BB Specialসবুজায়ন

আমাজনের অজানা রহস্য 

Advertisement

দক্ষিণ আমেরিকায় অবস্থিত আমাজন। এটি পৃথিবীর সবচেয়ে বড় বনাঞ্চল। আমাজন নদী আমাজন বনের জীবনীশক্তি। মহাবন আমাজন দেশের প্রায় 70 লক্ষ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অবস্থিত আয়তনের দিক থেকে, আমাজন বাংলাদেশের তুলনায় প্রায় 38 গুন বড়। সমগ্র পৃথিবীতে যত রেইনফরেস্ট আছে তার মধ্যে অর্ধেকই হল  এখানে। আমাজনের 40,000 প্রজাতির প্রায় 3 হাজার 900 কোটি বৃক্ষ রয়েছে। পৃথিবীর মোট অক্সিজেনের কুড়ি শতাংশ উৎপাদিত হয় আমাজন বনে। সে কারণে এ কে পৃথিবীর ফুসফুস বলা হয়। পৃথিবীর প্রাকৃতিক সপ্তাশ্চর্যের অন্যতম আমাজন বন।

এই বনের সৃষ্টি হয়েছিল প্রায় পাঁচ কোটি বছর আগে ইউসিন যুগে। সেসময় আমাজন উপত্যকায় উষ্ণ ও আর্দ্র জলবায়ুর ফলে এখানে রেনফরেস্ট তৈরি হয়। দক্ষিণ আমেরিকার বেশ অনেকটা অংশ জুড়ে রয়েছে জঙ্গল। আমাদের সুন্দরবন যেমন ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে অবস্থিত, তেমনই আমাজন 9 টি দেশের মধ্যে অবস্থিত। এরমধ্যে আমাজনের 60% শুধুমাত্র ব্রাজিলের অবস্থিত। 13% পেরুতে 10% কলম্বিয়ায় অবস্থিত বাকিগুলো বলিভিয়া ইকুয়েডর, ভেনেজুয়েলা, গায়না, যুরিনা অবস্থিত। এখানে 40000 জাতির গাছ আছে, 1300 জাতের পাখি পাওয়া যায়, 2200 জাতের মাছ, 427 জাতে স্তন্যপায়ী, 428 জাতের উভচর, 378 জাতের সরীসৃপ, এবং 25 লক্ষ জাতের পোকামাকড়। চিতাবাঘ, বিদ্যুত ইল, মাংসখেকো পিরানা মাছ, বিষাক্ত ফ্রগ,। এই বনের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে আমাজন নদী যা আমাজন জঙ্গলের প্রাণশক্তি। এটি পৃথিবীর দ্বিতীয় দীর্ঘতম নদী। প্রায় এক হাজার উপনদী মিলিত হয়ে আমাজন নদী গঠিত হয়েছে। আমাজন নদী যেখানে আটলান্টিক সাগরে গিয়ে মিশেছে সেখানে প্রতি সেকেন্ডে বিয়াল্লিশ লক্ষ ঘনফুট জল সাগরে পতিত হয়।

আমাজনের রহস্য:

1. ব্রাজিলিয়ান আমাজনের বুকে বেশ কিছু বৃত্তাকার ছবি দেখা যায় কিন্তু কেন সেই ছবি  নৃতাত্ত্বিক গন এখনো খুঁজে চলেছেন।

2. এখানকার আরেকটি বিস্ময়কর জিনিস হলো এখানকার মধ্যে দিয়ে বয়ে যাওয়া এক ফুটন্ত নদী। এখানকার জলের তাপমাত্রা  86 ডিগ্রী সেলসিয়াস। এতদিন বিষয়ের অনেক রকম তথ্য পাওয়া গেলেও নদীর জল ফুটছে এমন তথ্য পাওয়া যায়নি তাই। দীর্ঘদিন ধরে স্থানীয় বাসিন্দারা এই নদী সম্পর্কে লোকজনকে বলছেন তারা বলছেন এর জল  এত গরম যে তাতে মানুষ মারা যেতে পারে। এইসব কাহিনী শৈশব থেকেই ভীষণভাবে নাড়া দিয়েছিল পেরুর ভূবিজ্ঞানী আন্দ্রেস রুজো কে। একবার তিনি ছুটিতে বাড়ি ফিরে যান। তার পরিবারের সদস্যদের এই নদীর কাহিনী বলেন তখন তার মা তাকে বলেন এমন নদীর শুধু আছে তাই না তাতে তিনি ও তার এক বোন এর আগে সাঁতার কেটেছেন। একথাটি কেমন অবিশ্বাস্য মনে হোল তার  কাছে তিনি 2011 সালে একটা সুযোগ নিলেন তার এক নিকটাত্মীয় কে সঙ্গে নিয়ে প্রবেশ করেন আমাজন রেনফরেস্ট উদ্দেশ্যে। তিনি নিজে চোখে দেখবেন। যখন সত্যি সত্যি সেখানে পৌছে দেখলেন পান জলের তাপমাত্রা অনেক বেশি। তিনি বলেন যখনই আমি তা দেখলাম সঙ্গে সঙ্গে আমার সঙ্গে থাকা থার্মোমিটার হাতে নিলাম তাপমাত্রা পরিমাপ করে দেখলাম তা 86 ডিগ্রি সেলসিয়াস, তবে বলতে আমরা যা বুঝি ততটা নয়।

3. এখানে পাওয়া যায় ভিক্টোরিয়া আমাজনিয়া  নামে এক ধরনের বৃহৎ আকার জলপদ্ম। যে পাতাগুলির আয়তন বেশ বড় বড় এবং পাতাগুলি একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের ভার বহন করতে পারে।
4. ইলেকট্রিকইল যা মানুষকে দিতে পারে 600 ভোল্টের শক। এরা সাধারণত কাদার মধ্যে বাস করে কিন্তু তারা ঘনঘন কাদা থেকে উপরে পরিষ্কার জলে মাঝে মাঝেই উঠে আসে। এদের সবচেয়ে বিস্ময়কর হলো প্রজনন ব্যবস্থাটা। শুষ্ক মৌসুমে পুরুষরা লালা দিয়ে বাসা তৈরি করে। স্ত্রী প্রজাতিরা সেই বাসায় ডিম রাখে।

5. এখানে দেখা যায় জাগুয়ার কে এরা হচ্ছে এক বিশিষ্ট প্রজাতির চিতা বাঘের মত পশু। এরা 87 ধরনের প্রাণী শিকার করে থাকে হরিণ থেকে বড় ইঁদুর সবই এদের প্রিয় খাবার।

6. এখানে পৃথিবীর সবচেয়ে  বড় সাপ অ্যানাকোন্ডা পাওয়া যায়। এরা ওজনে 40 টন এবং লম্বা 21 ফিট পর্যন্ত হয়ে থাকে এদের বিকাশ কখনো বন্ধ হয় না।
এদের কোন বিষ থাকে না এরা যে কোন পশুকে নিজের শরীর দিয়ে পেঁচিয়ে  তাকে মেরে ফেলে। এরা ঘনঘন খায় না এল এরা যখন খায় তখন এতটাই খেয়ে ফেলে, হজম হতে প্রায় এক সপ্তাহ সময় লাগে।

7. সবচেয়ে ভয়ংকর পিরানহা মাছ। এরা সাধারণত মাংসাশী হয় মরা মাছ বা মরা পশু খেয়ে থাকে, তবে যদি ক্ষুধার্ত হয় আর সামনে যদি কোন মানুষ পায় এরা কিন্তু তাকেও আক্রমণ করে।

শেষ কথা:

তবে বর্তমানে বসতির জন্য আমাজনের অনেক গাছ কাটা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা মনে করেছেন যে 50 বছরের মধ্যে আমাজন বিলীন হয়ে যাবে। যার ফলে বিশ্ব উষ্ণায়ন এর বিরূপ প্রভাব পড়বে। এখানে বসবাস করেন বেশ কিছু আদিবসী, তাদের আবাস ছিল নদী ধারে অঞ্চলগুলোতে। এতে যাতায়াত করা মাছ ধরা এবং জমির উর্বরতা তারা বেশি পেত। এখানে প্রায় দুই কোটি আদিবাসী মানুষ বসবাস করেন। তবে বর্তমানে 500 থেকে 400 টি আমেরিন্ডিয়ান জনগোষ্ঠী বাস করে। তবে এদের মধ্যে 50 টি জাতি  পৃথিবীর সভ্য মানবজাতির সঙ্গে কোন সম্পর্ক নেই।

Written by – শ্রেয়া চ্যাটার্জী

Related Articles

Back to top button