জীবনযাপন

দেবী দুর্গার মূর্তি তৈরিতে লাগে বেশ্যালয়ের মাটি, জানুন এই নিয়মের রহস্যভেদ

Advertisement
Advertisement

‘বেশ্যা’ বলতে আপনি ঠিক কি বোঝেন? যারা পতিতাবৃত্তি করেন তাঁদেরকেই চলতি ভাষায় বেশ্যা বলে থাকি আমরা সকলেই। যেই স্থানে গেলে আমাদের বদনাম হয়। যেই স্থানে পুরুষদের প্রবেশ মানে নোংরামি এবং মেয়েদের প্রবেশ মানে কলঙ্ক। যেই জায়গায় ব্যবসা চলে, সেই ব্যবসা হল দেহ ব্যবসা, যেই ব্যবসা আমাদের দেশে খুল্লামখুল্লা চলে না, যেই দেশে ওপেন সেক্স নেই, সেই দেশের সার্বজনীন পুজোতে কেন বেশ্যালয়ের মাটি লাগে বলুন তো? আপনি হয়তো এই নিয়ে অনেক প্রতিবেদন পড়ে থাকবেন। কেউ কেউয় বলেছেন নারী মানেই শক্তি, নারী মানেই মা, নারী মানেই অনেক কিছু সুতরাং বেশ্যাদের মাটি ব্যবহার করাই যায় শুধু বেশ্যাদের মাতৃজ্ঞানে সেবা করা যায় না এবং স্ত্রীর মর্যাদা দেওয়া হয় না। অথচ দেবী দুর্গাকে বলা হয় মা দুর্গা অথবা দেবী বা শিব পত্নী।

Advertisement
Advertisement

অধিকাংশ মানুষ এই বেশ্যালয়ের মাটি নিয়ে দুর্গাকেও ছোট করেছে আবার ওই খেঁটে খাওয়া মহিলাদেরও ভুল মেসেজ দিয়ে যাচ্ছে। আমরা জানি মায়ের চোখে সবাই সমান। এমনকি মাটির কোন জাত ধর্ম হয় না। হ্যাঁ মাটির কিছু ভাগ থাকে তাও আবার চাষাবাদ কাজে লাগে। এই যেমন দোয়াস মাটিতে সব কিছুই ভালো ফলন হয়, বেলে মাটিতে তরমুজ ইত্যাদি ইত্যাদি। সুতরাং মাটির যখন কোন জাত ধর্ম হয় না তখন বেশ্যা বাড়ির মাটি ছাড়া দুর্গা পুজো হবে না কথাটা কি খুব সত্যি? রামচন্দ্র অকাল বোধন করেছিলেন ঠিকই, তিনিও কি তখন বেশ্যালয়ে গিয়ে মাটি এনেছিলেন নাকি হনুমানদের পাঠিয়েছিলেন? প্রশ্ন উঠছে মনে।

Advertisement

তবে, ব্যপারে কিছু কথা বলা অত্যন্ত জরুরী। ‘বেশ্যা’ এই শব্দটি বৈদিক “বিশ্যা” শব্দ থেকে যে এসেছে। এর ইঙ্গিত ঋগবেদে পাওয়া যায়– “সুবন্ধবো যে বিশ্যা ইব ব্রা অনস্বন্তঃ শ্রব ঐযন্ত পজ্রা।।” আপনি যদি ব্রিটিশ ভাষা শেখার পরে একটু সময় পান তবে সংস্কৃত অপ্ল অল্প করে শিখতে পারেন। মনের বিজ্ঞান জাগ্রত হবেই হবে। যাইহোক, দুর্গা পূজায় বেশ্যা মৃত্তিকার অবতারণায় অশ্লীলতার প্রশ্নই উঠেনা।
এখানে, ‘বেশ্যা’ শব্দটি তন্ত্রে প্রয়োগ করা হয়েছে রূপক অর্থে। যেমন পঞ্চ ‘ম’ কার। মৎস্য, মদ্য, মাংস, মড়া ও মৈথুন। এগুলো তান্ত্রিক রহস্যময় গোপন সাধনার ইঙ্গিত। এর তাৎপর্য অনেক গম্ভীর। দু চার লাইনে বোঝানো সম্ভব নয়। ভগবান শিব মহানির্বান তন্ত্রে বলেছেন –
“অভিষিক্তা ভবেৎ বেশ্যা ন বেশ্যা কুলটা প্রিয়ে।” । যারা দশ মহাবিদ্যার উপাসক এটি তাঁদের মন্ত্র। তাঁরা এই মন্ত্রের উচ্চারণ করেন। এছাড়া যিনি দেবত্ব অর্জন করেছেন, সেই রকম অভিষিক্তাকেই বেশ্যা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। এখানে দেবী দুর্গাকে দেবত্ব প্রদান করেছিলেন ব্রহ্মা- বিষ্ণু – মহেশ্বর।

Advertisement
Advertisement

সব শেষে এটাই বলা যায় এই মাটিতেই জন্ম প্রকৃতির, এই মাটিতেই মিলিয়ে যেতে হয়, আবার এই মাটির বুক চিড়েই উঠে আসে জল, এই মাটিতেই ফলে সোনার ফসল, এই মাটিতেই গড়ে ওঠে শিল্প, আবার এই মাটিতেই খেলা করে শিশু। তাই এই মাটির কোন জাত ধর্ম হয় না। আমাদের উচিত ‘বেশ্যা’ শব্দের সঠিক প্রয়োগের। আমাদের উচিত চেতনা ও বিজ্ঞান কে জাগ্রত করা।

Advertisement

Related Articles

Back to top button