কানের ভেতর তৈরি হওয়া মোম বা earwax অনেক সময় মানুষ অযথা ময়লা ভেবে নেন। কিন্তু চিকিৎসাশাস্ত্রে একে বলা হয় সেরুমেন (Cerumen), যা আসলে কানের স্বাভাবিক সুরক্ষার অংশ। এর রং সাধারণত হালকা হলুদ বা বাদামি হয় এবং আঠালো, মোমের মতো অনুভূত হয়। এটি বাইরের কানের গ্রন্থি থেকে তৈরি হয় এবং ধুলোবালি, জীবাণু কিংবা ছোট পোকামাকড়কে ভেতরে ঢুকতে বাধা দেয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, কান পরিষ্কার রাখতে এই মোম অত্যন্ত জরুরি। এটি কানের ভেতরের অংশকে আর্দ্র রাখে এবং প্রাকৃতিকভাবে ধীরে ধীরে বাইরে চলে আসে। তবে সমস্যা দেখা দেয় তখনই, যখন মোম অতিরিক্ত জমে যায় বা শক্ত হয়ে কানের নালী বন্ধ করে দেয়। এর ফলে শোনার ক্ষমতা কমে যেতে পারে, ব্যথা বা চাপ অনুভূত হতে পারে, এমনকি টিনিটাস বা কানে ভোঁ ভোঁ শব্দ শোনার সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
কানের মোম পরিষ্কার করার চিকিৎসা পদ্ধতি
১. এন্ডোস্কোপিক ক্লিয়ারেন্স টেকনিক
এই আধুনিক পদ্ধতিতে একটি ছোট এন্ডোস্কোপ কানের ভেতরে প্রবেশ করানো হয়। ক্যামেরার মাধ্যমে স্ক্রিনে ভেতরের অবস্থা দেখা যায় এবং বিশেষ যন্ত্র ব্যবহার করে জমে থাকা মোম বা তরল বের করে আনা হয়।
সব খবর মোবাইলে পেতে 👉🏻
Join Now২. ওয়াক্স সফটনার ড্রপস
যদি মোম শক্ত হয়ে যায়, তবে ওয়াক্স সফটনার ড্রপস ব্যবহার করা হয়। কয়েক দিন নিয়মিত ব্যবহারের পর মোম নরম হয় এবং পরে সহজে পরিষ্কার করা যায়। সাধারণত ৩–৫ দিনের মধ্যে রোগীকে আবার ডেকে পরবর্তী চিকিৎসা করা হয়।
৩. ইয়ার ওয়াশ বা ইয়ার সিরিঞ্জিং
এটি সবচেয়ে প্রচলিত এবং নিরাপদ পদ্ধতি। শরীরের তাপমাত্রার সমান গরম করা নর্মাল স্যালাইন কানে ধীরে ধীরে প্রবেশ করানো হয়। এতে মোম ও ময়লা নরম হয়ে সহজেই বেরিয়ে আসে। এই পদ্ধতিতে কানের পর্দা বা ইয়ারড্রাম কোনও ক্ষতি হয় না।
কী করবেন না?
চিকিৎসকেরা স্পষ্ট জানাচ্ছেন—কান পরিষ্কারের জন্য earbuds বা cotton swabs ব্যবহার করা উচিত নয়। এতে মোম আরও ভেতরে ঠেলে যেতে পারে এবং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। যদি শ্রবণে সমস্যা হয় বা কানে অস্বস্তি অনুভূত হয়, তবে দেরি না করে ENT বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
কানের মোম জমে গেলে কী কী সমস্যা হতে পারে?
অতিরিক্ত মোম জমে গেলে কান বন্ধ হয়ে যেতে পারে, শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, মাথা ঘোরা, কানে গুঞ্জন বা টিনিটাসের মতো উপসর্গ দেখা দিতে পারে। অনেক সময় সংক্রমণের ঝুঁকিও বাড়ে। তাই এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা অত্যন্ত প্রয়োজন।