হয়েছিল তাঁকে। সেই সময় হাসপাতালের বিছানায় বসে নিজের ল্যাপটপে ‘চুপকে চুপকে’ দেখে নতুন করে আবারও ধর্মেন্দ্র (Dharmendra)-এর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলেন শর্মিলা। বহুদিন পরে ‘চুপকে চুপকে’ দেখে খুব মজা পেয়েছেন শর্মিলা। ‘চুপকে চুপকে’-এর পরিচালক ছিলেন হৃষিকেশ মুখার্জি (Hrishikesh mukherjee)। ফিল্মটি মুক্তি পেয়েছিল 1975 সালে। ধর্মেন্দ্র ও শর্মিলা ছাড়াও এই ফিল্মে অভিনয় করেছিলেন ওম প্রকাশ (om prakash), অমিতাভ বচ্চন (Amitabh bachchan), জয়া বচ্চন (Jaya Bachchan), আসরানি (Asrani) প্রমুখ শিল্পী। ‘চুপকে চুপকে’-র কয়েকটি দৃশ্যের শুটিং হয়েছিল অমিতাভ বচ্চনের বাংলো ‘প্রতীক্ষা’য়। ‘চুপকে চুপকে’ ছিল সুপারহিট ফিল্ম। ‘চুপকে চুপকে’-র স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে শর্মিলা বলেন, হৃষিকেশের সঙ্গে কাজ করা ছিল একটা পিকনিক করার মতো। হৃষিকেশ নিজে খুব ভালো দাবা খেলতেন এবং বিভিন্ন জোকস বলে সেট মাতিয়ে রাখতেন। প্রত্যেকে হৃষিকেশকে শ্রদ্ধা করতেন। তবে সবাই সময়মত সেটে আসতেন বলে জানিয়েছেন শর্মিলা। কিন্তু সবচেয়ে পাংচুয়াল ছিলেন অমিতাভ। সকাল সাতটায় কল টাইম থাকলে ছ’টার মধ্যে সেটে পৌঁছে যেতেন অমিতাভ। অমিতাভ রাতে ঘুমোতেন কিনা, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ প্রকাশ করতেন সবাই।