বঙ্গ রাজনীতিতে বেশ কিছুদিন ধরেই শাসকদল ও শুভেন্দুর ঠান্ডা লড়াই নিয়ে প্রবল চাপানউতোর চলছিল। শুভেন্দু তৃণমূলে থাকবে নাকি বা বিজেপিতে যোগ দেবে নাকি সেই নিয়ে চলছিল প্রবল জল্পনা-কল্পনা। অবশেষে যাবতীয় জল্পনা-কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মন্ত্রিত্ব পদ থেকে ইস্তফা দিলেন শুভেন্দু অধিকারী। এরপর দলত্যাগ শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা মাত্র। তবে তিনি এরপর বিজেপিতে যোগদান করবেন নাকি সেই নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বিবৃতি পাওয়া যায়নি।
আজ অর্থাৎ শুক্রবার যাবতীয় জল্পনার ইতি টেনে সকালবেলাতেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে নিজের পদত্যাগপত্র পাঠিয়ে দেয় শুভেন্দু অধিকারী। যেহেতু আজ নবান্ন স্যানিটাইজেশন এর জন্য বন্ধ আছে তাই মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে সরাসরি চিঠি পাঠায় শুভেন্দু। এরপর সেই চিঠির কপি তিনি রাজ্যপালকে পাঠিয়ে দেন। শুভেন্দু অধিকারী রাজ্য পরিবহণ, সেচ ও জলসম্পদ দপ্তরের মন্ত্রী ছিলেন। নিজের পদত্যাগপত্রে শুভেন্দু লিখেছেন, “দীর্ঘদিন ধরে দুটি দপ্তরের মন্ত্রী হিসেবে কাজ করতে পেরে এবং মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে মানুষের সেবা করতে পেরে তিনি খুবই খুশি। মন্ত্রিত্ব পদ দেয়ার জন্য তৃণমূল সরকারকে ধন্যবাদ।” সেই সাথে নিজের সরকারি নিরাপত্তা ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা করেছেন তিনি। শুভেন্দু অধিকারী প্রায় জেড প্লাস ক্যাটাগরির নিরাপত্তা ও পুলিশ এসকট পেত। সমস্ত কিছু আর লাগবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি। রাজ্যপাল জগদীপ ধনকর সেই চিঠি তার টুইটে প্রকাশ করেন।
Today at 1:05 pm a resignation letter of Mr. Suvendu Adhikari from office as minister addressed to Hon’ble Chief Minister has been forwarded to me.
The issue will be addressed from constitutional perspective. pic.twitter.com/cxjF68uomH— Governor West Bengal Jagdeep Dhankhar (@jdhankhar1) November 27, 2020
প্রসঙ্গত, গতকাল শুভেন্দু অধিকারী হুগলি রিভার ব্রিজ কমিশনারেস এর চেয়ারম্যান পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন। সেই ইস্তফা তড়িঘড়ি গ্রহণ করে নিয়েছিল রাজ্য সরকার। তারপরে সেই পদে বসানো হয় তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। কিন্তু এখন অব্দি শুভেন্দু দল ছাড়েননি। তার এখনও অব্দি বিধায়ক পদ আছে। শুভেন্দু অধিকারী কিছু ঘনিষ্ঠ সূত্রের খবর যে শুভেন্দু বারবার হেভিওয়েট মন্ত্রী হওয়া সত্ত্বেও অরাজনৈতিক মিছিল করার সমস্যা হচ্ছিল শাসকদলের। তাই সেই বিতর্কের জেরে মন্ত্রিত্ব থেকে পদত্যাগ করছেন তিনি। অন্যদিকে শুভেন্দুর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, “অনেকগুলি পদে আছেন শুভেন্দু অধিকারী। তাই বারংবার ব্যক্তিগত আক্রমণ হচ্ছে তার বিরুদ্ধে। ব্যক্তিগত আক্রমণের হাত থেকে রেহাই পাওয়ার জন্যই পদ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।”
অন্যদিকে শুভেন্দুর মন্ত্রিত্ব ছাড়াই ঘটনায় স্বভাবতই উল্লসিত বাংলার গেরুয়া শিবির। এই খবর পেয়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলেছেন, “এরপর আরো অনেক লোক তৃণমূল ছাড়বেন। তারা যদি তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করতে চাই, তাহলে আমরা সাদরে নিয়ে নেব।” তিনি শাসকদল কারো কটাক্ষ করে বলেছেন,”টিএমসি সংগঠন বলে আর কিছু নেই। যা আছে তাহলে একটা মেলা বা সার্কাস পার্টি। অনেকেই ওই পার্টিতে আর থাকতে পারছেন না। আমাদের দলের শুভেন্দু বাবু এলে স্বাগত জানাবো।” অন্যদিকে, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী জানিয়েছে, “শুভেন্দুর মন্ত্রিত্ব পদ থেকে ইস্তফা তৃণমূলের পক্ষে অশনি সংকেত।” এছাড়াও, শুক্রবারে কোচবিহারে তৃণমূল বিধায়ক মিহির গোস্বামী দিল্লি গিয়েছেন। সেখানে তিনি হয়তো বিজেপিতে যোগদান করবেন বলেই মনে করছেন তৃণমূল শিবির। ইতিমধ্যেই ফেসবুকে তৃণমূলের সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘোষণা করে দিয়েছেন মিহির।
তৃণমূলের মন্ত্রিত্ব পদ ছেড়ে দিয়ে এবার শুভেন্দু অধিকারী কি পদক্ষেপ নেবেন সেটাই এখন জল্পনার বিষয়। হয়তো তিনি বিজেপিতে যেতে পারেন অথবা নিজেই নিজের দল গড়তে পারেন। এই জল্পনার পরিপ্রেক্ষিতে রাজনীতিবিদদের একাংশের দাবি, শুভেন্দু যদি বিজেপিতে যোগদান করে তাহলে নন্দীগ্রামের মত সংখ্যালঘু মুসলিম অধ্যুষিত কেন্দ্র থেকে লড়তে হবে তাকে। সেই ক্ষেত্রে বিজেপির হয়ে লড়লে তেমন একটা কিছু লাভ হবে না শুভেন্দুর। আবার অন্যদিকে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের আগে শুভেন্দু যদি নিজের দল তৈরি করা শুভেন্দুর পক্ষে খুব একটা সহজ হবে না। নির্বাচনের মাত্র ছয় মাস আগে নতুন দল তৈরি করে ভোটে লড়তে গেলে প্রতীক সংক্রান্ত জটিলতায় পড়তে হবে শুভেন্দু কে। এছাড়াও এত কম সময়ের মধ্যে একটি রাজনৈতিক দলের পরিকাঠামো তৈরি করা খুব একটা সহজ কাজ নয়। সেই পরিপ্রেক্ষিতেই, এখনও জোট কাটছে না যে শুভেন্দু কি করতে চলেছে। তবে তৃণমূলের অন্দরের জল্পনা ও বিজেপির পরিকল্পনা অনুযায়ী মনে করা যায় হয়তো শুভেন্দু গেরুয়া শিবিরের সৈনিক হবেন।