আর্থিক সঙ্কটের জেরে বকেয়া ডিএ দেওয়ার সময়সীমা শেষ হলেও, তা মেটানো সম্ভব নয়—এই মর্মে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হল রাজ্য সরকার। নির্ধারিত দিনে সর্বোচ্চ আদালতে রাজ্যের অবস্থান স্পষ্ট করে জানানো হল, ২৫% বকেয়া মহার্ঘ ভাতা এই মুহূর্তে দেওয়া সম্ভব নয়। এর জন্য অতিরিক্ত ছ’মাস সময় চাওয়া হয়েছে।
রাজ্যের অবস্থান কী?
সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য জানিয়েছে, চলতি আর্থিক বছরে বাজেটে ডিএ বাবদ অতিরিক্ত ব্যয় বরাদ্দ নেই। প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার বোঝা এই মুহূর্তে বহন করা সম্ভব নয়। রাজকোষে সেই অর্থও নেই। কেন্দ্রের কাছ থেকে ছাড়পত্র পেতে সময় লাগবে। সেই কারণেই অন্তর্বর্তী নির্দেশ পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়ে আরও ৬ মাস সময় চাওয়া হয়েছে।
সব খবর মোবাইলে পেতে 👉🏻
Join Nowআদালতের তহবিলে অর্থ জমার প্রস্তাব
রাজ্যের আরও দাবি, তারা প্রয়োজনে ২৫% বকেয়া ডিএ আদালতের নির্দিষ্ট তহবিলে জমা দিতে প্রস্তুত। তবে তাতেও সময় লাগবে বলে জানানো হয়েছে। রাজ্যের বক্তব্য, এই অর্থ একবারে দেওয়া কঠিন।
কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার প্রশ্নে রাজ্যের সাফাই
ডিএ বাধ্যতামূলক নয়, বরং তা ঐচ্ছিক—এই যুক্তিও দিয়েছে রাজ্য। কেন্দ্র ও রাজ্যের আর্থিক কাঠামো আলাদা। ফলে কেন্দ্রীয় হারে ডিএ দেওয়ার কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। রাজ্যের নিজস্ব নিয়ম—Ropa 2009 অনুযায়ী, কতটা হারে ডিএ বাড়বে, তা রাজ্য ঠিক করে।
অন্যান্য যুক্তি কী?
রাজ্যের আরও দাবি, শুধু রাজ্য সরকারি কর্মীই নয়, স্কুল-কলেজ, স্থানীয় প্রশাসন, এমনকি সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত সংস্থার কর্মীদেরও ডিএ দিতে হয়। সেই কারণে খরচের পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়। এর পাশাপাশি পেনশন, স্বাস্থ্য প্রকল্প, এলটিসি (Leave Travel Concession)-র মতো পরিসেবাও চালু আছে রাজ্যে, যা অন্য অনেক রাজ্যে নেই।
ঠিক কত টাকা বকেয়া?
ডিএ মামলার শুনানিতে রাজ্য সরকার জানিয়েছে, সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ ১১,৮৯০.১৮ কোটি টাকা। পেনশন প্রাপকদের ১১,৬১১.৪৫ কোটি টাকা এবং অন্যান্য কর্মীদের ১৮,৩৬৯.৩২ কোটি টাকা—সব মিলিয়ে প্রায় ৪০,০০০ কোটি টাকার বকেয়া। এর মধ্যে সুপ্রিম কোর্ট ১৬ মে নির্দেশ দিয়েছিল, ৬ সপ্তাহের মধ্যে প্রায় ১০,৪২৫ কোটি টাকা মেটাতে হবে। সেই সময়সীমার শেষ দিন ছিল ২৭ জুন।
কেন্দ্রের সঙ্গে ফারাক
বর্তমানে রাজ্য সরকারি কর্মীরা ১৮% হারে ডিএ পান, যেখানে কেন্দ্রীয় কর্মীরা পান ৫৫%। অর্থাৎ দুইয়ের মধ্যে প্রায় ৩৭% ব্যবধান রয়েছে।
FAQ – পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন
১. রাজ্য সরকার কেন বকেয়া ডিএ দিতে পারছে না?
বর্তমান আর্থিক সঙ্কট এবং বাজেটে প্রয়োজনীয় অর্থের অনুপস্থিতি রাজ্যের প্রধান কারণ বলে জানানো হয়েছে।
২. আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী টাকা না দিলে কী হবে?
সুপ্রিম কোর্ট রাজ্যের আবেদনের ভিত্তিতে পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করবে এবং নির্দেশ দিতে পারে।
৩. ডিএ কি বাধ্যতামূলক?
রাজ্যের মতে, ডিএ কোনও মৌলিক অধিকার নয়, এটি ঐচ্ছিক। ফলে কেন্দ্রীয় নিয়ম রাজ্যের ওপর চাপিয়ে দেওয়া যায় না।
৪. রোপা ২০০৯ কী?
এটি রাজ্য সরকারের নিজস্ব নিয়ম, যার মাধ্যমে ডিএ-র হারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
৫. কেন্দ্রের তুলনায় রাজ্যের ডিএ কতটা কম?
কেন্দ্রের ডিএ বর্তমানে ৫৫%, রাজ্যের ১৮%—অর্থাৎ ৩৭% ব্যবধান রয়েছে।