নিউজরাজ্য

হাজার লড়াই পেড়িয়ে বিটেক ছাত্রী হয়ে উঠেছে জনপ্রিয় ‘ফুচকাওয়ালা’

Advertisement
Advertisement

বাঙালি ও বাঙালির প্রিয় খাবারের মধ্যে লোভনীয় জিভে জল বের করা খাবার ফুচকা। শালপারতার বাটিতে টক ঝাল আলু মাখা ফুচকা খেতে কে না ভালোবাসে। তবে করোনা মহামারিতে বিগত ২ বছর ধরে ফুচকার স্বাদ উপভোগ করতে পারছেনা বহু ফুচকাপ্রেমি। রাস্তায় দাঁড়িয়ে মাস্ক খুলে ফুচকা খাওয়া এখন অনেকের কাছে বড় বিপদ। এর জন্য বিরত আছেন বহু ফুচকাপ্রেমীরা। 

Advertisement
Advertisement

প্রথমত, করোনা আর লকডাউনে রাস্তার ধারে ফুচকাওয়ালাদের বসা অনিয়মিত হয়ে পড়েছে দ্বিতীয়ত, বসলেও, অনেকেই সুরক্ষাজনিত সতর্কতা অবলম্বন করতে হচ্ছে তবে অনেকেই তা ঠিক করে মানতে পারছেনা। আর তাই ভোজনরসিক বাঙালিদের এই জলভরা ফুচকার স্বাদ সুরক্ষার সহ তুলে ধরতে এগিয়ে এলেন খড়দার এই ভাই-বোনের জুটি। এতদিন, কফি পার্লার থেকে আইসক্রিম পার্লার পিৎজা পার্লারেএ নাম অনেকেই শুনেছেন। কিন্তু এবার খড়দহতে, দুই ভাইবোন দেবজ্যোতি আর জ্যোতির্ময়ীর হাত ধরে উঠে এল একেবারে ফুচকা-পার্লার। নাম ‘ফুচকাওয়ালা’। 

Advertisement

২০২০ সালের মে মাস, করোনা তখন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে দেশ তথা রাজ্য জুড়ে। টিটাগর বিবেকনগরের জ্যোতির্ময়ীর ইচ্ছে ছিল প্রাইভেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে বি টেক করে বড় কোন কোম্পানিতে কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার এর কাজ করার। হঠাৎ করে কেমন যেন কালো মেঘ নেমে এলো এই মেয়েটির পরিবারে। দাদা দিবোজ্যোতি এক বেসরকারি কোম্পানিতে কাজ করত। লকডাউন এর ফলে দাদার মাসিক মাইনে হাফ করে দিল অফিস কতৃপক্ষ। অন্যদিকে ১০ বছর যাবত বন্ধ বাবার একমাত্রমুদি দোকান। সম্বল ছিল দাদার রোজগারের টাকা।

Advertisement
Advertisement

এমন অবস্থায় সংসার কিভাবে চালাবে সেটা কোনভাবেই ভেবে উঠতে পারছিল না ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রী জ্যোতির্ময়ী সাহা। এই দুঃসময়ে মাথায় এসেছিল একমাত্র মুদি দোকান বিক্রি করবে আর এরপরই জ্যোতির্ময়ী সাহার মাথায় এল অন্য ব্যবসার বুদ্ধি। তবে লক্ষ স্থির থাকলেও কজটা খুব একটা সহজ ছিল না জ্যোতির্ময়ীর। বাবা এ কজে কিছুতেই রাজী ছিলেন না। মেয়ে পড়াশোনা ছেড়ে এ কাজ করুক বাড়ির কেউ চায়নি। সবার কথা উপেক্ষা করে মা সুশীলা সাহার অনুপ্রেরণায় দাদা দেবজ্যোতি সাহার সহযোগিতায় ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্রী সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললো এই অসময়ে তাদের বন্ধ থাকা দোকানে ফুচকা বিক্রি করবে, এই মুদির দোকান হয়ে উঠলো ফুচকা পার্লার। দোকানের নামকরণ করল ফুচকাওয়ালা।

খড়দহ স্টেশন রোডের ফুচকাওয়ালা এই দোকানে মুখরোচক ফুচকা টানে ভিড় জমাতে থাকেন এলাকার ছোট থেকে বড় সব বয়সী মানুষেরা।শুধু ঘরের বাসিন্দা নন, দূর-দূরান্ত থেকে নানা প্রান্তের মানুষ আসছে ‘ফুচকাওয়ালা’র কাছে। এখন খড়দার লোকের মুখে মুখে ফিরছে ফুচকাওয়ালার নাম।  যারা যেতে পারবেন ফুড অ্যাপের মাধ্যমে বাড়ি বাড়ি চলে যাবে ফুচকা।

করোনাকালে লকডাউন এর সময় সংসারের করুন পরিস্থিতি ও ইঞ্জিনিয়ারিং এর পড়াশোনা বন্ধের সিদ্ধান্ত হার মানলো দাদা ও বোনের অদম‍্য ইচ্ছা শক্তির কাছে, এই ফুচকা ওয়ালার দোকানে ফুচকা বিক্রি করেই সেই উপার্জিত অর্থে নিজেদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে চান দাদা বোন। কিন্তু লক্ষ্যে পৌঁছানোর পর এই ফুচকা বিক্রির পেশা কখনোই মন থেকে ভুলতে পারবেন না বলে জানান। একই রকম ভাবে চালিয়ে যাবে টিটাগর বিবেক নগরের দাদা ও বোন। একদিন যে বাবা মুখের ওপর না করেছিল সেই বাবাও আজ তাঁর সন্তানের মানুষের প্রতি ভালোবাসা আস্থা দেখে বাবা খুশি। গর্বের সঙ্গে এখন তিনি বলছেন, তাঁর ছেলে-মেয়ের ফুচকার দোকান আছে।

Advertisement

Related Articles

Back to top button