সাক্ষাৎকার

সারাদেশের মানুষ কৃষকদের পক্ষে আছে : সি পি এম নেতা রবিন দেব

×
Advertisement

বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযানকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রের চেহারা ধারণ করলো শিলিগুড়ি। 144 ধারা অমান্য করায় পুলিশ মিছিল আটকায়। এরপর তৈরি হয় উত্তেজনা। প্রসঙ্গত , কৈলাস বিজয়বর্গীয় (Kailash Vijayvargiya)নেতৃত্বে জলপাইগুড়ি মোড় থেকে একটি মিছিল আসছিল। অন্যদিকে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের নেতৃত্বে অন্য মিছিলটি আসছিল ফুলবাড়ি থেকে। সেই মিছিলটি ফ্লাইওভার পেরোতে বাধার মুখে পড়ে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ লাঠিচার্জ করে। বিক্ষোভ ছত্রভঙ্গ করতে জলকামান ব্যবহার করা হয়। পাল্টা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাথর ছুড়তে থাকে বিজেপি কর্মী সমর্থকরা। বিজেপি তরফে জানানো হয়েছে , পুলিশের লাঠির ঘায়ে তাদের একজন কর্মীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও আরও অনেকে জখম হয়েছেন। এর পাশাপাশি সাংবাদিক ও পুলিশকর্মীরা আহত হয়েছেন। অন্যদিকে আগামীকাল গোটা দেশজুড়ে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে কৃষক সংগঠন। এই ঘর ধর্মঘটকে বাম , কংগ্রেস , সমাজবাদী পার্টি , আর জে ডি , আম আদমি পার্টি , ডি এম কে , বি এস পি সহ প্রায় ১৪টি সংগঠন।

Advertisements
Advertisement

এই ঘটনাবলির পরিপ্রেক্ষিতে মতামত নেওয়ার জন্য ভারত বার্তার প্রতিনিধি প্রীতম দাস যোগাযোগ করেছিল মাননীয় সি পি এম নেতা রবিন দেবের (Rabin Deb) সঙ্গে। তিনি এই ব্যাপারে তার মতামত আমাদের ভারত বার্তার প্রতিনিধিকে জানান।

Advertisements

১) বিজেপির উত্তরকন্যা অভিযানকে কেন্দ্র করে আজ রণক্ষেত্র হয়ে উঠল শিলিগুড়ি। আজকের এই অভিযানকে কেন্দ্র করে পরিস্থিতি যে দিকে মোড় নিল সেই প্রসঙ্গে কি বলতে চাইবেন ?

Advertisements
Advertisement

রবিন দেব : এভাবে আন্দোলনকারীদের উপর আক্রমণ চালানো , এর নিন্দা করছি আমরা। একজনের প্রাণ চলে গেল। এখন যা চলছে চারিদিকে , যারা আন্দোলন করছে তাদের উপর আক্রমণ চলছে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে হয়। এসব তো সবসময়ই ছিল। প্রতিবাদ করবে মানুষের দাবি নিয়ে সেখানে রেসপনসিভ হতে হবে। এই মুভমেন্ট বা অভিযান মানে কোন দাবি নিয়ে তারা যাচ্ছে , সেই দাবিগুলো শুনতে হবে , যেটা করা যাবে সেটা বলতে হবে আর যেটা করা যাবে না সেখানে পারবো না বলতে হবে। এভাবে আক্রমণ করে , গুলি করে মেরে এগুলি বন্ধ করে যায় ? বন্ধ করা যায় না। এটা সবাইকে বোঝা দরকার।

২) আগামীকাল ৮ ই ডিসেম্বর সারা দেশজুড়ে পেশক ধর্মঘট। এর পাশাপাশি বিজেপির উত্তরবঙ্গ ধর্মঘট। যদিও দুটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত আলাদা। প্রায় 14 টি সংগঠন এ কৃষক ধর্মঘট কে সমর্থন করছে। অন্যদিকে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল মন্তব্য করেছেন , কৃষকদের জন্য দিল্লির নয়টি স্টেডিয়ামে জেল বানানোর পারমিশন চেয়েছে কেন্দ্র। কৃষি বিল নিয়ে জট , ধর্মঘট , কেজরিওয়ালের এহেন মন্তব্য। কি প্রতিক্রিয়া দিতে চাইবেন ?

রবিন দেব : কেন্দ্রীয় সরকার বিজেপি তারা জোর করে পার্লামেন্টে কৃষিবিলগুলি পাস করল। তখন থেকেই কৃষকদের মনের ক্ষোভটা বিরোধীরা সংসদে তুলে ধরতে চাইছিল। বারবার বলা হয়েছিল যে এটাকে সিলেক্ট কমিটিকে পাঠান , এই বিল নিয়ে আলোচনা করুন। যারা স্টেক হোল্ডার তাদের সাথে আলোচনা করুন কিন্তু সেইদিকে কর্ণপাত করলো না। সংখ্যাগরিষ্ঠতার জোরে সংসদীয় গণতন্ত্রের রীতিনীতি পদ্ধতিগুলিকে জবাই করে বিলগুলি কে পাস করিয়ে দ্রুততার সঙ্গে রাষ্ট্রপতিকে দিয়ে সই করিয়ে নিল , আইনে পরিণত করল। এখন যখন আন্দোলন হচ্ছে তখন দেখছেন যে সব অংশের মানুষ এই আন্দোলনে সামিল হচ্ছেন। শুধু বামপন্থীরা না , এমনকি বিজেপির সঙ্গে যারা ছিল তারাও এর প্রতিবাদ করছে।আগেই দেখেছেন আকালি দল চলে গেছে। তার মন্ত্রীও পদত্যাগ করেছে কেন্দ্র থেকে। তারপর এখন আমরা দেখছি হরিয়ানায় বিজেপির সঙ্গে যে চৌটালা সরকার চলছে সেই উপমুখ্যমন্ত্রীও তিনিও কৃষকের দাবিগুলি সমর্থন করে তার মীমাংসা চাইছেন। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী থেকে যারা শিল্পী , খেলোয়াড় , যারা নানা পুরস্কার পেয়েছেন তারা পর্যন্ত সেইগুলোকে প্রত্যাহার করেছে , ফিরিয়ে দিচ্ছে। তারপর খাপ পঞ্চায়েত তারা পাশে দাঁড়াচ্ছে , বিভিন্ন রাজ্যের বিভিন্ন অংশের মানুষ এর পাশে দাঁড়িয়ে আছে। সমস্ত ছাত্র , যুব , মহিলা , শ্রমিক , কর্মচারী , শিক্ষক সমস্ত অংশের মানুষ এর মধ্যে শামিল হয়েছে। এই ধর্মঘট কে সমর্থন করছে , এই আন্দোলনকে সমর্থন করছে। এই তিনটি আইনকে প্রত্যাহার করতে হবে। বলা হচ্ছে কৃষকদের স্বার্থে হচ্ছে। কৃষকদের স্বার্থে যদি হয়ে থাকে তাহলে কৃষকরা আন্দোলন করছে কেন ? এই লকডাউনের পর্বে আমরা দেখতে পাচ্ছি আম্বানি , আদানি এদের সম্পত্তির পরিমাণ বাড়ছে। সাধারণ মানুষের আয় কমছে , সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ বাড়ছে। তারা এই সময়ে লাভবান হচ্ছে। এখন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী যা বলছেন সেটা আপনারা বুঝুন তার বক্তব্য সে বলেছে। সারাদেশের মানুষ কৃষকদের পক্ষে আছে। যারা ধর্মঘটের বিরুদ্ধে বলেন তারা কথায় কথায় ধর্মঘট করে। বিজেপি আগামীকাল ধর্মঘট করছে। একজন মারা গেলে ধর্মঘট করে আর তিনজন কৃষক মারা গেছে তো ধর্মঘট করা যাবে না ? বিজেপি সারাদেশে ধর্মঘট বিরোধিতা করেছে আর উত্তরবঙ্গে ওদের একজন মারা গেছে সেখানে ধর্মঘট ডেকে দিয়েছে। আর এদিকে আমাদের রাজ্যে তৃণমূল তারা বলছে দাবির পক্ষে আছে কিন্তু ধর্মঘটের বিরুদ্ধে আছি। আসলে দাবির পক্ষে কি করে থাকে ? সারাদেশে বিরোধিতা করার মতো তো আর মুখ নেই ! কিন্তু যখন আইন পাস হলো তখন তো বিরোধিতা করেনি। সুতরাং এক একটা দল এক একটা মতামত ব্যক্ত করছে কিন্তু আসল কথা হচ্ছে সাধারণ মানুষ , গরিব মানুষ , শ্রমিক – কৃষক তাদের পাশে কে আছে ? 26 শে নভেম্বর ধর্মঘটে একবার প্রমাণ হয়েছে। আগামীকালের ধর্মঘট একটা নতুন ধরনের ধর্মঘট। কৃষক সংগঠন ধর্মঘট ডেকেছে , তাকে সমস্ত রাজনৈতিক দল অবিজেপি তারা সমর্থন করছে। ধর্মঘটের বিরোধিতা করছে বিজেপি , ধর্মঘটের বিরোধিতা করছে তৃণমূল। না হলে এই ধর্মঘটের পক্ষে সবাই।

[ সাক্ষাৎকার গ্রহণ : প্রীতম দাস ]

Related Articles

Back to top button