ইভেন্ট

বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে মহালয়া! ঠিক কিভাবে শুরু হয়েছিল মহালয়া পাঠ? জেনেনিন সেই ইতিহাস

Advertisement
Advertisement

পূজো আসতে আর মাত্র কটা দিন বাকি। বাড়ি গিন্নীরা ব্যস্ত শপিং মলে যেতে। কর্তার জন্য শার্ট প্যান্ট আর বাড়ির বাচ্চার জন্য জামা কাপড় কেনা, আত্মীয়-স্বজনকে যা দেওয়ার সেটা হয়তো দেওয়া হয়ে গেছে, এখন চলছে লাস্ট মিনিট ফিনিশিং কাজ। টুকটাক কসমেটিক্স আর পার্লারে যাওয়া। নিজেকে একটু চকচকে করে তোলা। যারা বিদেশে থাকেন তারা কিন্তু ব্যাগ গুছিয়ে প্রায় রেডি। এক বছর পরে বাড়ির মানুষগুলোর সঙ্গে আবার দেখা। আবার আড্ডা। ওখানে বসেই হয়তো ইন্টারনেটের সুবাদে ঠাকুর দেখতে যাওয়ার প্ল্যানিং সারা হয়ে গেছে।

Advertisement
Advertisement

কুমোরটুলির কুমোরেরা ব্যস্ত ঠাকুর তৈরীর কাজে। মাঠে-ঘাটে সাদা কাশফুল। আকাশে সাদা পেঁজা তুলোর মতো মেঘ। জানান দিচ্ছে মা আসছে। উমা আসছে তার বাপের বাড়িতে। ঠিক এক বছর পরে তাইতো তার বাপের বাড়িতে এত আনন্দ। পুজো পুজো ভাব শুরু হলেও কোথাও যেন একটা ভাবের অভাব। ঠিক ধরেছেন মহালয়া না হলে যেন পূজো এসেছে মনেই হয় না।

Advertisement

রঙিন টিভির দৌলতের আমরা যতই মহালয়া দেখি কিন্তু তা হলেও সেই চারটের সময় রেডিও নব ঘুরিয়ে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের বাণী, তা আমাদের আজও নস্টালজিক করে তোলে। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র এই নামটা সঙ্গে মায়ের আসা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

Advertisement
Advertisement

1905 সালের 4 আগস্ট তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন একজন ভারতীয় বাঙালি । বেতার সম্প্রচারক নাট্যকার অভিনেতা নাট্য পরিচালক তিনি কলকাতার আহিরীটোলার বাসিন্দা ছিলেন। পঙ্কজ কুমার মল্লিক ও কাজী নজরুল ইসলামের সমসাময়িক বীরেন্দ্রকৃষ্ণ 1930 দশকে সুদীর্ঘকাল অল ইন্ডিয়া রেডিও বেতার সম্প্রচারের কাজ করেছেন। এ সময় তিনি একাধিক নাটক রচনা ও প্রযোজনা করেছেন।

উত্তর কলকাতার মাতুলালয় বীরেন্দ্র কৃষ্ণের জন্ম হয়।তাঁর পিতা ছিলেন রায়বাহাদুর কালী কৃষ্ণ ভদ্র ও মা ছিলেন সরলাবালা দেবী। পরবর্তীকালে ঠাকুমা যোগমায়া দেবীর কেনা 7 রামধন মিত্র লেনে উঠে আসেন তার পরিবারবর্গ নিয়ে। কালী কৃষ্ণ ভদ্র ছিলেন বহুভাষাবিদ। তিনি 14 টি ভাষা জানতেন। নিম্নআদালতে দোভাষীর কাজ করতেন। তিনি পরবর্তীকালে বাংলা সাহিত্যের জগতে তিনি হয়ে উঠেছিলেন পরিচিত ব্যক্তিত্ব।

কালীকৃষ্ণ পুলিশ কোর্টের বিশিষ্ট আইনজীবী কালীচরণ ঘোষের দ্বিতীয় সন্তান সরলাবালা দেবী কে বিবাহ করেন। 1927 সালে তিনি রায়বাহাদুর খেতাব পান। তার দুই পুত্র জন্মায় ভূপেন্দ্র কৃষ্ণ ও বীরেন্দ্রকৃষ্ণ। বীরেন্দ্রকৃষ্ণ 1926 সালে ইন্টারমিডিয়েট ও 1928 সালে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে স্নাতক হন।

26 শে আগস্ট 1927 ভারতের স্বাধীনতার আগে। ওয়ান গ্যারিসন প্লেসে প্রতিষ্ঠিত হল ইন্ডিয়ান ব্রডকাস্টিং রেডিও ক্যালকাটা সেন্টার । এখানে ভারতীয় অনুষ্ঠান গুলির দায়িত্বে ছিলেন নিপেন্দ্রনাথ মজুমদার। তারপর রেডিওতে যোগ দিলেন বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য যাকে আমরা বাণীকুমার নামে চিনি।তারপর এখানে চাকরি করতে এলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। বেতার জগৎ নামে একটি মুখপত্রের সম্পাদক প্রেমাঙ্কু রাতুর্থী। তিনি যোগ দিলেন এদের সঙ্গে। যাকে বলে একেবারে চাঁদের হাট। আড্ডা হল , গল্প হল এবং তৈরি হল নতুন কিছু ভাবনা চিন্তার। আর একেবারে উঠল বাই তো কটক যাই। না না এখানে কেউ আপনাকে উড়িষ্যার কটক এ নিয়ে যাওয়ার কথা বলছে না, তবে এই চিন্তা করা মাত্রই কাজটা করে ফেলা হয়েছিল।

আইডিয়া তে এসেছিল প্রেমাঙ্কু রাতুর্থীর মাথা থেকে। তিনি বলেন যে সমস্ত সংস্কৃত শ্লোক গুলি লিখে ফেলবে বাণীকুমার। রায়চাঁদ গড়াল গানগুলি সিলেক্ট করবে আর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র সে সংস্কৃত শ্লোক গুলো কে সুন্দর করে পরিবেশন করবেন। এই চিন্তা ভাবনা টা নিয়ে তারা গেলেন নৃপেন বাবুর কাছে এবং নৃপেন বাবু এতে রাজি হলেন।

তবে অনেকেই বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র চন্ডী পাঠ করাকে আপত্তি জানিয়েছিল কারণ বীরেন্দ্রকৃষ্ণ যেহেতু কায়স্থ পরিবারের মানুষ ছিলেন তবে নৃপেন বাবুর চোখ রাঙানিতে সবাই এক বাক্যে চুপ হয়ে গেছিলেন। শেষমেষ এত ঝামেলা কাটিয়ে 1932 খ্রিস্টাব্দে প্রত্যুষ প্রোগ্রাম নামে অনুষ্ঠানটি শুরু হয়। পরের বছর নাম পরিবর্তিত হয়ে রাখা হল প্রভাতী অনুষ্ঠান। 1936 সালে আবার নাম বদল এবার নাম রাখা হল মহিষাসুর বধ।তারপর পরের বছর শেষবারের জন্য এই অনুষ্ঠানের নাম বদল করে রাখা হল মহিষাসুরমর্দিনী। সেই নামটি এখনো চলে আসছে।

মহালয়া অনুষ্ঠানটির মধ্যে বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের পাঠের মাঝখানে গান গেয়েছেন অনেক বিশিষ্ট শিল্পীরা। দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়, মানবেন্দ্র, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, প্রতিমা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ। প্রথম প্রথম অনুষ্ঠানটি প্রতি বছরের নতুন করে করতে হতো। কারণ তখন রেকর্ডিং ব্যবস্থা এত উন্নত ছিল না। তবে শেষ রেকর্ড করা হয়েছিল 1966 সালে, সেই রেকর্ডিংয়ে আমরা এখনও শুনতে পাই। তবে মাঝখানে মহানায়ক উত্তম কুমার একবার এই মহালয়া করেছিলেন। কিন্তু তা একেবারেই সাধারণ মানুষ গ্রহণ করতে পারেননি। সাধারণ মানুষের ইচ্ছায় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র আবার ও ফিরে এসেছেন।
অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে মহালয়া ও বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্র যেন একটা মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ। মহালয়া বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র ছাড়া আর বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র মহালয়া ছাড়া ভাবাই যায় না।

Written by – শ্রেয়া চ্যাটার্জী

Advertisement

Related Articles

Back to top button