বোধন এর আগেই বিসর্জন, কুমোরটুলিতে ভেসে যাচ্ছে প্লাস্টিকে মোড়া দুর্গা প্রতিমা

Advertisement

Advertisement

শ্রেয়া চ্যাটার্জি – বছরটা শুরু হয়েছে করোনা ভাইরাস নামে এক মরন ভাইরাসের থাবা দিয়ে। ইংরেজি নববর্ষ কোনরকম ভাবে কাটালেও বাংলা নববর্ষ কেটেছে ঘরে বসে। তারপরে কেটে গেছে গেছে ২৫ শে বৈশাখ, সেদিনও ঘরে বসেই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে রবি ঠাকুরের আরাধনা। লকডাউনে মানুষ গৃহবন্দী। তার মধ্যে পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যায় থাবা বসালো ঘূর্ণিঝড়। যে সে ঘূর্ণিঝড় নয়, বহুদিন পরে কলকাতার উপর দিয়ে বয়ে গেল প্রায় ১৩০ কিলোমিটার বেগে ঝোড়ো হাওয়া।

Advertisement

আতঙ্কের মানুষ, মনখারাপের মানুষ সকলেই গৃহবন্দী। ভেসে গেছে সম্পত্তি, ভেসে গেছে বাড়ি ঘর। বহুদিন পরে কলকাতা এমন ভয়ঙ্কর ঝড়ের মুখোমুখি। আয়লার থেকেও এ ছিল মারাত্মক। উপকূলবর্তী এলাকার মানুষের ঝড়ের অভিজ্ঞতা আগেও রয়েছে, তারা খানিকটা মানসিকভাবে অভ্যস্ত। প্রতিবছরই তাদের এমন ঝড়ের সামনা সামনি হতে হয়। কিন্তু কলকাতার মানুষ অনেকদিন পরে এমন ভয়ঙ্কর ঝড়ের সামনে পড়লেন। গাছ উপড়ে গিয়ে ক্ষতি হয়েছে বহু মানুষের। মৃত্যু হয়েছে অনেকের।

Advertisement

সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে আরেকটি ছবি ঘুরপাক খাচ্ছে কুমোরটুলিতে ভেসে যাচ্ছে দুর্গাপ্রতিমা। ঠিক যেন মনে হচ্ছে গতকাল ছিল বিজয়া দশমী। প্রতিমা বিসর্জন দেওয়া হচ্ছে গঙ্গা নদীতে। এবারে করোনা দৌলতে পুজো কতটা মানুষ উপভোগ করতে পারবে, তা কারো জানা নেই, কুমোরটুলিতে একটু একটু করে শুরু হয়েছিল প্রতিমা তৈরীর কাজ। কিন্তু আমফান এসে সব ভেসতে দিল। দুর্গা প্রতিমা ভাসছে জলের মধ্যে। ছবিটি দেখে বোঝা যাচ্ছিল কেউ যেন তাকে প্লাস্টিক দিয়ে মুড়িয়ে তাকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর তিনি বাঁচাতে পারেননি।

Advertisement

প্লাস্টিকে মোড়া দুর্গাপ্রতিমা জলের মধ্যে পড়ে অসময় বিসর্জনের বাজনা বাজিয়ে তুলেছে। এমনিতে বাঙালির মন খারাপ। প্রত্যেকটা অনুষ্ঠান এইভাবে করোনার জন্য বাড়িতে বসে পালন করা হচ্ছে, তারপরে বাঙালির দুর্গাপূজা যে আদৌ বাঙালি কতটা উপভোগ করতে পারবে তা তারা নিজেরাও জানেনা, তার মাঝে এমন বিপদ। কুমোরটুলি যখন একটু একটু করে নিজেকে সাজিয়ে গুছিয়ে নিয়ে তৈরি হচ্ছিল দুর্গাপ্রতিমা বানাবে বলে, সেই মুহূর্তে এমন চরম বিপদ। আসলে প্রকৃতির তান্ডবলীলার কাছে মানুষ বড় অসহায়। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্প এইসবের ক্ষয়ক্ষতির পর দেখা যায় সেই ক্ষতির কঙ্কালসার দেহ। যা দাড়িয়ে দাড়িয়ে দেখা ছাড়া মানুষের আর কোন উপায় থাকেনা।