নিউজরাজ্য

দামোদর নদের কূলে অবস্থিত বেগুনিয়া নামে পরিচিত একটি মন্দির, জেনে নিন এই মন্দিরের ইতিহাস

Advertisement
Advertisement

শ্রেয়া চ্যাটার্জি- দামোদর নদের কূলে বরাকরে চারটি মন্দিরকে একসঙ্গে ‘বেগুনিয়া’ বলা হয়। সুপ্রাচীন, ঐতিহাসিক, নান্দনিক, অপরিসীম প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রয়েছে এই মন্দিরগুলিতে। আগে অবশ্য পাঁচটি মন্দির ছিল। বর্তমানে চারটি মন্দির অবশিষ্ট রয়েছে।এদের একত্রে ‘সিদ্ধেশ্বরী মন্দির’ বলা হয়। চারটি মন্দিরের মধ্যে তৃতীয় মন্দিরটি শুধু পশ্চিমবমুখী বাকিগুলো সবই পূর্বমুখী। চতুর্থ মন্দিরটিতে বাংলার সর্ব প্রাচীন দেউল স্থাপত্যরীতি মাথায় রেখেই বানানো হয়েছে।

Advertisement
Advertisement

চারটি মন্দিরকে হঠাৎ করে বেগুনিয়া কেন নাম দেওয়া হল?এই প্রশ্ন সবার মনের মধ্যেই উঠবে। এই মন্দির পুরীর শিখরের আকৃতি অনেকটা বেগুনের মত। পুরো বেগুন নয়, অর্ধেকটা কাটা বেগুনের সঙ্গে বেশি মিল রয়েছে। তাই এই মন্দিরের নাম বেগুনিয়ার মন্দির।

Advertisement

জোসেফ ডেভিড বেগেলার সাহেব পঞ্চম মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ এর বিবরণ দিয়েছেন। যদিও পঞ্চম মন্দিরের চিহ্ন পাওয়া যায় না।ফাল্গুন মাসের শুক্লপক্ষে অষ্টমী তিথিতে জনৈক রাজা হরিশচন্দ্রের স্ত্রী হরিপ্রিয়া তাদের দেবতার উদ্দেশ্যে একটি মন্দির নির্মাণ করেন। তৃতীয় মন্দিরের শিলালিপি অনুসারে, ১৪৬৮ শকাব্দে এক জনৈক ব্রাহ্মণ নন্দ এবং তার স্ত্রী এই মন্দিরটি সংস্কার করেছেন। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে মন্দিরটি অনেক আগে নির্মিত। প্রথম মন্দিরের তিনটি শিবলিঙ্গ, কালীমূর্তি রয়েছে। দ্বিতীয়টি তে রয়েছে তিনটি শিবলিঙ্গ, গণেশ মূর্তি। তৃতীয় মন্দিরটিতে পাঁচটি শিবলিঙ্গ এবং একটি পাথরের মাছ দেখা যায়। চতুর্থ মন্দির ছিল শিবের মন্দির।

Advertisement
Advertisement

পাথরের তৈরি দেউল মন্দির পশ্চিমবঙ্গে বিরল। একমাত্র পুরুলিয়ার বান্দার দেউল এর সঙ্গেই বেগুনিয়ার মন্দিরের তুলনা চলে। চতুর্থ মন্দিরে শিখর, ও দেউল সর্বপ্রাচীন। নিচু ভিতের ওপরে উঁচু গর্ভগৃহ। গোড়া থেকে শিখরে বক্ররেখা উঠে গেছে। স্থাপত্যের দিক দিয়েই মন্দিরগুলি কে ভুবনেশ্বরের পরশুরামেশ্বর মন্দির এর সমকালীন অর্থাৎ অষ্টম শতকে তৈরি। প্রতিটি মন্দিরের গায়ে খুব সুন্দর করে পাথরের মূর্তি খোদাই করা রয়েছে। যেমন উড়ন্ত সিংহ, মকর, রাক্ষসের মতন মুখ। তবে সারা দিনের ভক্তদের ফুল-বেলপাতা, সিঁদুর, ঘড়া ঘড়া জল শিব লিঙ্গের মাথার উপরে ঢালা, এসব ধর্মীয় আতিশয্যে জন্য মন্দিরগুলো ধ্বংস হতে বসেছে। যদিও এই স্থানটি আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার সংরক্ষিত স্থান। তাও মানুষের কাছে এই মন্দির গুলির সংরক্ষণের চেয়ে ভক্তির পরিমাণ এতটাই বেশি যে, তাদের ভক্তির জোরে যদি মন্দিরগুলো ধ্বংস হয়েও যায় তাতেও তাদের কোন সমস্যা নেই। তবে এই ধরণের সুপ্রাচীন মন্দিরকে সংরক্ষণ অতি প্রয়োজন। বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যকে বজায় রাখা দরকার।

Advertisement

Related Articles

Back to top button