প্লাস্টিকের খোলস, কালো-সাদা স্ক্রিন আর ঝড়ের মতো টিকে থাকা ব্যাটারি—হ্যাঁ, এটাই সেই নোকিয়া 1100, যা একসময়ে কোটি কোটি মানুষের জীবন বদলে দিয়েছিল। পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া মোবাইল ফোনের তালিকায় এখনও এই মডেলের নাম শীর্ষে, বিক্রি হয়েছিল ২৫ কোটিরও বেশি ইউনিট।
মজবুত নকশা ও দৈনন্দিন ব্যবহার
২০০৩ সালে বাজারে আসা এই ফোনের মাপ ছিল ছোট্ট—১০৬×৪৬×২০ মিমি, ওজন মাত্র ৮৬ গ্রাম। নন-স্লিপ রাবার গ্রিপ, ধুলো প্রতিরোধক ফ্রন্ট এবং মজবুত বডির জন্য এটি সহজেই পড়ে যাওয়ার ধাক্কা সামলাতে পারত। সঙ্গে ছিল এক্সপ্রেস-অন কাভার, যাতে ব্যবহারকারীরা লাইট ব্লু, অরেঞ্জ, রেড বা ইয়েলোর মতো রঙে ফোনকে সাজাতে পারতেন। সবচেয়ে কার্যকর ফিচার ছিল বিল্ট-ইন ফ্ল্যাশলাইট, যা গ্রামীণ এলাকায় বিশেষভাবে জনপ্রিয় হয়েছিল।
সব খবর মোবাইলে পেতে 👉🏻
Join Nowস্ক্রিন ও সফটওয়্যার
ফোনটিতে ছিল ৯৬×৬৫ পিক্সেলের মনোক্রোম ডিসপ্লে, যেখানে চার লাইনের টেক্সট দেখা যেত। নোকিয়ার সিরিজ ৩০ সফটওয়্যার চালিত এই হ্যান্ডসেটে কল, এসএমএস, অ্যালার্ম, রিমাইন্ডার সবই পাওয়া যেত। মেমোরি সীমিত হলেও (৫০ কন্ট্যাক্ট ও ৫০ এসএমএস) নির্ভরযোগ্যতায় কোনও ঘাটতি ছিল না। বিনোদনের জন্য থাকত ক্লাসিক Snake II ও Space Impact+ গেম।
ব্যাটারির কিংবদন্তি
নোকিয়া 1100–এর সবচেয়ে বড় শক্তি ছিল এর ব্যাটারি। ৮৫০ mAh–এর BL-5C ব্যাটারি একবার চার্জে ৭–১০ দিন চলত। অফিশিয়ালি ৪০০ ঘণ্টা স্ট্যান্ডবাই ও ৪.৫ ঘণ্টা টকটাইম অফার করত। বিদ্যুৎ সমস্যায় জর্জরিত অঞ্চলে এটাই হয়ে উঠেছিল নির্ভরযোগ্য সঙ্গী।
সীমাবদ্ধতা ও প্রয়োজনীয় ফিচার
ক্যামেরা, ইন্টারনেট বা মাল্টিমিডিয়া কোনও কিছুই ছিল না। বরং ফোনটি কেবলমাত্র জরুরি ফিচারে সীমাবদ্ধ ছিল—
জিএসএম কলিং ও এসএমএস
ফ্ল্যাশলাইট
অ্যালার্ম, ক্যালকুলেটর, স্টপওয়াচ
৩৬টি প্রিলোডেড মনোফোনিক রিংটোন ও ৭টি কাস্টম টোন
এর সরলতা ও নির্ভরযোগ্যতাই ছিল জনপ্রিয়তার আসল কারণ।
দাম ও প্রাপ্যতা
লঞ্চের সময় ভারতে এর দাম ছিল প্রায় ৫,০০০। বর্তমানে রিফার্বিশড ইউনিট পাওয়া যায় ৮৫০–১,২০০ টাকায়, যদিও পার্টস সহজলভ্য নয়। কালেক্টর এবং নস্টালজিক ব্যবহারকারীরা এখনও এটিকে ব্যাকআপ ফোন হিসেবে ব্যবহার করেন।