তাহলে কি শুভেন্দু এবার বিজেপিতে? বিজয়া সম্মিলনীর আমন্ত্রণপত্রে গেরুয়া রং ব্যবহার করা নিয়ে জল্পনা তুঙ্গে

Advertisement

Advertisement

রাজ্যের পরিবহনমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে তৃণমূলের দূরত্ব বেশ কিছুদিন ধরে বেড়ে চলেছে। বাংলার রাজনীতির অন্যতম মুখ এবং নন্দীগ্রাম আন্দোলনের অন্যতম হোতা শুভেন্দু অধিকারী এবার কি তাহলে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করতে চলেছেন? এই নিয়ে রাজ্য রাজনীতির অন্দরমহলে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা। তার মধ্যেই শুভেন্দু অধিকারীর নামে ছাপা বিজয়া সম্মিলনীর আমন্ত্রণপত্র নিয়ে বর্তমানে শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে।

Advertisement

দুর্গাপূজো শেষ হবার পরে বিজয়া সম্মিলনী করে সমস্ত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বরা জনসংযোগ বাড়ানোর জন্য পথে নেমে পড়েছেন। সেই তালিকায় অবশ্যই রয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। আগামী ৭ নভেম্বর পুরুলিয়াতে অনুষ্ঠিত হতে চলেছে এই অনুষ্ঠান এবং তার জন্যই ছাপানো হয়েছে বিশেষ আমন্ত্রণপত্র। কিন্তু সেই আমন্ত্রণ পত্রে ব্যবহার হয়েছে গেরুয়া রং। এছাড়াও এখানে শুভেন্দুকে দেখা গিয়েছে রাজস্থানি পাগড়ি মাথায় ছবি দিতে।

Advertisement

যদিও, এই আমন্ত্রণপত্রে শুভেন্দু অধিকারী শুধুমাত্র দাদা। তার কোন রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার করা হয়নি এই আমন্ত্রণ পত্রে। তবে শুধু পুরুলিয়া না, গত শনিবার মেদিনীপুরে ও শুভেন্দু অনুগামীরা তার রাজনৈতিক পরিচয় সরিয়ে রেখে বিজয়া সম্মিলনী অনুষ্ঠিত করেছিল। শুভেন্দু অধিকারীর সমস্ত এখন থেকে দাদা হিসেবে তুলে ধরছেন। তার কোনো রাজনৈতিক পরিচয় দেওয়া হচ্ছে না। এবং সেই নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে জোর জল্পনা শুরু হয়েছে।

Advertisement

এই মর্মে পুরুলিয়ার অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তা এবং জেলা তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক গৌতম রায় জানিয়েছেন,” আমরা তৃণমূলের সৈনিক। কিন্তু দলের নামে কর্মসূচি করলে দলের অনুমতি নিতে হয়। দল যদি কেউ না করেন তাহলে, ইচ্ছা থাকলেও সেরকম অনুষ্ঠানে যাওয়া সম্ভব হয় না। কিন্তু শুভেন্দু অধিকারী আমাদের দাদার মতো। তাই তার অনুষ্ঠানে কোনরকম দলের নাম যুক্ত করা হচ্ছে না। শুধুমাত্র দাদার ফ্যান ক্লাবের সদস্যরা এখানে নাম যুক্ত করেছেন। বিভিন্ন ব্লকে ব্লকে এই সভার ব্যানার লাগানো হচ্ছে।” পুরুলিয়ার অনুষ্ঠানে শুভেন্দুর থাকার সম্ভাবনা প্রবল। তবে তার অনুগামীদের কার্যকলাপ নিয়ে এখন অব্দি কোন মন্তব্য করতে শোনা যায়নি তৃণমূলের উপরি মহলকে। তবে এই সমস্ত জল্পনা প্রসঙ্গে মেদিনীপুরে রুটিন সাংবাদিক বৈঠকে তৃণমূলের মুখপাত্র দেবাশীষ চৌধুরী জানিয়েছেন,” শুভেন্দু দা বলেছেন, আমাদের দলের একজন নেত্রী এবং আমি তার সৈনিক। এরপর আর কি কথা বাকি থাকতে পারে।”

তবে শুভেন্দুর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে বর্তমানে বিস্তর জলঘোলা চলছে রাজ্য রাজনীতিতে। তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কোন দিনই এই নিয়ে মুখ খুলতে দেখা যায়নি। তবে, কিছুদিন আগে তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম এর গলায় শোনা গেছিল শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে কটাক্ষের সুর। দিঘাতে এসে ফিরহাদ একজন সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তরে জানান,” পথ ভাবে আমি দেব, রথ ভাবে আমি, মূর্তি ভাবে আমি দেব- হাসেন অন্তর্যামী।” তিনি রবীন্দ্রনাথের এই লাইন ব্যবহার করে ঘুরপথে শুভেন্দু অধিকারীকে কটাক্ষ করে বলতে চেয়েছিলেন, তৃণমূল দল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই দলের সর্বময় কর্ত্রী। তিনি দলের শেষ কথা। এ রকমই ধারণা সংশ্লিষ্ট মহলের।

এছাড়াও, বেশ কিছুদিন হল তৃণমূলের কোনরকম কর্মসূচিতে শুভেন্দু অধিকারীকে দেখা যাচ্ছে না। বেশিরভাগ সময়ে তাকে দেখা যাচ্ছে নিজে একা জনসংযোগ কর্মসূচি করতে। তবে শুধু শুভেন্দু নয়, তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব বাড়ছে তার বাবা শিশির অধিকারীরও। বিজয়ার পর তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে আর কোনো কথা হয়নি শিশির অধিকারীর। পাশাপাশি ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্যেও তিনি বেশ রুষ্ট বলে জানা গিয়েছে। আর এই নিয়ে আবারও নতুন সমীকরণ তৈরি হয়েছে রাজ্য রাজনীতির অন্দরমহলে।