বজ্রগর্জনের সঙ্গে মেঘে ঢাকা আকাশ, প্রবল বৃষ্টিতে বেহাল রাজ্যের একাধিক জেলা। এরই মাঝে নতুন করে উদ্বেগ বাড়াল বন্যার ভয়। পশ্চিমবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় এখন বন্যা পরিস্থিতি প্রবলভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে জারি করা হয়েছে কমলা সতর্কতা, যার অর্থ বন্যা পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে।
গত কয়েকদিন ধরেই সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর কারণে রাজ্যে টানা বৃষ্টিপাত চলছে। একদিকে স্বস্তির শীতলতা নামলেও অন্যদিকে তৈরি হয়েছে চরম জলাবদ্ধতার পরিস্থিতি। বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে জলস্তর, কোথাও কোথাও নদীর বাঁধে ফাটল ধরেছে। এই অবস্থায় ড্যাম থেকে ব্যাপক হারে জল ছাড়ছে ডিভিসি (DVC), যা বন্যার পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
সব খবর মোবাইলে পেতে 👉🏻
Join Nowকোন কোন জেলায় তৈরি হয়েছে বন্যার পরিস্থিতি?
সূত্র অনুযায়ী, ইতিমধ্যেই জলে ডুবে গেছে পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম এবং পুরুলিয়া-র একাধিক অংশ। ঘাটাল, গড়বেতা, খদ্দর ও চন্দ্রকোণা এলাকার বিস্তীর্ণ অংশ জলমগ্ন। বিশেষ করে শিলাবতী ও ঝুমি নদীর জল বিপজ্জনক মাত্রা ছুঁয়ে ফেলেছে।
কী কারণে বাড়ছে বিপদ?
ডিভিসির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ঝাড়খণ্ড লাগোয়া বিহারে তৈরি হওয়া নিম্নচাপের জেরে বৃষ্টির পরিমাণ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। সেই কারণে মাইথন ও পাঞ্চেত ড্যাম থেকে একটানা জল ছাড়া হচ্ছে। দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে শনিবার সকাল ৭টা থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৭০,৪৭৫ কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়েছে। যার ফলে নিম্ন দামোদর ও মুণ্ডেশ্বরী নদীর জলস্তর হু-হু করে বাড়ছে।
কী ব্যবস্থা নিচ্ছে প্রশাসন?
নবান্ন সূত্রে খবর, প্রত্যেকটি বন্যাপ্রবণ জেলায় ২৪×৭ কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। NDRF ও রাজ্য বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনীকে সতর্ক রাখা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশেষ বৈঠক। হুগলির আরামবাগ মহকুমায় জলস্তর বৃদ্ধির কারণে স্কুলগুলি বন্ধ রাখা হয়েছে। হাওড়ার আমতা-উদয়নারায়ণপুর অঞ্চলে নদী বাঁধে চলছে জরুরি মেরামতির কাজ।
মানুষের জন্য কী নির্দেশ জারি হয়েছে?
জানা গিয়েছে, প্রত্যেক জেলা প্রশাসনকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। বাসিন্দাদের নিম্নাঞ্চল থেকে সরিয়ে নেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে দুর্যোগ মোকাবিলার দল ও নৌকাবহর প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ):
১. কমলা সতর্কতা কী বোঝায়?
কমলা সতর্কতা মানে হলো গুরুতর বৃষ্টিপাত ও সম্ভাব্য বন্যার পূর্বাভাস, যেখানে প্রশাসনের বিশেষ প্রস্তুতি নেওয়া আবশ্যক।
২. কোন জেলাগুলি সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত?
পূর্ব বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম ও পুরুলিয়া-র বিভিন্ন অংশে বন্যার জল ঢুকে পড়েছে।
৩. কত পরিমাণ জল ছাড়া হচ্ছে ড্যাম থেকে?
ডিভিসি শনিবার সকাল থেকে দুর্গাপুর ব্যারাজ থেকে প্রতি সেকেন্ডে ৭০,৪৭৫ কিউসেক হারে জল ছাড়ছে।
৪. প্রশাসন কী ব্যবস্থা নিচ্ছে?
২৪x৭ কন্ট্রোল রুম, বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী মোতায়েন, এবং নদী বাঁধে মেরামতির কাজ চলছে।
৫. সাধারণ মানুষ কীভাবে সতর্ক থাকবে?
নিম্নাঞ্চল থেকে সরে যাওয়া, সরকারি নির্দেশ মেনে চলা ও স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।