শ্রেয়া চ্যাটার্জি : হিন্দু মতে শিবরাত্রি ব্রত ঘরে ঘরে সকলেই পালন করেন। পুরুষ নারী নির্বিশেষে এটি পালিত হয়। এই ব্রতটি সাধারণত ফাল্গুন মাসে পালন করা হয়। 2020 সালের একুশে ফেব্রুয়ারি শিবরাত্রি পালন করতে হবে। জেনে নিন শিবরাত্রির এই কিছু নিয়ম কানুন।
ছোটবেলায় মা বলতেন শিবরাত্রি তে শিবলিঙ্গ এ জল ঢালো শিবের মত বর হবে। সত্যি কি কোনো মেয়ে অমন ছাই ভস্ম মাখা,শ্মশান নিবাসী,ভাং সেবন করা,বাঘ ছাল পরিহিত,জটাধারী পুরুষ কে স্বামী হিসেবে চাইবে? উত্তর টা হয়তো না হবে কিন্তু গোটা শ্রাবণ মাস ধরে বিশেষত সোমবার তারকেশ্বর বা শিবের থান গুলি র উপচে পড়া ভিড় প্রমাণ করে যে মানুষ এর মনে এর জনপ্রিয়তা। শিবের মতন বর না হলেও শিব ভালো বর দিতে পারে এই ইচ্ছা য় আজও মেয়ে রা শিবরাত্রি পালন করে। ছেলে রাও উপোস করে,পূজো দেয় হয়তো দূর্গা র মত বউ পাবে বলে।শিব যখন দেবতা দের মধ্যে এতই বিখ্যাত তখন জানাই যাক শিবের ইতিহাস,শিবরাত্রি র ইতিহাস।
মহাদেবের হাজারো রূপ : একাধারে তিনি পঞ্চানন, তাঁর পাঁচটি আনন বা মুখ, আর তিনটি নয়ন। যেটি কপালে থাকে,সেই নয়নটি গ্যানের নয়ন।তিনি ব্রমহান্ডের সৃষ্টি কর্তা,জীবের নিওয়ান্তা। তিনি স্বয়ম্ভু। তিনি আবার ধ্বংসে র অধিকর্তা। এঁর প্রধান অস্ত্র ত্রিশুল। মহাপ্রলয়ে কালে ইনি ডমরু বাজিয়ে ধ্বংসের সূচনা করেন। তিনি মহাযোগী সন্ন্যাসী,সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী, নির্গুণ ধ্যানের প্রতীক।
মহা শিবরাত্রির ইতিহাস : অতি প্রাচীন কালে কাশী তে এক নিষ্ঠুর ব্যাধ থাকত। একদিন শিকারে গিয়ে দেরি হওয়ায় সে সারা রাত একটি গাছে আশ্রয়ে নেয়। যে গাছ টি তে আশ্রয়ে নেয় সেটি ছিল বেলগাছ। সে সারারাত ধরে কোনো শিকার না পেয়ে বেল গাছের একটা একটা করে পাতা ছিঁড়ে নীচে ফেলে ছিল। আর সেখানে ছিল একটি শিবলিঙ্গ। আর দিনটি ছিল মহা শিবরাত্রি। ব্যাধ সারাদিন কিছু না খেয়েই ছিলেন। শিবের মাথায়ে বেলপাতা গুলি পড়ার ফলে অজান্তেই ব্যাধ সেদিন তার শিবরাত্রি র ব্রত পালন করে ছিল। পরে কিছু দিন পর তিনি মারা গেলে যমদূত রা তাকে নিয়ে আসে কিন্তু যেহেতু সে শিবরাত্রির ব্রত করে ছিল, তাই যমরাজ তাকে মুক্তি দেন। এই হল শিবরাত্রি র ইতিহাস।
শিব পুজার নিয়ম : শিব কে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠান শিবরাত্রি হচ্ছে হিন্দুদের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় আচার। শিব হলেন হিন্দুদের দেবদেবী দের মধ্যে সর্বোচ্চ আরাধ্য দেবতা।এই শিবরাত্রি ফাল্গুন মাসে র কৃষ্ণ পক্ষের চতুর্দশী তিথি তে এটি অনুষ্ঠিত হয়।ঐ দিন বাড়ির মা বোনেরা এমন কি অনেক পুরুষ রাও দুধ, গঙ্গাজল, মধু ,ফুল ,বেলপাতা সহযোগএ শিবলিঙ্গ পুজা করেন।
শিবরাত্রি ব্রত যারা পালন করেন তারা শিবরাত্রির আগের দিন নিরামিস খাবার খান।আর ব্রতের দিন চার প্রহর উপবাসী থেকে রাত্রিবেলা শিব লিঙ্গে দুধ, দই, মধু, গঙ্গা জল ঢালেন।এই দিন প্রতিটি মন্দিরকেই সুন্দর করে সাজানো হয়।লিঙ্গ গুলিকে আকন্দ, অপরাজিতা বেলপাতা প্রভৃতি দিয়ে সাজানো হয়।মহাশিব রাত্রির রাতে ভারতে র বারটি জ্যোতির লিঙ্গ তথা সোমনাথ, মল্লিকারজুন, মহাকালেশ্বর, অঙ্কারেশ্বর,কেদারনাথ, ভিমশঙ্কর,বিশ্বেশ্বর,ত্র্যম্বকেশ্বর, বৈদ্যনাথ, নাগেশ্বর, রামেশ্বর,ঘুশ্মেশ্বর সেজে ওঠে।
শিব পুজায় শিব লিঙ্গকে গঙ্গাজল ,দুধ, মধু, দিয়ে স্নান করানো হয়।তারপর একটি ডাটিতে তিনটি পাতা আছে এমন পাতা দিয়ে সাজানো হয়।
শিব পুজার ফল : এই ব্রত পালন করলে ধর্ম, অর্থ, কাম ও মোক্ষ এই চার রকম ফল পাওয়া যেতে পারে।
শেষ কথা : কি ভাবছেন পড়ে? এই ব্রত পালন করতে মন চাইছে? তবে আর সাত পাঁচ না ভেবে করে দেখতে পারেন। আপনার ঠাকুর ঘরের শিব বা মন্দিরে র শিবের মাথায়ে জল ঢেলে পুণ্য অর্জনের সুযোগ মিস নাই বা করলেন। কে বলতে পারে আপনার মনোবাঞ্ছা পূর্ণ হতেই পারে।