কলকাতানিউজরাজ্য

নিষিদ্ধপল্লীতে বড় হয়ে সমাজকে এক অভিনব বার্তা দিল প্রিয়া মন্ডল

×
Advertisement

কলকাতা: যৌনকর্মী জন্মায় না, যৌনকর্মী বানানো হয়। যে নিষিদ্ধপল্লী দেখলে সমাজের মূল স্রোতে থাকা মানুষরা মুখ ঘুরিয়ে নেয়, সেই নিষিদ্ধপল্লীর মাটি ছাড়া দুর্গাপুজো অসম্ভব। এমনকি সমাজের মূল স্রোতে থাকা মানুষরাই নিষিদ্ধপল্লী তৈরি করেছে। তা না হলে সেখানে যারা যাতায়াত করে, তারা সমাজের মূল স্রোতে থাকা মানুষ হতে পারত না। তবুও নিষিদ্ধপল্লীতে থাকা শিশুরা মূলস্রোতে ফিরতে চায়, যদিও সবাই সেটা পারে না। প্রতিনিয়ত অশ্লীল পরিবেশ, অশ্লীল কথাবার্তার মধ্যে বেড়ে ওঠা শিশুরা বাধ্য হয় সেই পরিবেশই পা বাড়াতে। কিন্তু তার ব্যতিক্রম হল বউবাজার লালবতী এলাকার প্রিয়া মন্ডল। সে আদি মহাকালী পাঠশালার একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। নোংরা, অশ্লীল পরিবেশের মধ্যে থেকেও প্রতিনিয়ত সুস্থ পরিবেশ, সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার তাগিদ রয়েছে প্রিয়ার মধ্যে। আর তাই তার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশন।

Advertisements
Advertisement

গতকাল, বৃহস্পতিবার রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের পক্ষ থেকে প্রিয়ার জীবনের সেরা দিন উপহার দেওয়া হয়। রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী নিজের চেয়ারে বরণ করে প্রিয়াকে বসান। শুধু তাই নয়, প্রিয়া যে সমস্ত দাবি রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের জানাতে চেয়েছে, সেই সমস্ত দাবি চার্টার অফ ডিমান্ড আকারে লিপিবদ্ধ করে রাজ্যের শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজার কাছে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রিয়া সমাজে প্রতিষ্ঠিত হয়ে বউবাজারের লালবাতি এলাকার হারকাটা গলি থেকে বেরিয়ে আসতে চায়। কিন্তু বেরিয়ে এলেও সেই সকল শিশুর মুখ তাকে তাড়া করে বেড়াবে, যারা প্রিয়ার মতই সুস্থভাবে বাঁচার স্বপ্ন দেখে কিন্তু পূরণ করার ক্ষমতা রাখে না। তাই সেই সব শিশুকে জীবনের মূল স্রোতে ফেরা পর্যন্ত প্রিয়ার রাতে ঘুম আসবে না।

Advertisements

প্রিয়া যে সমস্ত দাবি রাজ্য শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনকে জানিয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম হল, শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থা উন্নত করা। যে সকল শিশুরা ওই নোংরা পরিবেশে বড় হয়ে উঠতে উঠতে বাধ্য হচ্ছে, তাদেরকে যথাযথ শিক্ষা দিয়ে জীবনের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনা রাজ্য সরকারের করা উচিত বলে সে দাবী করেছে। এমনকি স্কুলে পড়াশোনা করতে গেলে নিষিদ্ধপল্লী এলাকার শিশু বলা হলেই তাদেরকে আলাদা চোখে দেখা হয়। এই আলাদা বিভাজনটা যেন না করা হয়, সেই দাবিও তুলেছে প্রিয়া। নিষিদ্ধপল্লীতে থাকা এই মেয়েটি দক্ষিণ কলকাতার ‘হামারি মুসকান’ নামক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সহায়তায় পড়াশোনা চালাচ্ছে প্রিয়া, যাতে এরকম আরও অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এই ধরনের শিশুদের কাছে পড়াশোনার হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসে তাহলেই নোংরা পরিবেশে থাকা শিশুরা পড়া শিখে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই চালিয়ে যেতে পারবে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মিড ডে মিল দেয। কিন্তু এই ব্যবস্থা আগামী দিনে একাদশ শ্রেণি পর্যন্ত করা উচিত বলেও দাবি তুলেছে সে।

Advertisements
Advertisement

প্রিয়ার দৃঢ়চেতা মানসিকতা দেখে অভিভূত শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন ‘প্রিয়া ব্যতিক্রম হলেও এরকম হাজারো হাজারো প্রিয়া প্রতিদিন অলক্ষ্যে খারাপ পথে পা বাড়াচ্ছে। এটা আটকানোর জন্য আমরা সবরকম চেষ্টা করবো। প্রিয়ার মতো প্রত্যেককে যাতে সমাজে ভালোভাবে প্রতিষ্ঠিত করা যায়,তার জন্য শিশু সুরক্ষা কমিশন বদ্ধপরিকর। প্রিয়ার মত এমন অনেক শিশুরা জীবনের মূল স্রোতে ফিরে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করুক, এই কামনায় সকলের করা উচিত।

Related Articles

Back to top button