শ্রেয়া চ্যাটার্জি – আজ বুদ্ধপূর্ণিমা। এমন পুণ্য তিথিতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, সিদ্ধি লাভ করেছিলেন এবং মহাপরিনির্বাণ লাভ করেছিলেন গৌতম বুদ্ধ। বৌদ্ধদের কাছে আজকের দিনটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। আজকের দিনে বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরা স্নান করে শুদ্ধ বস্ত্র পরে বৌদ্ধ মন্দিরে যান। ধুপ জ্বালিয়ে তারা প্রার্থনা করেন। বাংলাদেশ, দক্ষিণ এশিয়ায় এ দিনটি পালিত হয়। বিভিন্ন প্যাগোডায় প্যাগোডায় চলতে থাকে নানান রকমের কার্যক্রম। শ্রীলংকা যেহেতু বৌদ্ধ ধর্ম প্রভাবিত দেশ সেখানেও এই দিনটি ধুমধাম করে পালিত হয়। দেশবাসী গণকে সাদা রঙের পোশাক পরার কথা বলা হয়।
বুদ্ধ ছিলেন জৈন তীর্থঙ্কর মহাবীরের কণিষ্ঠ সমসাময়িক। বুদ্ধের জীবন ছিল আজীবক, চার্বাক, জৈনধর্ম প্রভৃতি প্রভাবশালী চিন্তাধারার উদয়কালের সমসাময়িক। গৌতম শাক্য জনগোষ্ঠীতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। এই গোষ্ঠী খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে মূল ভূখণ্ড থেকে সাংস্কৃতিক ভৌগোলিকভাবে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল এবং একটি ক্ষুদ্র গণতন্ত্র বা গোষ্ঠীতন্ত্র হিসেবে শাসন করত। বৌদ্ধ ঐতিহ্য অনুসারে, তিনি নেপালের লুম্বিনীর নগরে জন্মগ্রহণ করেন এবং বেড়ে ওঠেন কপিলাবস্তুতে। লুম্বিনী গ্রামে এক শাল গাছের তলায় সিদ্ধার্থের জন্ম হয়। তার জন্মের পর ৭ দিনের মধ্যে মা মায়াদেবী মারা যান। শুদ্ধোধন শিশু জন্মের পাঁচ দিনে নামকরণের জন্য আটজন ব্রাহ্মণকে আমন্ত্রণ জানালে, তারা নাম রাখেন সিদ্ধার্থ অর্থাৎ যিনি সিদ্ধিলাভ করেছেন। মাতার মারা যাওয়ার পর বিমাতা গৌতমীর কাছে তিনি বড় হতে থাকেন। তবে সংসারে মন ফেরাতে ১৬ বছর বয়সেই তাকে বিবাহ দেওয়া হয়। কোলিয় গণের সুন্দরী কন্যা যশোধারা সঙ্গে তার বিবাহ দিলে এক পুত্র সন্তান জন্মায় তার নাম রাহুল। পিতা শুদ্ধোধন, বুদ্ধের জীবনে সমস্ত বিলাসিতার ব্যবস্থা করলেও, সিদ্ধার্থ বস্তুগত ঐশ্বর্য জীবনের লক্ষ্য হতে পারে না, তা উপলব্ধি শুরু করে দেন। ধর্মচক্রপ্রবর্তনসূত্র অনুসারে, অসংযত বিলাসবহুল জীবনযাপন এবং কঠোর তপস্যার মধ্যবর্তী একটি মধ্যম পথের সন্ধান করে বোধিলাভ সম্ভব বলে তিনি উপলব্ধি করেন। সুজাতা নামের এক স্থানীয় গ্রাম্য কন্যার হাত থেকে তিনি আহার গ্রহণ করে এক অশ্বত্থ গাছের তলায় ৪৯ দিন ধরে ধ্যান করার পরই তিনি ‘বোধি’ প্রাপ্ত হন। তিনি জীবনের দুঃখ কষ্ট থেকে বেঁচে থাকার উপায় হিসেবে চারটি সত্যের কথা বলেছিলেন, যা ‘চতুরার্য সত্য’ নামে পরিচিত।