কৌশিক পোল্ল্যে: পৃথিবীর বুকে আজও বেঁচে রয়েছে বেশ কিছু প্রাচীন মানব উপজাতি তাদেরই মধ্যে একটি আদিম মানব প্রজাতি বর্তমানে গোটা বিশ্বের কাছে ‘পিগমি’ নামে পরিচিত। এদের একঝলক দেখলে আপনার মনে হবে যেন শত শতাব্দী পিছিয়ে রয়েছে এই জনজাতির জীবনযাপন। এদের নিত্যদিনের জীবনযাত্রা সেই প্রাচীন যুগের মানুষদের মতোই। এই আদিম উপজাতির সংঘর্ষে ভরা জীবনকাহিনী সম্পর্কে চলুন দু চার কথা জেনে নেওয়া যাক।
পিগমি শব্দটির উৎপত্তি গ্রিক ভাষা থেকে এর অর্থ কনুইয়ের নীচে। অর্থাৎ সাধারন মানুষদের তুলনায় এরা দৈর্ঘ্যে খুবই খাটো হন, যে কারনে এমন অভিধান। যদিও এই জনজাতি নিজেদের ‘বা’ হিসেবে পরিচয় দেন, তাদের ভাষায় এই শব্দের অর্থ মানুষ। ঘোর কৃষ্ণবর্নের এই মানব প্রজাতি আফ্রিকার কঙ্গো অববাহিকা সহ পাপুয়া নিউগিনি, অস্ট্রেলিয়া, ফিলিপাইন ও ভারতের আন্দামানেও বসবাস করেন। সভ্যতার আলোকে এই জনজাতি প্রায় বিলুপ্তির পথে, গোটা বিশ্বে এদের জনসংখ্যা এক লক্ষেরও কম।
সব খবর মোবাইলে পেতে 👉🏻
Join Now
এরা সাধারনত যাযাবর প্রজাতি, বনে জঙ্গলে অস্থায়ীভাবে বাসা তৈরি করে এরা বসবাস করে, বনের ফলমূল এদের প্রধান খাদ্য। কোনো স্থানে খাদ্যের রসদ শেষ হলে এরা স্থান পরিত্যাগ করে অন্যত্র গমন করেন। এরা সাধারনত গোষ্ঠীবদ্ধভাবে বসবাস করেন এবং সংগ্রহ করা খাবার সকলে মিলে ভাগ করে খান।
এই আদিম জনজাতির মানবরা হিংস্র নন বরং এরা খুব শান্ত প্রকৃতির। সভ্যতা ও আধুনিকতার আলো না পৌঁছোনোয় এরা অতিরিক্ত মাত্রায় কুসংস্কারাচ্ছন্ন। বন্যপ্রাণী শিকার করতে যাবার পূর্বে এরা নিজস্ব দেবতার পুজো করে তাকে তুষ্ট করে তবেই শিকারে বের হন। পশু শিকারে পিগমি জাতির নারী ও পুরুষ উভয়েই সমান দক্ষ।
গ্রামীন জনজীবনের মতো পরিচালনার নিমিত্তে এদের একজন দলপতি থাকেন, তিনিই সমগ্র দলটিকে চালনা করেন। উৎসব ও আচার অনুষ্ঠানে পিগমি জাতি বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে সকলে মিলে একসঙ্গে নৃত্য পরিবেশন করেন। গাছের পাতা দিয়েই এরা নিজেদের পোশাক তৈরি করেন এবং পুরুষদের শরীরের উপরের অংশ নগ্ন থাকে।
ইতালি, জাপান ও পোর্তুগালের মতো বেশ কিছু প্রভাবশালী দেশ আফ্রিকার এই আদিম মানব উপজাতির জীবন বিপন্ন করে তাদের ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছেন যদিও সংঘর্ষ করেই বেঁচে রয়েছেন পিগমি উপজাতির একদল মানুষ। কিন্তু বনেজঙ্গলে কতদিন তারা টিকে থাকবেন মানব জাতির আদিম সভ্যতার নির্দশন হয়ে সেই প্রশ্ন তো থেকেই যায়।