শ্রেয়া চ্যাটার্জি – নীল জলরাশির মধ্যে বিশাল আকার, অতিকায় দেহ নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রাণীটি। মাঝে মাঝে লেজের ঝাপটা দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে তার অস্তিত্ব। কিংবা নাক দিয়ে বার করছে ফোয়ারার মতন জল। মাঝে মাঝে হুংকারও দিচ্ছে। অতিকায় এই বিশাল প্রাণীটি স্তন্যপায়ী। সারাজীবন জলেই কাটিয়ে দিল। তিমি মাছ নাকি আবার গান গায়, শুনেছেন কখনো? সে গান কতটা সুরেলা তা জানা নেই, তবে বিশেষজ্ঞরা হ্যাম্পব্যাক বা কুব্জপৃষ্ঠ তিমির ৩০ মিনিট পর্যন্ত গান রেকর্ড করেছেন। এই গান শুনে আপনার মন ভালো হবে কিনা, তা জানা নেই, তবে হতবাক হবেন, একথা ঠিক। নীল তিমি আকারে বিশাল বড় হয় এমনকি বাচ্চা নীল তিমি একটা হাতির সমান হয়। তাহলে অনুমান করে নিন বড় গুলো কেমন আকারের হয়। একটা বাচ্চার ওজন প্রায় ২৭ টন আর দৈর্ঘ্যে প্রায় ২৭ ফুট হয়ে থাকে। একটি প্রাপ্তবয়স্ক নীল তিমির ওজন ১৫০ টন দৈর্ঘ্যে প্রায় ৯৮ ফুট হয়ে থাকে।
জলেতে বাস করে বলে এরা যে মাছ তা কিন্তু নয়। এরা স্তন্যপায়ী প্রাণী। জলের মধ্যেই শিশু তিমি কে মা তিমি দুধ খাওয়ায়। তিমি মাছের অনেক ধরন, কিলার তিমি, নীল তিমি, পাইলট তিমি, হাম্বব্যাক তিমি, বেলুগা তিমি। এদের মধ্যে সবচেয়ে বড় নীল তিমি। নীল তিমি কে জলের মধ্যে নীল রঙের দেখায়। কিন্তু জলের ওপরে ভেসে থাকলেই তাকে নীলচে ধূসর বর্ণের লাগে। নীল তিমি যখন জলের তলায় থাকে তখন এরা অক্সিজেন নেয় না, তাই প্রায় আধ ঘণ্টার ব্যবধানে মাঝে মধ্যেই এদেরকে সমুদ্রের উপরে উঠে আসতে হয়। উঠে এসে বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করতে হয়। এদের প্রিয় খাদ্য ক্রিল। বিশাল আকার ইয়ায়ায়া বড় হাঁ করে গিলে নেয় প্রায় হাজার হাজার ক্রিল একসঙ্গে।
অত বড় হাঁ করলে শুধু তো আর মাছ ঢুকবে না, মাছের সাথে চলে যায় বিশাল জলরাশি। তারপর ফিল্টারের মাধ্যমে জল বের করে দেয়। মুখের মধ্যে রয়েছে ব্যলিন, যা ফিল্টারের কাজ করে। তবে নীল তিমি কিন্তু একেবারে মিশুকে মাছ নয়। বরঞ্চ দম্ভ আর অহংকারে সে সমুদ্রের মধ্যে একা একা ঘুরতে বেশ পছন্দ করে। ঘন্টায় ৫ মাইল বেগে সমুদ্রে সাঁতার কাটে। রহস্যে ভরা নীল তিমি। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় স্তন্যপায়ী জীব। তবে বর্তমানে প্লাস্টিক দূষণের জন্য সমুদ্র এবং সামুদ্রিক জীব জগৎ বিপন্ন হতে বসেছে।
অনেক তিমি মাছের মৃত্যু হয়েছে না বুঝতে পেরে প্লাস্টিকের দ্রব্যাদি খেয়ে ফেলে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে অনেক ছবি উঠে এসেছে যেখানে দেখা যাচ্ছে তিমি এর পেট থেকে বেরোচ্ছে অজস্র টনটন প্লাস্টিকের দ্রব্য। যা হজম করতে না পেরে তিমি মাছ মারা গেছে। তাই সচেতন হতে হবে আমাদের। প্লাস্টিক এর পরিবর্তে ব্যবহার করতে হবে অন্য কিছু বিকল্প জিনিস। প্লাস্টিকের যতদিন আগমন হয়নি, তার আগেও তো আমরা সেই সমস্ত উপাদান দিয়ে নিজের কাজ চালিয়ে নিতাম। তাই আজও সেগুলো দিয়েই কাজ চালাতে হবে কারণ পৃথিবীকে করতে হবে দূষণমুক্ত। মানুষ পৃথিবীতে শুধু একা থাকতে আসিনি, প্রাণীজগৎ উদ্ভিদজগৎ এবং সমস্ত জীব জগতকে নিয়ে গোটা পৃথিবী। প্রত্যেকের অধিকার আছে, পৃথিবীতে সমান ভাবে বসবাস করার।