দিনে প্রায় ৩০০ মানুষের মুখে ভাত তুলে দেয় এই মানুষটি

Advertisement

Advertisement

শ্রেয়া চ্যাটার্জি : কথাতেই আছে, ‘যার কেউ নেই তার ঈশ্বর আছেন’ একথা বোধহয় সত্যিই কথা। কারণ এই মানুষটিকে না দেখলে আপনি বিশ্বাস করতে পারবেন না, এই মানুষটিকে যেন ঈশ্বরই পাঠিয়েছেন দুর্গত মানুষগুলোর মুখে দুবেলা-দুমুঠো খাবার তুলে দেওয়ার জন্য। আসলে ঈশ্বর তো নিজে আসেন না, মানুষের মধ্যে দিয়েই তিনি তার কাজ করেন। যে মানুষগুলো রাস্তার ধারে পড়ে থাকে যাদের কেউ নেই অথবা যাদের সন্তান থাকা সত্ত্বেও যারা একাকীত্বে ভোগেন সন্তানরা বাড়িতে একা ফেলে চলে গেছেন বলে তাদের জন্য তাদের ছেলে হিসেবে আবির্ভাব হয় এই মানুষটি।

Advertisement

তপ্ত গরমে, অতিরিক্ত বৃষ্টিতে এই রাস্তার মানুষগুলোর হাতে একটু খাবার তুলে দেন দেব কুমার বাবু। তিনি এমনিতে খুবই একটি সাধারণ মানুষ। অবহেলিত, হতদরিদ্র মানুষগুলির ত্রাণকর্তা তিনি। কিন্তু সমাজের কাছে তিনি কিন্তু সত্যি নায়ক। এই মানুষগুলো জানেন যে, যেকোনো পরিস্থিতিতেই তাদের জন্য ঠিক খাবার পাঠিয়ে দেবেন সকাল বেলা এবং রাত্রিবেলা দেবকুমার বাবু। এছাড়াও হঠাৎ করে শারীরিক অসুস্থতায় হাসপাতালে ডাক্তার দেখানো, ঔষধ দেওয়া এবং ছোটখাটো বেড়াতেও নিয়ে যান তিনি।

Advertisement

নিজের মাকে সন্তানরা ফেলে রেখে দিয়ে গেছেন রাস্তার ধারে, এই দেখে দেবকুমার বাবুর মন কেঁদে ওঠে। তিনি কিছুতেই সহ্য করতে পারেন না। তাই তিনি নিজে সন্তানের জায়গা নিয়ে এই সমস্ত মানুষ গুলিকে সন্তানের অভাব বুঝতে দেন না।

Advertisement

আসলে দেব কুমার বাবুর নিজের জীবনটাও খুব একটা সহজভাবে কাটেনি। তিনি জন্মগ্রহণ করেছিলেন কলকাতার বরানগরে। ছেলেবেলা থেকেই যুদ্ধ করে তাকে কাটাতে হয়েছিল। পরিবারে ছিলেন তিনি তার মা তার ভাই এবং বাবা। তার বয়স যখন খুবই ছোট তার বাবা একটি পথদুর্ঘটনায় আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে পড়েন। এরপরই শুরু হয় দেব কুমারের জীবনে আসল লড়াই। প্রথমে একটি ক্যাটারিং এ তিনি খাবার দেওয়ার কাজ করতেন। তবে সেখানে মাইনে ছিল খুবই কম এবং ক্যাটারিং এর মালিক তাকে খুব দয়ার চোখে দেখত। বেঁচে যাওয়া বাসি খাবার তাকে দিত। এগুলোতে তার খুব কষ্ট হতো। তারপরে দেব কুমার গুজরাটে যান এবং সেখানে একদিন সে এমনি উদ্দেশ্যহীনভাবে ঘুরতে থাকেন এবং তারপরে অটো এমব্রয়ডারি ফ্যাক্টরিতে শ্রমিক হিসাবে নিযুক্ত হন। সেখানের কাজকর্ম মাত্র নয় দিনে শিখে ফেলেন। নয় বছর পরে তিনি একটি নিজের কোম্পানি তৈরি করেন। যার নাম দেন ‘জয়রাম গার্মেন্টস’। কিন্তু তার এই উন্নতি তার বাবার পক্ষে দেখে যাওয়া সম্ভব হয়নি, এর কিছুদিন পরেই বাবার মৃত্যু হয়।

নিজে এত কষ্ট করে বড় হয়েছেন বলেই বোধহয় রাস্তায় পড়ে থাকা মানুষগুলোর কষ্টকে তিনি এই ভাবে অনুভব করতে পারেন। হয়তো সকলের কষ্ট আমাদের একার পক্ষে মেটানো সম্ভব না কিন্তু আমরা এক একজন যদি কয়েকজনের এরকম আমাদের সাধ্যমত দায়িত্ব নি, তাহলে হয়তো পৃথিবীটা একটু অন্যরকম হবে।