অফবিট

মহামারীতে বারবার আক্রান্ত হয়েছে ভারত, আগেও কিভাবে কাটিয়ে উঠেছে আমাদের ভারত?

×
Advertisement

শ্রেয়া চ্যাটার্জি : সারা বিশ্বে তো বটেই ভারতবর্ষ বারবার আক্রান্ত হয়েছে মহামারীর কবলে। বারবার মারা গেছে কোটি কোটি মানুষ। ১৯১৮ সালে যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শেষ হয় তখন পৃথিবীর লোক সংখ্যা ছিল ১৮০ থেকে ১৯০ কোটির মধ্যে। তার মধ্যে ৫০ কোটি লোক আক্রান্ত হয়েছিল। ইনফ্লুয়েঞ্জায় মারা গিয়েছিল ৫ থেকে ১০ কোটি মানুষ। মানুষের ইতিহাসে অত বড় মহামারী কখনো দেখা যায়নি। ভারতে তথা কলকাতাতেও ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারীর বর্ণনা পাওয়া যায়। সেইবার ভারতবর্ষে মারা গিয়েছিলেন প্রায় ৮০ লক্ষ মানুষ কলকাতাতেও মারা যায় অনেকে। শ্মশানে জায়গা হচ্ছিল না এতটাই ছিল শবদেহের পরিমাণ। গঙ্গার পাড়ে আধ মাইল জুড়ে মড়ার খাট গুলি রাখা ছিল। এই পরিস্থিতির মধ্যে কলকাতায় যুদ্ধ জয়ের উৎসব করেছিল ইংরেজ সরকার। এসময় শ্যামবাজারের ঘাটে পোড়ানো হয়েছিল সেই আমলের লক্ষ টাকার বিলাতি আতশবাজি। কলকাতা শহরের আগে কোনদিন এত লাশ ও একই সাথে এত আতশবাজি দেখেনি। যে সেই আনন্দে আতশবাজি জ্বালানো হয়।

Advertisements
Advertisement

১৯১৫ থেকে ১৯২৬ এনসেফালাইটিস : ১৯১৫ থেকে ১৯২৬ এরমধ্যে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল এনসেফালাইটিস লেথার্জিকা। এটি একটি মারাত্মক সংক্রামক ব্যাধি ছিল। স্নায়ুতন্ত্রকে আক্রমণ করেছিল এটি। এই রোগের প্রধান বৈশিষ্ট্য উদাসীনতা। হতাশা, অলসতা বৃদ্ধি করা। এটি অনুনাসিক এবং মৌখিক লালা ক্ষরণ এর মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এনসেফ্যালাইটিস। ইউরোপে মহামারি আকারে ছিল, তবে ভারতেও বিক্ষিপ্ত জায়গায় এর প্রভাব বিস্তার করেছিল।

Advertisements

১৯১৮ থেকে ১৯২০ স্প্যানিশ ফ্লু : বিশ্ব যখন এখনো এনসেফ্যালাইটিস লেথার্জিকার সাথে লড়াই করছিল তখন একটি নতুন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে তা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতে ভারতীয় সৈন্য যারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধে অংশ নিয়েছিল তারা ছিলেন এই রোগের বাহক।

Advertisements
Advertisement

১৯৬৮ কলেরা মহামারী : ১৮১৭ সাল থেকে কলেরা বিশ্বব্যাপী সাতটি কলেরা মহামারী সৃষ্টি করেছিল। ৫ বছরের সময় কালের মধ্যেই ভাইরাস এশিয়া অঞ্চলে সেখান থেকে এটি বাংলাদেশ এবং পরবর্তীকালে ভারতে এসে পৌঁছয়। কলকাতায় জলের স্যানিটেশনের দুর্বলতাই ভারতে কলেরা মহামারী কেন্দ্রস্থল করে তুলেছিল।

১৯৬৮ থেকে ১৯৬৯ ফ্লু মহামারী : ১৯৬৮ সালে ফ্লু সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের কারণে হয়েছিল এবং দুই মাসের মধ্যে এটি ভারতে পৌঁছয়। ভিয়েতনাম যুদ্ধের পরে ভিয়েতনাম থেকে ফিরে আসা আমেরিকান সৈন্যরা আমেরিকাতে এই ভাইরাস ছড়াতে শুরু করে।

১৯৭৪ গুটি মহামারী : বিশ্বের অন্যান্য অংশের তুলনায় এটি আরও ভাইরাল হয়েছিল ভারতে। এই উদ্বেগজনক পরিস্থিতি মুক্তি পেতে এক জাতীয় স্মার্ট নির্মূল কর্মসূচি চালু করলেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল পেতে ব্যর্থ হয়। এই পরিস্থিতিতে ভারতকে সহায়তা করার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের সাথে w.h.o. ও ভারতেও কিছু চিকিৎসা সহায়তা প্রেরণ করেছিল। অবশেষে এই সালের মার্চ মাসে ভারত গুটিপোকা থেকে মুক্ত হয়।

২০০২ থেকে ২০০৪ সারস : একবিংশ শতাব্দীর পরে সর্বপ্রথম মারাত্মক রোগ যা একজনের থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে সংক্রমণ হয়। এটি একটি তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণ জনিত রোগ। এস এ আর এস এর কারণটি সার্ভিস কোবা নামক এই ভাইরাসটি ঘনঘন পরিবর্তনের জন্য পরিচিত ছিল, এটি একজনের থেকে অন্য ব্যক্তির কাছে এবং কাশি এবং হাঁচির মাধ্যমে সংক্রমণ যোগ্য ছিল।

২০০৬ ডেঙ্গু এবং চিকনগুনিয়া প্রাদুর্ভাব : ডেঙ্গু এবং চিকনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব মশাবাহিত সাধারণ রোগ এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে জলের স্থবিরতা এবং মশার জন্য বংশ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে সরবরাহ করেছিল এটি ভারতজুড়ে মানুষকে প্রভাবিত করে।

২০০৯ গুজরাট হেপাটাইটিস প্রাদুর্ভাব : ২০০৯ সালের ফেব্রুয়ারীতে গুজরাটে অনেক লোক হেপাটাইটিস বি’তে সংক্রামিত হয়েছিল সংক্রমিত রক্ত এবং শরীরের অন্যান্য তরল সংক্রমণের কারণে হয়। গুজরাটের স্থানীয় চিকিৎসকরা দূষিত এবং ব্যবহৃত সিরিঞ্জ দিয়ে এটি ঘটানোর বিষয়ে সন্দেহ করেছিলেন।

২০১৪ থেকে ২০১৫ ওড়িশা জন্ডিস প্রাদুর্ভাব : ওড়িশা ২০১৪ সালের সেপ্টেম্বরে জন্ডিসের প্রকোপ দেখেছিল এবং এর মূল কারণটি ছিল দূষিত জল বলে সন্দেহ করা হয়। প্রতিবেদন অনুসারে ড্রেনের জল পানীয় জলের পাইপ লাইনের মধ্যে ঢুকে পড়েছিল এবং যেটি পান করা ছিল শরীরের জন্য যথেষ্ট অস্বাস্থ্যকর।

২০১৪ থেকে ২০১৫ সোয়াইন ফ্লু’র প্রাদুর্ভাব : ২০১৪ বছরের শেষ মাস গুলিতে এইচআইভি ভাইরাস রিপোর্ট বাড়তে শুরু করে। এক ধরনের ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ২০১৪ সালে গুজরাট, রাজস্থান, তেলেঙ্গানা ভাইরাসের কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

২০১৮ সালে নিপা ভাইরাস : মে মাসে, ২০১৮ সাল কেরালায় বাদুড় দ্বারা সৃষ্ট এই সংক্রমনের খবর পাওয়া যায়। ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার কয়েক দিনের মধ্যেই রাজ্য সরকার ভাইরাসের বিস্তার করার লক্ষ্যে বিভিন্ন সুরক্ষা ব্যবস্থা কার্যকর করেছিল। প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার কারণে জুন মাসের মধ্যে কেরালার মধ্যে একে নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়।

২০২০ করোনাভাইরাস : এই ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব থেকে আমরা এখনো বেঁচে উঠতে পারিনি। এর মূল উৎস স্থল চীনের উহান শহর। কিন্তু চীন থেকে এটি গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে। চীন এখন খানিকটা সামলে উঠতে পারলেও, ভারতের কিন্তু ভয়ঙ্কর অবস্থা দিয়ে আমরা এখনো পেরিয়ে চলেছি। কিভাবে এই অবস্থা থেকে নিস্তার পাওয়া যাবে তা এখনো পর্যন্ত জানা নেই। ভারতের মানুষ কার্যত গৃহবন্দি। ইতালির অবস্থা সবচেয়ে করুন।

বারবার মহামারীর প্রাদুর্ভাব শুধুমাত্র ভারতবর্ষ না গোটা বিশ্বকে টলমল করে দিয়েছে। মহামারী ঈশ্বরের কৃপায় একদিন না একদিন শেষ হয়ে যাবে, কিন্তু এর ফলে যে ক্ষয়ক্ষতি হলো তা কাটিয়ে উঠতে পারবে তো বিশ্ব! এই প্রশ্নে এখন প্রত্যেকের কপালে ভাঁজ পড়েছে। কত মানুষের মৃত্যু হয়েছে সেখানে কতজন আছে চাষী, শ্রমিক। এদের মৃত্যুর পরে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙে পড়বে না তো? এই প্রশ্নের উত্তরই হয়তো এখন আমরা খুঁজে চলেছি। ভারতবর্ষে এখনো সেই মারাত্মক পরিস্থিতি আসেনি তার আগেই দেশের প্রধানমন্ত্রী এবং বেশকিছু রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর অনেক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন। চলুন আমরাও তাদের সহযোগিতা করি, তাতে আখেরে লাভ আমাদেরই হবে।

Related Articles

Back to top button