Categories: দেশনিউজ

২৫ কেজির ফুলকপি, ৩ ফুটের বেগুন চাষ করে পদ্মশ্রী পুরস্কার পেয়েছেন কৃষক

Advertisement

Advertisement

শ্রেয়া চ্যাটার্জি – রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে যখন পদ্মশ্রী দেওয়ার জন্য ফোনটি এসেছিল তখন জাগদিশ পারিখ নামে কাঠফাটা রোদে এই কৃষক মাঠে বসে মাটি কোপাচ্ছিলেন। পুরোটা কথা বলার পরে তিনি একটা ছোট্ট করে ‘ধন্যবাদ’ জানিয়ে ছিলেন। রাজস্থানের সিকার জেলার অজিত গড় গ্রামের দু হেক্টর জায়গা জুড়ে রয়েছে তার চাষের জমি। এক বৃদ্ধ চাষী জানান, -“পদ্মশ্রী কি তার সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিলনা। কিন্তু যখন দিল্লিতে উড়ে গেলাম, তারপরে বুঝতে পারলাম এটি কতটা তাৎপর্যপূর্ণ।”

Advertisement

তার চাষাবাদের বৈশিষ্ট্যই হলো তিনি সম্পূর্ণ জৈব পদ্ধতিতে চাষ করেন। যা অন্যান্য কৃষকদেরও উৎসাহিত করতে পারে। তিনি তার জীবনে ছয় জন রাষ্টপতির অদল-বদল দেখেছেন, শংকর দায়াল শর্মা থেকে রামনাথ কোবিন্দ। শুধু তাই নয় তিনি তার অসাধারণ সবজির প্রদর্শনী দেখিয়েছিলেন রাষ্ট্রপতি এপিজে আবদুল কালাম, প্রতিভা পাতিল এবং প্রণব মুখার্জিকে। ৮ কেজি ওজনের বাঁধাকপি, ৩ ফুট লম্বা বেগুন, ১৫ কেজির ফুলকপি এবং ৮৬ কেজির কুমড়ো ফুলের সকলকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন।

Advertisement

Advertisement

নানান রকমের ফুলকপি তৈরীর জন্য তাঁকে ন্যাশনাল ইনোভেশন ফাউন্ডেশন থেকে “ন্যাশনাল ইনোভেশন অ্যাওয়ার্ড” দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয় ফুলকপির নাম ও দেওয়া হয়েছে “অজিতগড় ভ্যারাইটি”। জগদিশ জানান, “আমি চাই আমার গ্রামের নাম বিশ্ব মানচিত্রে ঠাঁই পাক”। জাগদিশ চাষাবাদ শুধু শুরু করেছিলেন ১৯৫৭ সালে যখন তিনি ১০ বছরের মতন ছিলেন। প্রথম দিকে তিনি তার বাবাকে চাষের কাজে সাহায্য করতেন। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে তিনি কাকার সঙ্গে বাজারে গিয়ে সবজি বিক্রি করতেন। তারপরে তিনি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতে যেতেন দীর্ঘদিন ধরে এই এই কাজ করাটা কি সবজির প্রতি ভালোবাসা বৃদ্ধি করেছিল। দ্বাদশ শ্রেণী পাশ করার পরে তিনি কলেজে ভর্তি হন বিএ ডিগ্রির জন্য তবে শেষ পর্যন্ত পড়াশোনা পুরোপুরি তিনি চালাতে পারেননি। অবশেষে আসামের ONGC তিনি চাকরি।

তিনি জানান, “আমি ভালো রোজগার করতাম না, তাই ফিরে এলাম মামার বাড়িতে এবং মামাকে চাষের কাজে সাহায্য করতাম। চাষের জন্য আমি কোনো ভাবেই কৃত্রিম সার ব্যবহার করতাম না সবটাই জৈব সারের মাধ্যমে চাষাবাদ করতাম।” শুধু তাই নয় চাষাবাদের জন্য যে প্রচুর জলের প্রয়োজন হয়, তারও তিনি ব্যবস্থা করেছিলেন। অজিতগড় গ্রামের এমন অনেক কুয়ো একেবারে শুকিয়ে গিয়েছিল। জৈব সার তৈরীর পদ্ধতিটি তিনি খুব সুন্দর করে বলেছেন। প্রথমে তিনি মাটিতে ১০৬৩ ফুট গভীরে একটি গর্ত খনন করতেন। তারপরে সেখানে নিম পাতা, শসার এবং অন্যান্য সবজির খোসা, অন্যান্য পাতা সব দিয়ে গর্ত ভরাট করতেন এবং এটিকে ১৫ দিনের জন্য ছেড়ে দিতেন তারপরে এইখান থেকেই তা একেবারে স্বাভাবিক উপায়ে তৈরি জৈব সার। তারই অসাধারণ কৃতিত্বের জন্য তাকে কুর্নিশ জানাতে হয়।