সরকারি কর্মীদের মুখে এখন একটাই প্রশ্ন—“২৫ শতাংশ তো কী, পাব তো?” জুনের সময়সীমা ঘনিয়ে এলেও এখনও অনিশ্চয়তা কাটেনি বকেয়া ডিএ (মহার্ঘ্য ভাতা) নিয়ে। রাজ্যের প্রায় ১০ লক্ষ কর্মচারী ও পেনশনভোগী প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন, কবে হাতে পাবেন বহু প্রতীক্ষিত সেই টাকার অঙ্ক। কিন্তু এখন যা খবর, তাতে তাঁদের আশায় খানিকটা ভাঁটা পড়তে পারে।
কী হয়েছে হঠাৎ?
গত ১৬ মে, সুপ্রিম কোর্ট পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে নির্দেশ দেয়, জুন মাসের মধ্যে রাজ্যের সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ-র অন্তত ২৫% মিটিয়ে দিতে হবে। সেই নির্দেশ মেনেই তৎপর হয়েছে নবান্ন। তবে প্রশ্ন উঠছে—এই টাকাটা পুরোটা কর্মীদের হাতে দেওয়া হবে তো?
সব খবর মোবাইলে পেতে 👉🏻
Join Nowসূত্রের খবর, রাজ্য সরকার এক বিকল্প ব্যবস্থার কথা ভাবছে। জানা যাচ্ছে, বর্তমান কর্মরত সরকারি কর্মীদের বকেয়া ডিএ-র একটি অংশ সরাসরি তাঁদের জেনারেল প্রভিডেন্ট ফান্ড (GPF)-এ জমা করে দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছে। অর্থাৎ, পুরো ২৫% হাতে না এসে কিছুটা টাকা জিপিএফ অ্যাকাউন্টে জমা পড়তে পারে। স্বাভাবিকভাবেই এতে খুশি নন অনেকেই।
কেন এই সিদ্ধান্ত?
ডিএ বকেয়ার পরিমাণ বিপুল। রাজ্য সরকারের হিসেব অনুযায়ী, ২৫% বকেয়া মেটাতে গেলে খরচ হতে পারে প্রায় ১০,০০০ কোটি টাকা। এই অর্থের জোগান দিতে ইতিমধ্যে দুটি পৃথক নিলামের মাধ্যমে ৪০০০ কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে পশ্চিমবঙ্গ সরকার।
৩ জুন: ২০ বছরের মেয়াদি বন্ডে ২০০০ কোটি টাকার ঋণ।
১৭ জুন: ২২ বছরের মেয়াদি সিকিউরিটিজে আরও ২০০০ কোটি টাকা।
এই ঋণ তোলার কাজ করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (RBI)। গড় সুদের হার ধরা হয়েছে প্রায় ৭.১১ শতাংশ। অর্থাৎ, সরকার অর্থ জোগাড়ে তৎপর, কিন্তু পুরো টাকা হাতে পাওয়া নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে।
প্রশ্ন উঠছেই…
বকেয়া ডিএ-র ২৫% টাকা হাতে কবে মিলবে?
সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে ৩০ জুনের মধ্যে দিতে হবে, তবে নির্দিষ্ট দিন ঘোষণা হয়নি।
সকল সরকারি কর্মচারীই কি পুরো টাকা পাবেন?
না। শোনা যাচ্ছে, যারা কর্মরত, তাঁদের GPF-এ জমা পড়তে পারে কিছু অংশ।
পেনশনভোগীরা কী পাবেন?
যাঁরা অবসরপ্রাপ্ত, তাঁরা সরাসরি হাতে টাকা পেতে পারেন বলে অনুমান।
সরকার কেন পুরো টাকা হাতে দিচ্ছে না?
১০ হাজার কোটি টাকা একসঙ্গে দেওয়া কঠিন। তাই বিকল্প পদ্ধতির কথা ভাবা হচ্ছে।
ঋণ তুলে কী লাভ সরকারের?
ডিএ মেটাতে সাময়িক অর্থের জোগান, কিন্তু এতে বাড়বে ভবিষ্যতের ঋণের চাপ।
একদিকে ডিএ সংক্রান্ত আদালতের নির্দেশ, অন্যদিকে অর্থনৈতিক বাস্তবতা—এই দুইয়ের মাঝে দাঁড়িয়ে রাজ্য সরকার কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেদিকেই তাকিয়ে সরকারি কর্মী মহল। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানানো হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে আপাতত বলা যায়—পুরো টাকার স্বপ্ন দেখা হলেও, বাস্তবে হয়তো ‘আধখানা’ হাতেই উঠবে।