স্বামীর দোষে বউ কাঠগড়ায়!….

Advertisement

Advertisement

কথায় বলে ‘পতির পুণ্যে, সতীর পুণ্য’।…. তবে ‘পতির দোষে, সতীর দোষ’ এমন কথা প্রবাদে না থাকলেও বাস্তব জীবনে এই কথাটাই বারবার অনেকের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। কারণ, সন্তান যদি পরীক্ষায় ফেল করে তখন মায়ের সন্তানকে মানুষ করা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। আবার যদি সেই সন্তান ভাল ফল করে, তাহলে সেই ভাল ফলের সম্পূর্ণ কৃতিত্বটা বাবা পায়। কখনও সন্তানের কৃতিত্ব মাকে দেওয়া হয় না। এমনটাই বহু যুগ যুগ ধরে চলে আসছে। এর পাশাপাশি স্বামীর অমঙ্গল হোক বা স্বামী কোনও দোষ করুক, সেখানেও স্ত্রীকে কিন্তু অলিখিতভাবে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়। সমাজের এই অলিখিত নিয়ম শুধু সাধারণ মানুষের জন্য নয় সেলিব্রেটিদের ক্ষেত্রেও হেরফের হয় না, তা আরও একবার প্রমাণিত হল বিরাট কোহলি ও অনুষ্কা শর্মার জীবন দিয়ে।

Advertisement

দেশে করোনা পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে এবারের আইপিএলের আসর বসানো হয়েছে। আর সেখানেই গত বৃহস্পতিবার কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব বনাম রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোরের ম্যাচ ছিল। এই ম্যাচকে ঘিরেই কার্যত অনুষ্কা শর্মাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। কে দাঁড় করিয়েছে? যিনি নিজেও বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটার। এদিন পাঞ্জাবের অধিনায়ক কে এল রাহুলের দুটি ক্যাচ মিস করেন আরসিবি অধিনায়ক বিরাট কোহলি। তখনই তাঁকে নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠতে শুরু করে। তারপর যখন রয়েল চ্যালেঞ্জার্স ব্যাঙ্গালোর ব্যাট করতে নামে, তখন ব্যাট হাতে মাত্র এক রানে আউট হয়ে প্যাভিলিয়নে ফিরে যান আরসিবি অধিনায়ক। এমনকি দলকে লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে পারেননি তিনি। এরপর থেকেই শুরু হয় সমালোচনা। সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় হয়ে ওঠে। বিরাটকে নিয়ে সেই সমালোচনায় অংশ নেন ভারতের প্রাক্তন কিংবদন্তি ক্রিকেটার তথা আইপিএলের ধারাভাষ্যকার সুনীল গাভাসকরও।

Advertisement

এবার এক নজরে দেখে নিই সুনীল গাভাসকর বিরাটকে সমালোচনা করে ঠিক কী বলেছিলেন? ‘লকডাউনে বিরাট শুধুই অনুষ্কার বল প্র্যাকটিস করেছেন।’ এই অশালীন মন্তব্য করে অনুষ্কা শর্মাকে তাঁর স্বামী বিরাট কোহলির খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য দায়ী করে কাঠগড়ায় তুলেছিলেন তিনি।

Advertisement

আর তারপর সমালোচনার ঝড় ওঠে নেট দুনিয়ায়।
সুনীল গাভাসকরকে মোক্ষম জবাব দেন অনুষ্কা শর্মাও। তিনি বলেন, ‘2020 সাল হয়ে গেল, তবু আমার স্বামী খারাপ পারফরম্যান্স করলে আমাকে টেনে কথা বলা আজও বন্ধ হল না। মিস্টার গাভাসকর আপনি আমার স্বামীর পারফরম্যান্স নিয়ে সমালোচনা করতে গিয়ে যে মন্তব্য করেছেন তা অত্যন্ত কুরুচিকর। ভারত তথা বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে আপনি একজন কিংবদন্তি ক্রিকেটার। আপনার মুখে এমন অশালীন মন্তব্য মানায় না। এরাম মন্তব্য শুনলে সত্যিই ভাবতে হয়। কারোর স্বামী ক্রিকেট ম্যাচে ব্যর্থ হলে কেন তাঁর স্ত্রীর দিকে আঙুল তোলা হয় বা তাঁর স্ত্রীকে দোষারোপ করা হয়। এর ব্যাখ্যা আপনি কী আমায় দিতে পারবেন? আপনার কাছে আরও অনেক শব্দ ছিল যা দিয়ে আপনি আমার স্বামীর পারফরম্যান্সের সমালোচনা করতে পারতেন। কিন্তু তা আপনি না করে আমার নাম ধরে মন্তব্য করেছেন, যা অত্যন্ত অসম্মানজনক। আপনি ধারাভাষ্যকার হিসেবে অত্যন্ত জনপ্রিয়। তাই প্রত্যেকের ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে আপনার শ্রদ্ধা থাকা উচিত। একজন ক্রিকেটারের ব্যক্তিগত জীবন থাকবেই। তাই আমার কিংবা আমাদের ওপর আপনার সমান শ্রদ্ধা থাকা উচিত।’

এই বাদানুবাদের থেকেই প্রমাণিত হয় যে, আজও স্বামীর কোনও ব্যর্থতার কারণ হয়ে দাঁড়ায় তাঁর স্ত্রী। কিন্তু স্বামীর সফলতায় স্ত্রীকে কৃতিত্ব দেওয়ার প্রবণতা আজকের আধুনিক সমাজেও অনেক কম চোখে পড়ে। যদিও কথায় বলে ‘behind every successfull man is a woman’…. কিন্তু সেই কথা মুখে স্বীকার করার বেলায় সাধারণ মানুষ থেকে সুনীল গাভাসকর সকলেই কুণ্ঠাবোধ করেন। তবে আজকের আধুনিক সমাজে এমনটা একেবারেই অনভিপ্রেত। যেখানে মেয়েরা সমান তালে তাল মিলিয়ে পুরুষদের সঙ্গে চলছে, সেখানে কোনও এক স্বামীর খারাপ পারফরম্যান্সের জন্য তাঁর স্ত্রীকে সর্বসমক্ষে কটাক্ষ করে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো সুস্থ সমাজের পরিচয় দেয় না। তাই এরকম ঘটনা ভবিষ্যতে যেন বিরাট কোহলি ও আনুশকা শর্মার জীবনে পুনরায় না ঘটে, এমনকি কোনও স্বামী-স্ত্রীর জীবনেই যেন না ঘটে, সেই কামনাই রইল।